বাংলাদেশ বর্তমানে এক ভয়াবহ ও নজিরবিহীন অরাজকতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দেশটি কার্যত একটি ‘ব্যর্থ রাষ্ট্র’ বা ‘কলাপ্স স্টেট’-এর দিকে দ্রুত ধাবিত হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলার সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া, রাজপথে লাগামহীন সহিংসতা এবং উগ্রবাদী শক্তির নগ্ন আস্ফালনে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ এখন গভীর অন্ধকারের মুখে। এরই মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস এবং সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের মধ্যকার তীব্র স্নায়ুযুদ্ধ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ কার্যত সরকারের হাতছাড়া হয়ে গেছে। ড. ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দেশের পরিস্থিতি সামাল দিতে চরমভাবে ব্যর্থ-এমনটাই মনে করছে বিভিন্ন মহল। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ক্ষমতার শীর্ষ পর্যায়ে ভয়াবহ দ্বন্দ্ব। ড. ইউনুস ও সেনাপ্রধানের সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। ইউনুস প্রশাসন সেনা প্রধানকে সরানোর চেষ্টা করলেও সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ সমর্থন ও কৌশলগত কারণে তা সম্ভব হয়নি। বর্তমান সরকারের অধীনে অরাজকতা নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব হয়ে পড়ছে। এই পারস্পরিক অবিশ্বাস ও দ্বন্দ্ব যে কোনো মুহূর্তে বড় কোনো সামরিক হস্তক্ষেপ বা ভয়াবহ সংঘাতের জন্ম দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পরিস্থিতিকে আরও বিষিয়ে তুলেছে কথিত ছাত্রনেতা ও ভারত-বিদ্বেষী হিসেবে পরিচিত উসমান হাদির মৃত্যু। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটি স্বার্থান্বেষী মহল পরিকল্পিতভাবে ভারত-বিরোধী জিগির তুলছে। মৃত্যুর দায় সম্পূর্ণ ভারতের ওপর চাপিয়ে দিয়ে উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলো রাজপথ দখলের চেষ্টা করছে। গতকাল হাদীর জানাজাকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের গোলযোগ তৈরী করার চেষ্ঠা করেছে।
‘৭১ সালের পর এই প্রথম বাংলাদেশ ভারতের জন্য এতটা বড় নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্রবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, যার নেতৃত্বে রয়েছেন শশী থারুর, বর্তমান পরিস্থিতিকে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য অশনিসংকেত হিসেবে চিহ্নিত করেছে। সীমান্ত নিরাপত্তা, অবৈধ অনুপ্রবেশ এবং জঙ্গিবাদের উত্থান নিয়ে দিল্লি গভীর উদ্বিগ্ন।
এমতাবস্থায়, বাংলাদেশের বেসামরিক প্রশাসনের ওপর আস্থা হারিয়ে ভারত সরাসরি সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেছে। ভারতের সেনাপ্রধান ও বাংলাদেশের সেনাপ্রধানের মধ্যে সরাসরি ও নিয়মিত যোগাযোগ শুরু হয়েছে। অস্থিতিশীল ও নড়বড়ে ইউনুস সরকারের চেয়ে সেনাবাহিনীর সঙ্গে পেশাদার সম্পর্ক বজায় রাখাকেই এই মুহূর্তে নিজেদের স্বার্থ রক্ষার একমাত্র পথ হিসেবে দেখছে নয়াদিল্লি।
বাংলাদেশের পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো তাদের নাগরিকদের জন্য ট্রাভেল অ্যাডভাইজরি জারি করেছে। স্বাধীন সাংবাদিকতা আজ পুরোপুরি বিপন্ন। সত্য তুলে ধরতে গিয়ে সাংবাদিকরা হামলা ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। এমনকি শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিচিহ্ন এবং ভারতীয় কূটনীতিকদের ওপর হামলার ঘটনা প্রমাণ করে যে, দেশে আইনের শাসনের ন্যূনতম অস্তিত্বও আর অবশিষ্ট নেই।
আগামী দিনে বাংলাদেশে আদৌ কোনো নির্বাচন হবে, নাকি দেশটি দীর্ঘমেয়াদী সামরিক শাসনের কবলে পড়বে-তা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ আজ এক গভীর খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে, যার প্রভাব পুরো দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে।



