সম্প্রতি মিয়ানমার সরকার বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রদূতকে, ‘Persona Non Grata’ বা অবাঞ্ছিত ব্যক্তি ঘোষণা করেছে। যা আন্তর্জাতিক কূটনীতির পরিমণ্ডলে চূড়ান্ত অপমানসূচক এবং অমার্জনীয় এক পদক্ষেপ। কূটনৈতিক পরিভাষায় এটি এমন এক অবস্থান, যা প্রকাশ করে যে স্বাগতিক রাষ্ট্র সংশ্লিষ্ট কূটনীতিকের উপস্থিতিকেও আর সহ্য করতে রাজি নয়। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে, এটি কেবল একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়-বরং সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের সার্বভৌম মর্যাদার বিরুদ্ধেই এক পরোক্ষ আঘাত।
বিশ্লেষকদের মতে, সীমান্ত অঞ্চলে চলমান সংঘাত-বিশেষ করে আরাকান আর্মি ও অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীর তৎপরতা এবং রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের ন্যায়সঙ্গত ও মানবিক অবস্থান-মিয়ানমারের শাসকগোষ্ঠীর জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরই প্রতিক্রিয়া হিসেবে তারা কূটনৈতিক শিষ্টাচারের সীমা অতিক্রম করে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে ধারণা করা যায়।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই পদক্ষেপকে ‘অনভিপ্রেত’ ও ‘দুঃখজনক’ বলে মন্তব্য করলেও, এটি নিছক দুঃখজনক নয়-বরং এটি একটি আঞ্চলিক ক্ষমতার স্বার্থপর, অগভীর ও স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাবের নগ্ন বহিঃপ্রকাশ। একজন রাষ্ট্রদূতের অবমাননা মানে বাংলাদেশের জনগণ, সরকার ও সার্বভৌমত্বের প্রতি সরাসরি অসম্মান প্রদর্শন-যা কোনওভাবেই সহনীয় হতে পারে না।
এই কূটনৈতিক বিপর্যয় শুধু দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্কে চির ধরাবে না, বরং সীমান্ত নিরাপত্তা, মানবিক সংকট, শরণার্থী ব্যবস্থাপনা ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা-সব কিছুই গভীরভাবে প্রভাবিত হবে। মিয়ানমারের এমন উগ্র আচরণ আঞ্চলিক কূটনৈতিক কাঠামো এবং সহযোগিতার স্বাভাবিক গতিপথে এক গুরুতর প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।
বাংলাদেশ, যে রাষ্ট্র মানবতা, শান্তি ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার আদর্শে বিশ্বাস করে, আজ সেই রাষ্ট্রকেই অমর্যাদার মুখোমুখি করা হয়েছে। এটি একমাত্র রাষ্ট্রদূতের অপমান নয়-এটি গোটা জাতির সম্মানহানির অপচেষ্টা।