কক্সবাজার প্রতিনিধি: ১ নভেম্বর থেকে সেন্টমার্টিন পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে। যাত্রার প্রথম মাস কোনো পর্যটক দ্বীপে রাত্রি যাপনের সুযোগ পাবেন না। দিনে গিয়ে দিনেই ফিরে আসতে হবে। গত বছরের মতো এবারও শুধু কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়ার বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকেই পর্যটক নিয়ে জাহাজ সেন্টমার্টিন যাবে। নিষিদ্ধ থাকায় উখিয়ার ইনানী থেকে জাহাজ ছাড়বে না। এতে সাগরে কয়েক ঘণ্টা বেশি সময় ব্যয় করতে হবে পর্যটকদের।
সেন্টমার্টিন যাতায়াত নিয়ে বিআইডব্লিউটিএ এবং নৌপরিবহন অধিদপ্তরকে নীতিগত সম্মতি দিয়ে গত সোমবার একটি চিঠি দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এর আগে, দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের রক্ষায় গত ২২ অক্টোবর সেন্টমার্টিন ভ্রমণে ১২টি নির্দেশনা উল্লেখ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়।
চিঠির বিষয় নিশ্চিত করে পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের পরিচালক মোহাম্মদ জমির উদ্দিন বলেন, মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আগের নিয়মেই কক্সবাজারের বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে জাহাজে করে সেন্টমার্টিনে যেতে পারবেন। বিষয়টি অংশীজনদের জানানো হয়েছে।
সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (স্কোয়াব) সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর জানান, কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন পৌঁছাতে ৬ ঘণ্টা সময় লাগে। আবার প্রথম এক মাস দ্বীপে রাত্রি যাপনের সুযোগ নেই। ফিরতে লাগবে ৬ ঘণ্টা। কাজেই সেন্টমার্টিন দেখার খুব কম সময় পাবেন পর্যটকরা।
মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত প্রজ্ঞাপন মতে, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে পর্যটকদের অনলাইনে টিকিট কিনতে হবে। যেখানে প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাশ এবং কিউআর কোড সংযুক্ত থাকবে। কিউআর কোড ছাড়া টিকিট নকল হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। অনুমোদন ছাড়া সেন্টমার্টিন দ্বীপে কোনো নৌযান চলাচল এবং প্রতিদিন গড়ে ২ হাজারের বেশি পর্যটক দ্বীপে ভ্রমণ করতে পারবেন না বলেও উল্লেখ করা হয় প্রজ্ঞাপনে। প্রজ্ঞাপনে আরো বলা হয়, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে রাত্রি যাপনের অনুমতি থাকবে। ফেব্রুয়ারি মাসে দ্বীপে পর্যটক যাতায়াত সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকবে।
সেন্টমাটির্েনর প্রাকৃতিক পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখতে দ্বীপে রাতে আলো জ্বালানো, শব্দ সৃষ্টি ও বারবিকিউ পার্টি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কেয়াবনে প্রবেশ, কেওড়া ফল সংগ্রহ বা কেনাবেচা, সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজকাঁকড়া, শামুক-ঝিনুক ও অন্যান্য জীববৈচিত্র্য ক্ষতি করা যাবে না। এছাড়া সৈকতে মোটরসাইকেল ও সি-বাইকসহ যে কোনো মোটরচালিত যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
পর্যটকদের নিজস্ব পানির ফ্লাস্ক সঙ্গে রাখার পরামর্শ দিয়ে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সেন্টমার্টিনে নিষিদ্ধ পলিথিন বহন করা যাবে না এবং একবার ব্যবহার উপযোগী প্লাস্টিক-চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিকের চামচ, স্ট্র, সাবান ও শ্যাম্পুর মিনি প্যাক, ৫০০ মিলিলিটার ও এক লিটারের প্লাস্টিক বোতল ইত্যাদি বহনে নিরুত্সাহিত করা হয়েছে প্রজ্ঞাপনে।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের অপসারিত চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানান, ‘গত বছর থেকে পর্যটক যাতায়াতে বাধ্যবাধকতা থাকায় দ্বীপবাসী আর্থিক সংকটে পড়েছেন। পর্যটকদের রাত্রি যাপনের সুযোগ না থাকায় আবাসন প্রতিষ্ঠানের মালিকদের মনে প্রশান্তি নেই। যে পরিমাণ পর্যটক যাবেন তা গড় হিসাবে সব প্রতিষ্ঠান সেবার সুযোগ পাবেন না। এতে, ধীরে ধীরে পর্যটন সেবার উপলক্ষ্যগুলো বিক্রি কিংবা অপসারণ করার উদ্যোগ চলছে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।




