সুকান্ত বিকাশ ধর, সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম): সাতকানিয়ায় বিএস রেকর্ড সংশোধনীর চলমান মামলায় সশরীরে হাজির ও আদালতের জারিকৃত কারণ দর্শানো নোটিশের কোন জবাব না দিয়ে গরীব ও অসহায় কৃষকের বসত-ভিটে পুনরায় প্রশাসনিক ক্ষমতাবলে উচ্ছেদ অভিযান চালানোর সময় আদালত অভিযান নয়, স্থিতিতাবস্থার আদেশে উচ্ছেদে ব্যর্থ হয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন সাতকানিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আরাফাত সিদ্দিকী। উপজেলার পুরানগড় ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড মনেয়াবাদ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
বুধবার (২৩ আগস্ট) সাতকানিয়া সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের বিচারক মো. শরিফুল হক এ আদেশ দেন বলে বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহাদাত হোসেন হিরু বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
আদালতে দায়েরকৃত মামলার আবেদন থেকে জানা যায়, উপজেলার পুরানগড় ইউনিয়নের ৯নম্বর ওয়ার্ড মনেয়াবাদ এলাকার টুনু মিয়াকে ১৯৮৯ সালের শুরুর দিকে তার শালিকা আলমাস খাতুন ৯ শতক বাড়ি-ভিটের জমি দানপত্র (নং-৪৪৩) করে দেন। এর মধ্যে টুনু মিয়া মারা গেলে তাঁর ওয়ারিশরা পৈতৃক ভিটেতে বসবাস করে আসছিল। তবে টুনু মিয়া গংদের পৈতৃক ভিটের আরএস খতিয়ার প্রচার থাকলেও তারা অসচেতন হওয়ায় ভুলবশত জায়গাটি সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়ে যায়।
বিষয়টি টুনু মিয়ার সন্তান শাহ আলম জানতে পেরে সরকারি ১নম্বর খাস খতিয়ান কর্তন পূর্বক তাদের নামে পৃথক খতিয়ান সৃজনের চেষ্টা শুরু করেন। আর্থিক দৈন্যতার কারণে আলাদা খতিয়ান সৃজন তাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে সাতকানিয়ায় লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে মামলার কার্যক্রম শুরু করেন। যা সাতকানিয়া সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে রেকর্ড সংশোধনী মামলা (অপর মামলা-২৪০/২২ই) হিসেবে নথিভুক্ত হয়।
লিগ্যাল এইড পরিচালিত এ রেকর্ড সংশোধনী মামলার বাদী হলেন মৃত টুনু মিয়ার ছেলে মো. শাহআলম। মামলায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), এসিল্যান্ড সাতকানিয়া এবং ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তাকে বিবাদী করা হয়। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে সাতকানিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) ও বাজালিয়া ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তাকে এই মামলার জবাব দেয়ার জন্য ২০২২ সালের ১২ সেপ্টেম্বর নোটিশ প্রদান করেন। নোটিশ গ্রহণ করার পর প্রায় ১ বছর পেরিয়ে গেলেও কোন জবাব দাখিল করেনি এসি ল্যান্ড ও ভূমি সহকারি কর্মকর্তা । যার কারনে ওই মামলা একতরফা সূত্রে চলে আসছিল ।
বিষয়টি বুঝতে পেরে গত মঙ্গলবার (২২আগষ্ট) হঠাৎ করে উক্ত জায়গার স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য এসিল্যান্ড আরাফাত সিদ্দিকী নির্দেশনা দিয়ে আসেন। পরের দিন বুধবার (২৩ আগষ্ট) উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করতে আসেন। মামলার বাদী শাহ আলম বলেন, আমি এসিল্যান্ড স্যারকে ভুল বিএসের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের বিষয়টি অবগত করেছি।
তিনি আমাকে বলেন, অর্ডার ছাড়া শুধুমাত্র মামলা করলেই অভিযান বন্ধ হবে না এবং আগামীকাল (বুধবার) দুপুরের মধ্যেই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার কথা জানিয়ে দেন। এদিকে, ২৩ আগস্ট (বুধবার) আদালতের শরণাপন্ন হয়ে মো. শাহ আলম এসিল্যান্ডের অভিযানের উপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশের প্রার্থনা করলে আদালত শুনানী শেষে তা মঞ্জুর করেন এবং এসিল্যান্ডের চলমান উচ্ছেদ অভিযানে আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ কপি প্রদর্শন করা হলে এসিল্যান্ড আরাফাত সিদ্দিকী অভিযান কার্যক্রমে ইস্তফা দেন।
বাদী মো. শাহ আলমের আইনজীবী এডভোকেট শাহাদাত হোসাইন হিরু বলেন, বিজ্ঞ আদালত রেকর্ড সংশোধনী মামলার বিষয়ে এসিল্যান্ড অফিস থেকে জবাব চাওয়ার পরও জবাব না দেওয়া ও নিষেধাজ্ঞার আদেশ প্রচারের পরও অভিযান পরিচালনা করা আদালত অবমাননার শামিল ও দণ্ডনীয় অপরাধ ।
আইনজীবী হিরু আরও বলেন, ওই অভিযান চলাকালে বিজ্ঞ আদালত এসিল্যান্ডসহ মোট ৪ জনকে নিষেধাজ্ঞা প্রদান পূর্বক অভিযান থেকে বিরত থাকার আদেশ প্রদান করেন। এসিল্যান্ড উচ্ছেদের নামে অসহায় পরিবারকে সামান্য মাথা গুজারঠাই থেকে বিতাড়িত করতে চাওয়ার বিষয়টি আদালত বুঝতে পেরে শুনানী শেষে ওই জায়গায় স্থিতিতাবস্থার আদেশ জারী করেন।
সাতকানিয়া উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. আরাফাত সিদ্দিকী বলেন, উপজেলার পুরানগড় ইউনিয়নে আমরা সরকারি খাস জমি উদ্ধারে গিয়ে ৭ শতাংশের মত জায়গা উদ্ধার করতে পেরেছি। আদালতের আদেশ পাওয়ার পর উচ্ছেদ কার্যক্রম স্থগিত করে চলে এসেছি।




