দি ক্রাইম ডেস্ক: দুর্গম জনপদের নগরী পার্বত্য জেলা রাঙামাটি ধীরে ধীরে উন্নয়নের সোপানে পৌছে গেলেও এ জেলার বেশ কিছু অঞ্চল এখনো অন্ধকার নগরীতে পড়ে আছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, নাগরিক সেবাসহ নানা ধরণের সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত রয়েছে এসব অঞ্চলে বসবাসরত বাসিন্দারা। বলছি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলার দুর্গম ফারুয়া ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম ‘যমুনাছড়ি বম পাড়া’ এলাকার কথা।

রাইংখ্যৎ নদীর পার ঘেঁষে উঠা পুরনো এ গ্রামটিতে শতাধিক পরিবারের বসবাস। এরমধ্যে বম সম্প্রদায়ের লোকজন বেশি। তবে পাংখোয়া সম্প্রদায়ের লোকজনও বসতি গড়েছে এখানে। বম জনগোষ্ঠির লোকসংখ্যা বেশি হওয়ায় বম পাড়া হিসেবে সবার কাছে পরিচিত এ এলাকা। এ গ্রামের সবাই খ্রিষ্টান ধর্মালম্বী।

ফারুয়া ইউনিয়ন থেকে যমুনাছড়ি বম পাড়ার দূরত্ব প্রায় ১৪ কিলোমিটার। উপজেলা সদর থেকে দূরুত্ব ৭৪ কিলোমিটার। ইউনিয়ন এবং উপজেলার সদরের সাথে যোগাযোগের জন্য এ পাড়ায় নেই কোন যোগাযোগ সড়ক। শুকনো মৌসুমে পায়ে হেঁটেই ফারুয়া বাজারে যেতে হয় এ এলাকায় বসবাসকারী নাগরিকদের। বর্ষায় যোগাযোগে ভরসা একমাত্র বাহন নৌকা।

কৃষিপণ্য বাজারজাত করা থেকে শুরু করে অসুস্থ রোগীকে হাসপাতালে নেওয়ার ক্ষেত্রে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় স্থানীয়দের। ফারুয়া ইউনিয়নে বিদ্যুৎ, মোবাইল নেটওয়ার্ক সুবিধা নেই। যে কারণে গ্রামটির বাসিন্দারা আধুনিক সকল সুবিধা থেকে বঞ্চিত।

পাড়ার স্থানীয় ছেলে-মেয়েদের লেখা-পড়ার জন্য ১৯৮৪ সালে যমুনাছড়ি বম পাড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিলো। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিদ্যালয়টি স্থানীয়দের সহযোগিতায় একাধিকবার সংস্কার করা হয়। তবে বিদ্যালয়টি এখনো জাতীয়করণ করা হয়নি। শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের টাকায় দুইজন শিক্ষক দিয়ে কোনরকমে পঞ্চাশের অধিক শিক্ষার্থীর পাঠদান কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে।

দুর্গম ওই পাড়ায় স্বাস্থ্যসেবার জন্য তৎকালীন সরকার একটি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করেছিলো। তবে ক্লিনিকটিতে জনবল ও প্রযুক্তি সংকট থাকায় স্থানীয় রোগী ও গর্ভবর্তী নারীদের উন্নত চিকিৎসা নিতে উপজেলা সদর হাসপাতালে পাড়ি দিতে হয়। অনেক সময় উপজেলা সদর হাসপাতালে পাড়ি দেয়ার আগে রোগীরা বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু বরণ করে।

ওই পাড়ার বাসিন্দাদের খাবার পানির সংকট দূর করতে তৎকালীন সময়ে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিভি) অর্থায়নে একটি গ্রাভিটি ফ্লো সিস্টেম (জিএফএস) স্থাপন করা হলেও বর্তমানে ফিল্টার নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বাসিন্দাদের অপরিশোধিত পানি পান করতে হচ্ছে। শুকনো মৌসুমে পানি সরবরাহও কমে যায়। যে কারণে নিরাপদ পানির জন্য ডিপ টিউবওয়েল স্থাপনের দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা।

স্থানীয়রা বলছেন, আমাদের এলাকায় বিদ্যুৎ, নেটওয়ার্ক নেই, যোগাযোগে সড়ক নেই। রয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। সড়ক, বিদ্যুৎ, নিরাপদ পানি, স্বাস্থ্য ও নেটওয়ার্কসহ সর্বক্ষেত্রেই সরকারি সহযোগিতা পেলে এই এলাকার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন ঘটটে।

যমুনাছড়ি ব্যাপিস্ট চার্চের যাজক রবার্ট বম বলেন, আমাদের একমাত্র আয়ের উৎস কৃষি। কিন্তু আগের মতো ফলন হয় না। সড়ক না থাকায় উৎপাদিত পণ্য বাজারে নিতে ভয়াবহ ভোগান্তি পোহাতে হয়।

হেডম্যান রিনলম (পালম) বম বলেন, ১৯৮০ সালে গ্রামটি গড়ে ওঠার পর থেকে গত ৪৫বছর ধরে বড় কোনো সরকারি উন্নয়ন হয়নি। মাত্র দেড় কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করলেই যমুনাছড়ি মূল সড়কের সঙ্গে যুক্ত হতে পারত।

তিনি আরও বলেন, খাবার পানির জন্য একমাত্র জিএফএস ও এখন অনুপযোগী। পানি সংকট দূরীকরণে ডিপ টিউবওয়েল স্থাপন জরুরি বলে যোগ করেন হেডম্যান।

ফারুয়া ইউনিয়নের ৯নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মালসম পাংখোয়া বলেন, আমাদের একমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয়টি এখনো জাতীয়করণ হয়নি এটা আমাদের জন্য দুঃখের সংবাদ। সরকারের সহযোগিতা ছাড়া শিক্ষার সমস্যা দূর করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ফারুয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বিদ্যালাল তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, তারাছড়ি থেকে তাংখুইতাং যাওয়ার রাস্তটির মাঝখানে যমুনাছড়ি বম পাড়ার সংযোগে প্রায় আড়াই কিলোমিটার কাঁচা পাহাড়ি সড়ক রয়েছে। এটি এইচবিবি বা আরসিসি দিয়ে নির্মাণ করা গেলে সরাসরি গাড়ি চলাচল সম্ভব হবে। পাশাপাশি ৪০-৫০ মিটার দীর্ঘ একটি সেতু নির্মাণ করলেই গ্রামবাসীর যাতায়াত ও পণ্য পরিবহন সহজ হবে।

চেয়ারম্যান আরও বলেন, মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি, টিসিবি কার্ড সক্রিয়করণসহ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধা থেকে মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে।

বিলাইছড়ি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (অ:দা:) মিলন চাকমা বলেন, প্রকল্পের জন্য প্রস্তাবনা জমা দিলে অফিস থেকে প্রয়োজনীয়তা সহযোগিতা দেওয়া হবে।

দি ক্রাইম ডেস্ক: দুর্গম জনপদের নগরী পার্বত্য জেলা রাঙামাটি ধীরে ধীরে উন্নয়নের সোপানে পৌছে গেলেও এ জেলার বেশ কিছু অঞ্চল এখনো অন্ধকার নগরীতে পড়ে আছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, নাগরিক সেবাসহ নানা ধরণের সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত রয়েছে এসব অঞ্চলে বসবাসরত বাসিন্দারা। বলছি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলার দুর্গম ফারুয়া ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম ‘যমুনাছড়ি বম পাড়া’ এলাকার কথা।

রাইংখ্যৎ নদীর পার ঘেঁষে উঠা পুরনো এ গ্রামটিতে শতাধিক পরিবারের বসবাস। এরমধ্যে বম সম্প্রদায়ের লোকজন বেশি। তবে পাংখোয়া সম্প্রদায়ের লোকজনও বসতি গড়েছে এখানে। বম জনগোষ্ঠির লোকসংখ্যা বেশি হওয়ায় বম পাড়া হিসেবে সবার কাছে পরিচিত এ এলাকা। এ গ্রামের সবাই খ্রিষ্টান ধর্মালম্বী।

ফারুয়া ইউনিয়ন থেকে যমুনাছড়ি বম পাড়ার দূরত্ব প্রায় ১৪ কিলোমিটার। উপজেলা সদর থেকে দূরুত্ব ৭৪ কিলোমিটার। ইউনিয়ন এবং উপজেলার সদরের সাথে যোগাযোগের জন্য এ পাড়ায় নেই কোন যোগাযোগ সড়ক। শুকনো মৌসুমে পায়ে হেঁটেই ফারুয়া বাজারে যেতে হয় এ এলাকায় বসবাসকারী নাগরিকদের। বর্ষায় যোগাযোগে ভরসা একমাত্র বাহন নৌকা।

কৃষিপণ্য বাজারজাত করা থেকে শুরু করে অসুস্থ রোগীকে হাসপাতালে নেওয়ার ক্ষেত্রে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় স্থানীয়দের। ফারুয়া ইউনিয়নে বিদ্যুৎ, মোবাইল নেটওয়ার্ক সুবিধা নেই। যে কারণে গ্রামটির বাসিন্দারা আধুনিক সকল সুবিধা থেকে বঞ্চিত।

পাড়ার স্থানীয় ছেলে-মেয়েদের লেখা-পড়ার জন্য ১৯৮৪ সালে যমুনাছড়ি বম পাড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিলো। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিদ্যালয়টি স্থানীয়দের সহযোগিতায় একাধিকবার সংস্কার করা হয়। তবে বিদ্যালয়টি এখনো জাতীয়করণ করা হয়নি। শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের টাকায় দুইজন শিক্ষক দিয়ে কোনরকমে পঞ্চাশের অধিক শিক্ষার্থীর পাঠদান কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে।

দুর্গম ওই পাড়ায় স্বাস্থ্যসেবার জন্য তৎকালীন সরকার একটি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করেছিলো। তবে ক্লিনিকটিতে জনবল ও প্রযুক্তি সংকট থাকায় স্থানীয় রোগী ও গর্ভবর্তী নারীদের উন্নত চিকিৎসা নিতে উপজেলা সদর হাসপাতালে পাড়ি দিতে হয়। অনেক সময় উপজেলা সদর হাসপাতালে পাড়ি দেয়ার আগে রোগীরা বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু বরণ করে।

ওই পাড়ার বাসিন্দাদের খাবার পানির সংকট দূর করতে তৎকালীন সময়ে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিভি) অর্থায়নে একটি গ্রাভিটি ফ্লো সিস্টেম (জিএফএস) স্থাপন করা হলেও বর্তমানে ফিল্টার নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বাসিন্দাদের অপরিশোধিত পানি পান করতে হচ্ছে। শুকনো মৌসুমে পানি সরবরাহও কমে যায়। যে কারণে নিরাপদ পানির জন্য ডিপ টিউবওয়েল স্থাপনের দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা।

স্থানীয়রা বলছেন, আমাদের এলাকায় বিদ্যুৎ, নেটওয়ার্ক নেই, যোগাযোগে সড়ক নেই। রয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। সড়ক, বিদ্যুৎ, নিরাপদ পানি, স্বাস্থ্য ও নেটওয়ার্কসহ সর্বক্ষেত্রেই সরকারি সহযোগিতা পেলে এই এলাকার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন ঘটটে।

যমুনাছড়ি ব্যাপিস্ট চার্চের যাজক রবার্ট বম বলেন, আমাদের একমাত্র আয়ের উৎস কৃষি। কিন্তু আগের মতো ফলন হয় না। সড়ক না থাকায় উৎপাদিত পণ্য বাজারে নিতে ভয়াবহ ভোগান্তি পোহাতে হয়।

হেডম্যান রিনলম (পালম) বম বলেন, ১৯৮০ সালে গ্রামটি গড়ে ওঠার পর থেকে গত ৪৫বছর ধরে বড় কোনো সরকারি উন্নয়ন হয়নি। মাত্র দেড় কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করলেই যমুনাছড়ি মূল সড়কের সঙ্গে যুক্ত হতে পারত।

তিনি আরও বলেন, খাবার পানির জন্য একমাত্র জিএফএস ও এখন অনুপযোগী। পানি সংকট দূরীকরণে ডিপ টিউবওয়েল স্থাপন জরুরি বলে যোগ করেন হেডম্যান।

ফারুয়া ইউনিয়নের ৯নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মালসম পাংখোয়া বলেন, আমাদের একমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয়টি এখনো জাতীয়করণ হয়নি এটা আমাদের জন্য দুঃখের সংবাদ। সরকারের সহযোগিতা ছাড়া শিক্ষার সমস্যা দূর করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ফারুয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বিদ্যালাল তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, তারাছড়ি থেকে তাংখুইতাং যাওয়ার রাস্তটির মাঝখানে যমুনাছড়ি বম পাড়ার সংযোগে প্রায় আড়াই কিলোমিটার কাঁচা পাহাড়ি সড়ক রয়েছে। এটি এইচবিবি বা আরসিসি দিয়ে নির্মাণ করা গেলে সরাসরি গাড়ি চলাচল সম্ভব হবে। পাশাপাশি ৪০-৫০ মিটার দীর্ঘ একটি সেতু নির্মাণ করলেই গ্রামবাসীর যাতায়াত ও পণ্য পরিবহন সহজ হবে।

চেয়ারম্যান আরও বলেন, মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি, টিসিবি কার্ড সক্রিয়করণসহ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধা থেকে মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে।

বিলাইছড়ি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (অ:দা:) মিলন চাকমা বলেন, প্রকল্পের জন্য প্রস্তাবনা জমা দিলে অফিস থেকে প্রয়োজনীয়তা সহযোগিতা দেওয়া হবে।