দি ক্রাইম ডেস্ক: রাঙামাটির প্রাণভোমরা কৃত্রিম নীলাভ জলরাশি কাপ্তাই হ্রদে দীর্ঘদিন ধরে অবাধে বালু উত্তোলন চালাচ্ছে একদল ব্যবসায়ী ও চক্র। পাহাড়ি জনপদের যোগাযোগ, কৃষি, মৎস্য, বিদ্যুৎ ও অর্থনীতির উপর এই হ্রদের গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু অবাধ বালু উত্তোলনের কারণে হ্রদের তলদেশের ভারসাম্য নষ্ট ও জীবনজন্তুর আবাস ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রবলভাবে বেড়েছে।
স্থানীয় ও গভীর অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাঙামাটি সদর, কাউখালী, নানিয়ারচর, লংগদু ও কাপ্তাই উপজেলায় অভিহিত চক্রগুলো বিভিন্ন স্থানে অনুমতি ছাড়াই ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করছে। উত্তোলিত বালু জেলা শহরসহ আশপাশে চড়া দামে বিক্রি করা হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মগবান ইউনিয়নের দুর্গম মানিকছড়ি মুখ, বিলাইছড়ি পাড়া এলাকার নিকট হ্রদে ড্রেজার বসিয়ে কাজ চলছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, বালু উত্তোলনকারী চক্রগুলো স্থানীয় সশস্ত্র গ্রুপের সঙ্গে আঁতাত করে নির্দিষ্ট চাঁদা দিয়ে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে; ফলে অনেকে ভয়ে বাধা দিতে পারছেন না। যদিও স্থানীয় প্রশাসন বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালিয়ে কিছু রেড জারি করেছে, প্রশাসনিক তৎপরতা স্থায়ী না হওয়ায় চক্রগুলো স্থান পরিবর্তন করে পুনরায় বালু উত্তোলন শুরু করছে।
জেলা প্রশাসন গত ৩০ জুলাই কাপ্তাই হ্রদের মগবান ইউনিয়নের রইন্যাছড়ি এলাকায় এক ব্যক্তিকে (ফাহিম উদ্দিন) বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০ অনুযায়ী ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছিলেন। কিন্তু এ ধরণের জরিমানা ও সাময়িক অভিযানই চক্রের অপকার ঠেকাতে যথেষ্ট হয়নি বলেই মনে করছে স্থানীয়রা।
পরিবেশবিদরা বলেন, হ্রদ থেকে অবাধ বালু উত্তোলনের ফলে তলদেশ আলগা হচ্ছে, তীরভূমি ভেঙে গেছে, মৎস্য ও জলজ প্রাণীর প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস হচ্ছে এবং সামগ্রিকভাবে হ্রদের ইকোসিস্টেমের ভারসাম্য বিঘ্নিত হচ্ছে, এই ধারা চললে কাপ্তাই হ্রদ একদিন সংকুচিত অথবা বিলীন হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে আছে।
রাঙামাটির পরিবেশবাদী সংগঠন ‘গ্লোবাল ভিলেজ’ এর সেক্রেটারি হেফাজত-উল বারী সবুজ বলেন, দেড় দশক ধরে অবাধ বালু উত্তোলন কাপ্তাই হ্রদের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হচ্ছে। দ্রুত অবৈধ উত্তোলন বন্ধ না করলে হ্রদের পার ভেঙে পাহাড় ধসে পরিণতি ভয়াবহ হবে এটি শুধু হ্রদের নয়, পাশাপাশির মানুষের নিরাপত্তারও প্রশ্ন।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ বলেন, পাহাড় কাটা, কাপ্তাই হ্রদ থেকে অবৈধ বালু উত্তোলনসহ পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর যে কোনো কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করি। এসব কর্মকাণ্ডে জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যেখানে এমন কর্মকাণ্ড দেখা যাবে, সেখানে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
তবে সচেতন মহল মনে করেন শুধুমাত্র অভিযান চালানোই যথেষ্ট নয়। স্থায়ীভাবে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করতে হলে ড্রেজার, নৌকা ও অন্যান্য উপকরণ জব্দ করা, ব্যাবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং স্থানীয় সশস্ত্র গ্রুপের সঙ্গে আঁতাত ভাঙার জন্য উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। এছাড়া পরিবেশ সংরক্ষণ এবং বিকল্প জীবিকা নিশ্চিত করার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি।




