অনুসন্ধানী প্রতিবেদন—-
নিজস্ব প্রতিবেদক : কাফকো, টিএসপি, ড্যাব ও ঘোড়াশাল থেকে উৎপাদিত এবং আমদানিকৃত সার দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পৌঁছে দিচ্ছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশনের (বিআরটিসি) নিজস্ব ট্রাক। সরকারি মালামাল বহনের মাধ্যমে কৃষি ও সেবা খাতে অবদান রাখার পাশাপাশি রাজস্ব আয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এই সংস্থাটি।
কাফকো, টিএসপি, ড্যাব ও নরসিংদীর ঘোড়াশাল থেকে সার নিয়ে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার বাফার গুদামে পৌঁছে দেওয়ার পর ওই অঞ্চল থেকে চাল, ভুট্টা, আলুসহ কৃষিপণ্য বহন করে ঢাকা, ফেনী, চট্টগ্রামসহ আশপাশের জেলায় সরবরাহ করছে চট্টগ্রাম ডিপোর ট্রাকগুলো।
অভিযোগ উঠেছে, বর্তমান ডিপো ম্যানেজার মো. কামরুজ্জামান দায়িত্ব নেওয়ার পর উত্তরবঙ্গ থেকে আসা পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে লোডবিহীন (খালি) দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আত্মসাত করছেন। ডিপোর অসংখ্য চালকের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানা যায়।
টাঙ্গাইলের করটিয়া, এস & এস ফিলিংস স্টেশনের পাসেই অবস্থা করেন,( দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধি ) মোঃ জসিম, প্রতি দিন ১০–১৫টি লোড গাড়িকে খালি দেখান। একইভাবে মেঘনা-দাউদকান্দির (মা ফিলিংস স্টেশনের পাসেই অবস্থা করেন) প্রতিনিধি মো. শফিকুল ইসলাম। প্রতিদিন দক্ষিণবঙ্গ থেকে আসা ৮–১০টি লোড গাড়ি খালি দেখান।
চালকদের কাছ থেকে সংগৃহীত এই অর্থ অর্ধেক কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়া হয় ম্যানেজার মোঃ কামরুজ্জামানের কাছে এবং বাকি অর্ধেক ভাগ করে নেন প্রতিনিধি, মোঃ জসিম, মোঃ শফিকুল ইসলাম, ও ইয়ার্ড মাষ্টার মো. আনোয়ার।
ইয়ার্ড মাষ্টার মোঃ আনোয়ার ও তার আপন ভাই মোঃ ইলিয়াস দুই ভাই মিলে নিজস্ব ভাবে প্রতি দিন ২০ থেকে ৩০টি লোড গাড়ি আনায় সেই টাকা দুই ভাই ভাগ করে নেয়।
চালকদের দাবি, এভাবে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা রাজস্ব আত্মসাৎ করা হচ্ছে, যা মাসে কোটি টাকার বেশি এবং বছরে কয়েক শত কোটি টাকায় দাঁড়ায়। তারা আরও অভিযোগ করেন, এই অনিয়ম ঢাকতে ম্যানেজার তার পছন্দের লোকদের বিভিন্ন ডিপো থেকে বদলি করে এনে শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। এতে তার শালক , ভগ্নিপতি ও আত্মীয়স্বজনকেও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবাদে নামলে চালকদের ওপর হামলা ও মারধরের অভিযোগও উঠেছে। অনেক চালক জানিয়েছেন, ডিউটির জন্য ঘুষ (মাসোয়ারা) না দিলে তাদের কাজ থেকে বিরত রাখা হয়। প্রমাণ সহ অসংখ্য চালকদের কাছ থেকে আরো জানা গেছে, প্রতিটি লোড পয়েন্টে গাড়ি লোড হলে প্রতি গাড়ি থেকে ( ১০০০ থেকে ১৫০০, ২০০০ও ৩০০০) টাকা নেন কাফকো প্রতিনিধি মোঃ রেদোয়ান, ড্যাপ ও টি এস পি, প্রতিনিধি মোঃ ইলিয়াস,ঘোড়াশাল প্রতিনিধি মোঃ নাজমুল ইসলাম।
এ সকল বিষয়ের সত্যতা যাচাইয়ে জন্য মুঠোফোনে ম্যানেজার কামরুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, যাদেরকে বদলী করে আনা হয়েছে তারা রাজস্ব বৃদ্ধিতে ভালো ভুমিকা রাখছে। তাছাড়া অনেকে সুবিধা চায়, সবাইকে তো সুবিধা দেওয়া সম্ভব হয় না। এদের কেউ কেউ আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচারে নেমেছে।
প্রতি লোড পয়েন্টের প্রতিনিধিরা প্রতি গাড়ি লোড করার জন্য, (১০০০ থেকে ২৫০০/৩০০০) টাকা নেয় ও গাড়িকে খালি দেখিয়ে রাজস্ব আত্মসাতের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রসঙ্গ এড়িয়ে প্রতিবেদককে চট্রগ্রাম বেড়ানোর আমন্ত্রণ জানান।
তবে অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বিআরটিসির অতিরিক্ত সচিব ও চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ মোল্লা।