অনুসন্ধানী প্রতিবেদন——–

কামাল উদ্দীন,বিশেষ প্রতিবেদক: হাটহাজারীতে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে রাউজানের ব্যবসায়ী ও বিএনপি কর্মী মুহাম্মদ আবদুল হাকিম (৫২)-কে। মঙ্গলবার(০৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায়  মদুনাঘাট বাজারের পানি শোধনাগার মূল ফটকের সামনে এ নৃশংশ হত্যাকাণ্ডটি ঘটে। একদল মোটরসাইকেল আরোহী অস্ত্রধারী দুর্বৃত্ত তাঁর গাড়িতে এলোপাতাড়ি গুলি চালালে ঘটনাস্থলেই গুলিবিদ্ধ হন হাকিম ও তাঁর গাড়ী চালক।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, বিকেল পাঁচটার দিকে আবদুল হাকিম তাঁর নিজ গ্রামের খামারবাড়ি থেকে চট্টগ্রাম শহরে আসছিলেন তাঁর ব্যক্তিগত প্রাইভেট কারে। গাড়ির চালকের পাশে বসা ছিলেন তিনি। যখন গাড়িটি মদুনাঘাটের পানি শোধনাগার এলাকায় পৌঁছায়, তখন পেছন থেকে তিনটি মোটরসাইকেলে ছয় থেকে সাতজন অস্ত্রধারী এসে গাড়িটিকে লক্ষ্য করে একাধিক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। গুলিতে গাড়ির সামনের অংশ ক্ষতবিক্ষত হয় এবং কাঁচ ভেঙে যায়। চালক ও হাকিম উভয়েই গুলিবিদ্ধ হন। স্থানীয়রা তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আবদুল হাকিমকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত অন্য ব্যক্তির অবস্থা আশঙ্কাজনক।

সার্কেল পুলিশ সুপার তারেক আজিজ এ প্রতিবেদককে বলেন,“প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পেরেছি, মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তরা তাঁর গাড়িতে এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। ঘটনাটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে মনে হচ্ছে। তদন্ত চলছে, জড়িতদের শনাক্তে পুলিশ কাজ করছে।” নিহত আবদুল হাকিমের মরদেহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

হাকিম ছিলেন রাউজান উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের পাঁচখাইন গ্রামের বাসিন্দা। তিনি দীর্ঘদিন ভেষজ পণ্যের ব্যবসা, গরুর খামারি এবং পরে কর্ণফুলী নদী থেকে বালু উত্তোলনের ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তিনি বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হন। তাঁর কোনো আনুষ্ঠানিক পদ-পদবী না থাকলেও, তিনি ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ ও আর্থিক সহায়তাকারী।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গিয়াস কাদেরের রাজনীতিতে তিনি ছিলেন “অর্থের যোগানদাতা” এবং রাউজান অঞ্চলে তাঁর পক্ষে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে কর্ণফুলী নদীর রাউজান ও রাঙ্গুনিয়া অঞ্চলের বালু মহাল ইজারা নিয়ে একাধিক পক্ষের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা দেয়।

জানা গেছে, হাকিম প্রায় ৪ কোটি ৬০ লাখ টাকার পে-অর্ডার জমা দিলেও আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি ইজারা তার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি বালু মহল ইজারা নিতে পারেননি- সেই বালু মহালের ইজারা নেওয়া হয় তাঁর ঘনিষ্ঠ দুই সহযোগী পারভেজ ও ফরিদের নামে। এই দুজনের সঙ্গে হাকিমের ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল খুবই ঘনিষ্ঠ। সম্প্রতি বালু উত্তোলন ও মুনাফা বণ্টন নিয়ে তাঁদের মধ্যে তীব্র মতবিরোধ দেখা দেয়।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, হাকিম তাঁর নতুন প্রতিষ্ঠান “চৌধুরী কর্পোরেশন” নামে ইজারার আবেদন করেছিলেন, কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি জেলা প্রশাসনের নথিভুক্ত না থাকায় আবেদনটি গ্রহণ করা হয়নি। এরপর পারভেজ ও ফরিদের নামে বালু মহল ইজারা নেয় , কিন্তু ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে উভয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব তীব্র হয়। এই ইজারাকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপ গিয়াস কাদের চৌধুরী গ্রুপ ও প্রতিদ্বন্দ্বী ফজল হক গ্রুপ এর মধ্যে সংঘাত চরমে পৌঁছায়। স্থানীয় রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচিত এক ভয়ংকর নাম ফজল হক। তিনি এক সময় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর গ্রুপের সহযোগী ছিলেন, পরবর্তীতে ফজলে করিম চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন।বিগত বছরগুলোতে রাউজানে ঘটে যাওয়া বেশ কিছু রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের পেছনে তাঁর নাম এসেছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন।

সূত্র বলছে, শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর থেকে ফজল হক দুবাইয়ে বসে থেকেও রাউজানের রাজনীতিতে প্রভাব খাটাচ্ছেন এবং তাঁর নির্দেশেই একাধিক সহিংস ঘঠনা সংঘটিত হচ্ছে। বিশেষ করে ছাত্রদল নেতা নুরু হত্যাকাণ্ডে ফজল হক ও ফজলে করিম চৌধুরীর সহযোগিতায় ওই গ্রুপের ক্যাডাররা জড়িত ছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল।

হাকিম হত্যাকাণ্ডে ও স্থানীয় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, একই গ্রুপের লোকজন প্রতিশোধ ও আধিপত্য বিস্তারের অংশ হিসেবে এ হামলা চালিয়ে থাকতে পারে। ব্যবসায়িক সাফল্যের পাশাপাশি আবদুল হাকিমের অতীত জীবন নিয়েও নানা অভিযোগ রয়েছে। গত কয়েক বছর আগে সিনেমার পাইরেসি ব্যবসা ও মাদক চোরাচালানের অভিযোগে তাঁকে র‍্যাব গ্রেপ্তার করে ঢাকার সূত্রাপুর থানায় মামলা দেয়। কিছুদিন কারাভোগের পর তিনি মুক্তি পান। পরবর্তীতে তিনি নোয়াপাড়া ও পথেরহাট এলাকায় টাইলস ব্যবসার অন্তরালে হুন্ডির ব্যবসা শুরু করেন এবং ধীরে ধীরে বিপুল সম্পদের মালিক হন।

তবে স্থানীয় সূত্রের দাবি, মুক্তির পরও তিনি ফজলে করিম চৌধুরীর গ্রুপকে নিয়মিত চাঁদা দিতেন। গত এক বছরে রাউজানে সহিংসতায় অন্তত ১৩ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ১০টি ঘটনাই রাজনৈতিক কারণে। বিএনপির দুই পক্ষ গিয়াস কাদের চৌধুরী ও ফজল হক গ্রুপের মধ্যে শতাধিক সংঘর্ষ হয়েছে। রাজনৈতিক সংঘাত, বালু ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, এবং পূর্বের প্রতিশোধের রাজনীতি সবকিছু মিলিয়ে রাউজান আজও রক্তাক্ত।

জনৈক ব্যবসায়ী বলেন, “এখানে এখন রাজনীতি মানে বালু, চাঁদা আর অস্ত্র। এক সময় যারা একই দলে ছিল, তারাই আজ একে অপরের প্রাণের শত্রু।”

চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ বলছে, হত্যাকাণ্ডটি অত্যন্ত পরিকল্পিত। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। হত্যায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলগুলোর গতিপথ শনাক্তে কাজ চলছে। পুলিশ ইতোমধ্যে হাকিমের ব্যবসায়িক অংশীদারদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে।

এক কর্মকর্তা বলেন, “আমরা তিনটি সম্ভাব্য কারণ নিয়ে তদন্ত করছি-রাজনৈতিক প্রতিশোধ, বালু ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, ও আর্থিক লেনদেনজনিত বিরোধ।” রাউজান এখন এক অস্থির উপত্যকা—যেখানে রাজনীতি, অর্থ, ও অস্ত্র একে অপরের ছায়ায় মিশে গেছে। আবদুল হাকিম সেই সহিংস সমীকরণের এক করুণ বলি। তাঁর মৃত্যু শুধু একটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড নয়; এটি সেই দীর্ঘদিনের অন্ধকার ব্যবসা-রাজনীতির এক নির্মম প্রতিচ্ছবি, যেখানে বালুর চেয়ে রক্তের দাম এখন বেশি।

অনুসন্ধানী প্রতিবেদন——–

কামাল উদ্দীন,বিশেষ প্রতিবেদক: হাটহাজারীতে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে রাউজানের ব্যবসায়ী ও বিএনপি কর্মী মুহাম্মদ আবদুল হাকিম (৫২)-কে। মঙ্গলবার(০৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায়  মদুনাঘাট বাজারের পানি শোধনাগার মূল ফটকের সামনে এ নৃশংশ হত্যাকাণ্ডটি ঘটে। একদল মোটরসাইকেল আরোহী অস্ত্রধারী দুর্বৃত্ত তাঁর গাড়িতে এলোপাতাড়ি গুলি চালালে ঘটনাস্থলেই গুলিবিদ্ধ হন হাকিম ও তাঁর গাড়ী চালক।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, বিকেল পাঁচটার দিকে আবদুল হাকিম তাঁর নিজ গ্রামের খামারবাড়ি থেকে চট্টগ্রাম শহরে আসছিলেন তাঁর ব্যক্তিগত প্রাইভেট কারে। গাড়ির চালকের পাশে বসা ছিলেন তিনি। যখন গাড়িটি মদুনাঘাটের পানি শোধনাগার এলাকায় পৌঁছায়, তখন পেছন থেকে তিনটি মোটরসাইকেলে ছয় থেকে সাতজন অস্ত্রধারী এসে গাড়িটিকে লক্ষ্য করে একাধিক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। গুলিতে গাড়ির সামনের অংশ ক্ষতবিক্ষত হয় এবং কাঁচ ভেঙে যায়। চালক ও হাকিম উভয়েই গুলিবিদ্ধ হন। স্থানীয়রা তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আবদুল হাকিমকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত অন্য ব্যক্তির অবস্থা আশঙ্কাজনক।

সার্কেল পুলিশ সুপার তারেক আজিজ এ প্রতিবেদককে বলেন,“প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পেরেছি, মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তরা তাঁর গাড়িতে এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। ঘটনাটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে মনে হচ্ছে। তদন্ত চলছে, জড়িতদের শনাক্তে পুলিশ কাজ করছে।” নিহত আবদুল হাকিমের মরদেহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

হাকিম ছিলেন রাউজান উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের পাঁচখাইন গ্রামের বাসিন্দা। তিনি দীর্ঘদিন ভেষজ পণ্যের ব্যবসা, গরুর খামারি এবং পরে কর্ণফুলী নদী থেকে বালু উত্তোলনের ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তিনি বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হন। তাঁর কোনো আনুষ্ঠানিক পদ-পদবী না থাকলেও, তিনি ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ ও আর্থিক সহায়তাকারী।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গিয়াস কাদেরের রাজনীতিতে তিনি ছিলেন “অর্থের যোগানদাতা” এবং রাউজান অঞ্চলে তাঁর পক্ষে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে কর্ণফুলী নদীর রাউজান ও রাঙ্গুনিয়া অঞ্চলের বালু মহাল ইজারা নিয়ে একাধিক পক্ষের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা দেয়।

জানা গেছে, হাকিম প্রায় ৪ কোটি ৬০ লাখ টাকার পে-অর্ডার জমা দিলেও আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি ইজারা তার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি বালু মহল ইজারা নিতে পারেননি- সেই বালু মহালের ইজারা নেওয়া হয় তাঁর ঘনিষ্ঠ দুই সহযোগী পারভেজ ও ফরিদের নামে। এই দুজনের সঙ্গে হাকিমের ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল খুবই ঘনিষ্ঠ। সম্প্রতি বালু উত্তোলন ও মুনাফা বণ্টন নিয়ে তাঁদের মধ্যে তীব্র মতবিরোধ দেখা দেয়।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, হাকিম তাঁর নতুন প্রতিষ্ঠান “চৌধুরী কর্পোরেশন” নামে ইজারার আবেদন করেছিলেন, কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি জেলা প্রশাসনের নথিভুক্ত না থাকায় আবেদনটি গ্রহণ করা হয়নি। এরপর পারভেজ ও ফরিদের নামে বালু মহল ইজারা নেয় , কিন্তু ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে উভয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব তীব্র হয়। এই ইজারাকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপ গিয়াস কাদের চৌধুরী গ্রুপ ও প্রতিদ্বন্দ্বী ফজল হক গ্রুপ এর মধ্যে সংঘাত চরমে পৌঁছায়। স্থানীয় রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচিত এক ভয়ংকর নাম ফজল হক। তিনি এক সময় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর গ্রুপের সহযোগী ছিলেন, পরবর্তীতে ফজলে করিম চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন।বিগত বছরগুলোতে রাউজানে ঘটে যাওয়া বেশ কিছু রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের পেছনে তাঁর নাম এসেছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন।

সূত্র বলছে, শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর থেকে ফজল হক দুবাইয়ে বসে থেকেও রাউজানের রাজনীতিতে প্রভাব খাটাচ্ছেন এবং তাঁর নির্দেশেই একাধিক সহিংস ঘঠনা সংঘটিত হচ্ছে। বিশেষ করে ছাত্রদল নেতা নুরু হত্যাকাণ্ডে ফজল হক ও ফজলে করিম চৌধুরীর সহযোগিতায় ওই গ্রুপের ক্যাডাররা জড়িত ছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল।

হাকিম হত্যাকাণ্ডে ও স্থানীয় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, একই গ্রুপের লোকজন প্রতিশোধ ও আধিপত্য বিস্তারের অংশ হিসেবে এ হামলা চালিয়ে থাকতে পারে। ব্যবসায়িক সাফল্যের পাশাপাশি আবদুল হাকিমের অতীত জীবন নিয়েও নানা অভিযোগ রয়েছে। গত কয়েক বছর আগে সিনেমার পাইরেসি ব্যবসা ও মাদক চোরাচালানের অভিযোগে তাঁকে র‍্যাব গ্রেপ্তার করে ঢাকার সূত্রাপুর থানায় মামলা দেয়। কিছুদিন কারাভোগের পর তিনি মুক্তি পান। পরবর্তীতে তিনি নোয়াপাড়া ও পথেরহাট এলাকায় টাইলস ব্যবসার অন্তরালে হুন্ডির ব্যবসা শুরু করেন এবং ধীরে ধীরে বিপুল সম্পদের মালিক হন।

তবে স্থানীয় সূত্রের দাবি, মুক্তির পরও তিনি ফজলে করিম চৌধুরীর গ্রুপকে নিয়মিত চাঁদা দিতেন। গত এক বছরে রাউজানে সহিংসতায় অন্তত ১৩ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ১০টি ঘটনাই রাজনৈতিক কারণে। বিএনপির দুই পক্ষ গিয়াস কাদের চৌধুরী ও ফজল হক গ্রুপের মধ্যে শতাধিক সংঘর্ষ হয়েছে। রাজনৈতিক সংঘাত, বালু ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, এবং পূর্বের প্রতিশোধের রাজনীতি সবকিছু মিলিয়ে রাউজান আজও রক্তাক্ত।

জনৈক ব্যবসায়ী বলেন, “এখানে এখন রাজনীতি মানে বালু, চাঁদা আর অস্ত্র। এক সময় যারা একই দলে ছিল, তারাই আজ একে অপরের প্রাণের শত্রু।”

চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ বলছে, হত্যাকাণ্ডটি অত্যন্ত পরিকল্পিত। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। হত্যায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলগুলোর গতিপথ শনাক্তে কাজ চলছে। পুলিশ ইতোমধ্যে হাকিমের ব্যবসায়িক অংশীদারদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে।

এক কর্মকর্তা বলেন, “আমরা তিনটি সম্ভাব্য কারণ নিয়ে তদন্ত করছি-রাজনৈতিক প্রতিশোধ, বালু ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, ও আর্থিক লেনদেনজনিত বিরোধ।” রাউজান এখন এক অস্থির উপত্যকা—যেখানে রাজনীতি, অর্থ, ও অস্ত্র একে অপরের ছায়ায় মিশে গেছে। আবদুল হাকিম সেই সহিংস সমীকরণের এক করুণ বলি। তাঁর মৃত্যু শুধু একটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড নয়; এটি সেই দীর্ঘদিনের অন্ধকার ব্যবসা-রাজনীতির এক নির্মম প্রতিচ্ছবি, যেখানে বালুর চেয়ে রক্তের দাম এখন বেশি।