অনুসন্ধানী প্রতিবেদন———
এস এম আকাশ: বন্দরনগরী ও বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম শহরের সীমানা সংযুক্ত কর্ণফুলী উপজেলায় আইন শৃঙ্খলার অবনতি ও দেশীয় বিধি বিধানহীন বেপরোয়া বিরাজমান পরিস্থিতি এবং উগ্র উচ্ছৃঙ্খল জনপদে পরিণত হওয়া সহ জোর জবরদস্তির কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে প্রতিষ্ঠা হয়েছে বাণিজ্যিক বান্ধব কর্ণফুলী থানা এলাকা। যেখানে ৫ আগষ্ট পরবর্তী রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করা থেকে শুরু করে মামলা বাণিজ্য ও দখল -বেদখল নিয়ে আলোচনা সমালোচনার শিরোনামে বিবেচিত হয়ে উঠেছে এই উপজেলা। এহেন অপকর্মের আনজাম দাতা হিসেবে চলমান সক্রিয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ভূঁইফোড় নেতাদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট উপজেলা তথা থানার অফিসার্স ইনচার্জ ওসি মুহাম্মদ শরিফ এর সংশ্লিষ্টতা দিবালোকের মতো দৃশ্যমান বলে জানা যায়।
তারই ধারাবাহিকতায় গেল শনিবার ৪ঠা অক্টোবর সিএমপি’র এই সমালোচিত কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহা ক্রসিং এলাকার এসআর স্কয়ার নামক একটি কমিউনিটি সেন্টারে সুকৌশলে ফ্যাসিজম কায়েমের ন্যাক্কারজনক এক ঘটনার জন্ম দিয়ে স্বৈরাচারী পতিত আওয়ামী সরকারের মদদদাতা উপজেলা হিসেবে চিহ্নিত করেছে জুলাই বিপ্লবের নেতৃবৃন্দরা।
আলোচনায় উঠে আসে যে, উপজেলা যুবলীগের সাবেক সহ-সভাপতি মোহাম্মদ আলমগীর কবিরকে আটক করার পর মোটা অংকের টাকা বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কর্ণফুলী থানার অফিসার্স ইনচার্জ ওসি ও দুই উপ-পরিদর্শক (এসআই) দের বিরুদ্ধে। সরাসরি অভিযুক্তরা হলেন- সংশ্লিষ্ট থানার সাব ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ রিয়াদুল ইসলাম ও একই পদধারী মোহাম্মদ রুহুল আমিন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়দের অভিযোগ, আওয়ামী দোসর দালালদের আশ্রয় ও পূনবাসন কোন অবস্থাতেই কাম্য নয়। হাজারো অভিযোগ ও জুলাই বিপ্লবে প্রধান প্রশ্নবিদ্ধ বাহিনী হিসেবে চিহ্নিত পুলিশ কর্মকর্তাদের এমন সম্পৃক্ততা শোভনীয় নয়। সরাসরি থানা পুলিশ কর্তৃক প্রকাশ্যে এহেন ঘটনা সৃষ্টির জের গোটা বাংলাদেশ পুলিশের ভাবমূর্তির উপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ও সমালোচনার হেতু হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মত প্রকাশ করেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকেরা।
সরজমিন তদন্তে জানা যায়,শনিবার ৪ অক্টোবর দুপুরে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে স্থানীয় এসআর স্কয়ার নামক একটি কমিউনিটি সেন্টারে যায় যুবলীগ নেতা আলমগীর কবির। একই সময়ে সোর্স কর্তৃক পাওয়া তথ্য সূত্রে সাদা পোশাকে অবস্থান নেয় সিএমপি’র কর্ণফুলী থানার একটি টিম। উক্ত যুবলীগ নেতার উপস্থিতি দৃশ্যমান হলে তাৎক্ষণিক ভাবে আলমগীরকে আটক করে পুলিশ হেফাজতে নেয় সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, আটকের কিছুক্ষণের মধ্যেই চলমান সক্রিয় রাজনৈতিক দলের নেতাদের সুকৌশল মধ্যস্থতায় ও মোটা অংকের আর্থিক সমঝোতার মাধ্যমে আটককৃত আসামিকে ছেড়ে দেয়া হয়।
ঘটনাস্থলের প্রত্যক্ষদর্শীরা পরিস্কার করে অভিযোগ করে প্রতিবেদককে জানান, এই সময়ে উপস্থিত শিকলবাহা ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, শ্রমিক দলের আহ্বায়ক আঙ্গুর মেম্বার ও স্থানীয় শ্রমিক নেতা বাহার উদ্দিন আটককৃত আসামিকে মুক্তি দিতে প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা পালন করেছে। যার দরুন এলাকায় চরম অসন্তোষ ও ক্ষোভ বিরাজ করছে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে।
সৃষ্ট ঘটনার বিষয় বস্তু নিয়ে চট্টগ্রাম মেট্রো পলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার হাসিব আজিজ বিপিএম প্রতিবেদককে ওভার ফোনে জানান, পুরো ব্যাপারটা আমার নলেজে আছে তারপরও বিষয়টা নিয়ে আপনি অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অপরাধ ও অপারেশন) এর সাথে কথা বলুন এবং অগ্রগতি কতদূর জেনে নিন।
প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে সিএসপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অপরাধ ও অপারেশন) একই সাথে অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রাপ্ত (অর্থ ও প্রশাসন) হুমায়ুন কবির এর সাথে ওভার ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি প্রতিবেদককে পরিস্কার করে বলেন, এহেন কর্মকাণ্ডের জন্য কোন ছাড় নেই। তবে এখনও পর্যন্ত আমরা তদন্ত করছি যদি ঐ থানার অফিসার্স ইনচার্জ ওসি ও সাব ইনস্পেক্টররা জড়িত থাকে বা প্রমানিত হয় তবে অবশ্যই দাপ্তরিক ভাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেন এই বিচক্ষণ পুলিশ কর্মকর্তা।
একই বিষয়ে উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর) ও সদ্য পদোন্নতি প্রাপ্ত অতিরিক্ত ডিআইজি) মুহাম্মদ ফায়সাল আহম্মেদ সরাসরি মোবাইল ফোনে প্রতিবেদককে বলেন,বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ঘটনাটা শুনেছি এবং এটা নিয়ে উর্ধতন কর্মকর্তাদের অবগতও করেছি ও কর্তব্যরত অফিসার্স ইনচার্জ ওসি ও এসআইদের বিরুদ্ধে যা অভিযোগ আসছে তা সহ এবং আপনি সাংবাদিক ভাই থেকে প্রাপ্ত তথ্য মোতাবেক পরবর্তী পদক্ষেপে অগ্রসর হবো বলে অবিহিত করেন তিনি।
কর্ণফুলী জোনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও ডিসি বন্দর আমিনুল ইসলাম বলেন, সিএমপি হেড কোয়ার্টার থেকে বিষয়টা অবগত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট থানার ওসি সহ যে সকল পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে স্থানীয়দের যে অভিযোগ বিভিন্ন ভাবে আসছে তার উপর নোট রেখে হেড কোয়ার্টারে রিপোর্ট প্রদান করবো।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আলহাজ্ব ইদ্রিস মিয়া এক ভিডিও বার্তায় এ প্রতিবেদককে জানান,আমি দক্ষিণ জেলা বিএনপির পক্ষে দায়িত্ব নিয়ে পরিষ্কার করে বলছি যে, সিএমপি’র কর্ণফুলী থানার বর্তমান অফিসার্স ইনচার্জ ওসি মুহাম্মদ শরিফ একজন ঘুষখোষ ও দূর্ণীতিবাজ অফিসার। সে বেপরোয়া এবং অত্যাচারী পুলিশ অফিসার। তার অমানবিক নির্যাতনের শিকার শত শত বিএনপি নেতাকর্মী ও নিরীহ মানুষ। অনতিবিলম্বে ওসি মুহাম্মদ শরিফকে কর্ণফুলী থানা থেকে প্রত্যাহার করার দাবি জানাচ্ছি।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় ছাত্র সমন্বয়ক ও দেশব্যাপী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের সমন্বয়ক রিজওয়ান সিদ্দিকী ওভার ফোনে বলেন,আমরা গত কয়েক মাস ধরে শুনে আসছি কর্ণফুলী উপজেলা জুড়ে নানান ধরনের অরাজকতা চলছে। মামলা দিয়ে নৈরাজ্য,বালু মহাল নিয়ে নয়ছয়,বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাংলা ক্যাট এর মালামাল সিন্ডিকেট করে লুটপাট ও প্রতিবাদরত অসহায় শত শত পরিবারের উপর জুলুম সহ হাজারো অপরাধে স্থানীয় থানার অফিসার্স ইনচার্জ ওসি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত এবং সে আওয়ামী লীগের সক্রিয় এজেন্ট হিসেবে চিহ্নিত সুতরাং তাকে দ্রুত অপসারণ করা না হলে শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।
তিনি আরও বলেন,আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা যদি দায়িত্বের নামে এমন আটক ও জামিনের রমরমা বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েন তবে সাধারণ মানুষের ভরসা বিগত স্বৈরাচার সরকারের আমলের মতো পুলিশের উপর ক্রমশই আবারও আস্থার সংকট তৈরি হবে এবং ইতিহাস পূণরায় রচনা করে নিবে মুক্তিকামী মানুষ।
দক্ষিণ জেলা যুবদলের সাবেক নেতা ও বর্তমান কেন্দ্রীয় শ্রমিক দলের সদস্য জহির উদ্দিন মোহাম্মদ তছলিম ওভার ফোনে জানান, পুরো বিষয় টা আমারা নজরে রেখেছি। জেলার আহবায়ক ইদ্রিস মিয়া ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের দায়িত্বশীল নিবেদিত সাংগঠনিক নেতা এবং সাবেক ছাত্রদলের সভাপতি গাজী সিরাজের দৃঢ় অবস্থান যে,চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার কোন উপজেলায় পুলিশ হোক বা যে কোন রাজনৈতিক দলের নেতা হোক কেউই অন্যায়ের পক্ষে প্রশ্রয় পাবেনা। আমরা সবাই বদ্ধপরিকর এ জেলায় কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। আর কর্ণফুলী থানা এলাকায় যা কিছু হচ্ছে বা ঘটছে তা সব গুলো সাংগঠনিক ভাবে তদন্ত করে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে জানান এই সাবেক ছাত্র নেতা।
আনিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করতে কর্ণফুলী থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ শরীফের সঙ্গে ওভার ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বারবার প্রসঙ্গ এড়িয়ে পরে কথা বলবো বলে তিনবার ফোনের লাইন কেটে দেন।
অপরদিকে অভিযুক্ত এসআই রিয়াদুল ইসলামও প্রাসঙ্গিক বিষয় এড়িয়ে ঘটনাটা নিছক ভুল বুঝাবুঝি বলে লাইন কেটে দেন।
একই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শিকলবাহা পুলিশ ফাঁড়ির আইসি ও ফাঁড়ির ইনচার্জ শামিউর রহমান ওভার ফোনে কোন মন্তব্য বা বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি।




