মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া: কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলায় একটি ফৌজদারি মামলার স্বাক্ষী হওয়ার ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে রাতের আঁধারে এক বিধবা নারীর বসতঘরে অগ্নিসংযোগ করে জ্বালিয়ে দিয়েছে চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় ওই বিধবা নারীর বসতবাড়ি, গৃহপালিত ১৫টি হাস-মুরগি, ৭টি ছাগলসহ বসতঘরের মালামাল সব পুড়ে ছাঁই হয়ে যায়। গতকাল বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রেুয়ারী) দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের দ্বিয়া পাড়া গ্রামে ঘটনাটি সংগঠিত হয়।
এ ঘটনায় ভূক্তভোগী ওই গ্রামের মৃত গিয়াস উদ্দিন মানিকের বিধবা স্ত্রী মর্জিনা জলসা (২৯) আজ শুক্রবার বিকালে তার বাড়িতে অগ্নিসংযোগকারী সন্ত্রাসীদের আসামী করে পেকুয়া থানায় একটি এজাহার দায়ের করেছেন।
পেকুয়া থানায় দেয়া এজাহার ও সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসীদের সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ২২ ফেব্রেুয়ারী দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে পেকুয়া সদর ইউনিয়নের ৩নম্বর ওয়ার্ড়ের জালিয়াখালী গ্রামের মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে জিয়াবুল করিম (৩২), মহিউদ্দিনের দুই ছেলে সোহেল (২২) ও শাহিন (২০), মোকতার আহমদের ছেলে রায়হান (২৫), শফিকুর রহমানের ছেলে মেহের আলী (৪৫)সহ অজ্ঞাতনামা আরো ৫/৬ জন সন্ত্রাসীরা রাতের আঁধারে বিধবা মর্জিনার বসতঘরে অগ্নিসংযোগ করে। বিধবার বসতঘরে অগ্নি সংযোগে জড়িদের বিরুদ্ধে বেশ কিছুদিন পূর্বে এলাকায় ধানের চাষের জমিতে লবণাক্ত গভীর নলকূপ বসিয়ে লবণের পানি উত্তোলন করার ঘটনায় প্রতিবাদ করলে এলাকাবাসীদের উপর হামলা চালায়।
এঘটনায় চলতি মাসের ২ ফ্রেব্রুয়ারী পেকুয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন পেকুয়া সদর ইউনিয়নের দ্বিয়াপাড়া গ্রামের আবু সৈয়দের ছেলে মো: শাহজাহান।যার মামলা নং জিআর ২০/২৪ইং। উক্ত মামলার এজাহারে বিধবা মর্জিনাকে ৩নম্বর সাক্ষী হিসাবে রাখা হয়। আর এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে সন্ত্রাসী জিয়াবুল করিম গং। স্বাক্ষী থাকায় মামলার পর থেকে বিধবা মর্জিনাকে হত্যাসহ বসতঘর জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে আসছিল জিয়াবুল করিম ও তার লোকজন। এরই জের ধরে ঘটনার দিন ২২ ফেব্রেুয়ারী দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে বিধবা মর্জিনাসহ তার পরিবারের সবাইকে পুড়িয়ে মারার উদ্দেশ্যে বিধবার বসতঘরের চারিদিকে অবস্থান নেন জিয়াবুল করিম ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা।
এসময় মর্জিনার ২ ছেলে ও ১ মেয়েকে নিয়ে প্রতিদিনের ন্যায় বাড়ীর পশ্চিম বারান্দায় ৭টি ছাগল এবং হাস মুরগী বেধে রেখে রাতে ঘুমিয়ে পড়লে রাত সাড়ে তিনটার দিকে জিয়াবুল করিমের নেতৃত্বে ঘরের পূর্ব দিকে অকটেন ছিটিয়ে অগ্নিসংযোগ করে। সাথে সাথে ঘরের চারিদিকে আগুনের লেলিহান শিখা দাউ দাউ করে জ্বলে উঠলে মর্জিনা হতভম্ব হয়ে সন্তানদের নিয়ে ঘর থেকে দ্রুত বের হয়ে প্রাণে রক্ষা পেলেও গৃহপালিত হাসমুরগিও ছাগলসহ বাড়ির সব মালামাল সম্পূর্নরূপে ভস্মিভূত হয়।
বিধবা মর্জিনা জলসা কান্নাজড়িত কন্ঠে সাংবাদিকদের বলেন, আমার বসতঘরে সন্ত্রাসী জিয়াবুল করিমের নেতৃত্বে তার সাঙ্গপাঙ্গরা অগ্নিসংযোগ করে পালিয়ে যেতে দেখেছি। আমার সন্তানদের ঘর থেকে বের করতে পারলেও আর কোন কিছুই বের করতে পারিনি এবং আগুনের কবল থেকে রক্ষা করতে পারিনি। এতে আমার ৭টি ছাগল ও ১৫টি হাস- মুরগী পুড়ে অঙ্গার হয়ে যায়। বাড়ীর আসবাবপত্র, ক্রোকারিজ সামগ্রী কাপড়- চোপড়, কম্বল, ছাগলসহ প্রায় ৫লক্ষাধিক টাকার জিনিসপত্র ও সম্পূর্ণ ঘর পুড়ে যায়।
শাহাজানের মামলায় স্বাক্ষী থাকায় জিয়াবুল করিম গং আমার বসতঘর জ্বালিয়ে দিয়ে আমার বেঁচে থাকার সব সম্বল শেষ করে দিয়েছে। এখন আমি কি করে বেঁচে থাকবো।




