ঢাকা ব্যুরো: সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার তারিখ পিছিয়ে সেঞ্চুরি হয়েছে। নতুন করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ১১ সেপ্টেম্বর দিন ঠিক করেছেন আদালত।
সোমবার (৭ আগস্ট) মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য ছিল। তদন্ত সংস্থা র্যাব প্রতিবেদন দাখিল না করায় ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রশিদুল আলম প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নতুন দিন ঠিক করেন। ফলে শতবারের মতো পেছালো তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার তারিখ।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি অজ্ঞাতদের দ্বারা নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি। হত্যার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিরা গ্রেপ্তার হবে বলে আশ্বাস দেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। কিন্তু এরপর দীর্ঘ ১১ বছর কেটে গেলেও উদঘাটন হয়নি হত্যার রহস্য। ৯৯ বার পেছানো হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদন।
আজ ১০০তম প্রতিবেদন দাখিলের দিনও পেছানো হলো সময়। তবে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা র্যাবের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শফিকুল আলম গণমাধ্যমকে মোবাইল ফোনে জানান, মামলার প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেননি। তিনি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত। তাই ১০০তম ধার্য দিনেও আলোচিত এ হত্যা মামলার প্রতিবেদন পেছাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, মামলার তদন্ত চলছে। এটি একটি ক্লুলেস আলোচিত মামলা। তাই সময় লাগছে। এ বিষয়ে আর কথা বলতে চাননি তিনি।
নিহত সাগরের মা সালেহা মনির গণমাধ্যমকে বলেন, এর আগে প্রতিবেদন পেছানোর সুবর্ণজয়ন্তী, হিরকজয়ন্তী পার করেছে। এখন প্রতিবেদন না দিয়ে সেঞ্চুরি পালন করবে। আমি অনেক আশা করেছিলাম, শততম প্রতিবেদন দাখিলের দিনে হয়তো চমক দেখাবে। কিন্তু আবার আশাহত হলাম। ১১ বছর ধরে তদন্ত করছে। কিন্তু খুনিদের চিহ্নিত করতে পারেনি র্যাব। র্যাব অনেক ক্লুলেস-আলোচিত মামলার তদন্ত করতে পারল, আর এটার করতে পারছে না কেন। যাদের গ্রেপ্তার করেছে তারা নিরীহ। এটা আসলে আইওয়াশ। আসল খুনিদের গোপন রাখতে প্রতিবেদন দেয়া হচ্ছে না? তারা না পারলে বলে দিক পারব না। আর হাইকোর্ট থেকেও একটা সময় বেঁধে দিক। যেন ওই সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়।
৭২ বছরের বৃদ্ধা সালেহা মনির আরো বলেন, ছেলে খুন হওয়ার পর এখনো কবর জিয়ারত করিনি। সংকল্প করেছিলাম ছেলের আসল খুনিদের দেখব। রায়ের পর বিচার নিয়ে ছেলের কবর দেখব। রুনির মা তো খুনিদের না দেখেই মারা গেল। বেঁচে থাকতে আমিও দেখে যেতে পারব কিনা জানি না। তবে একদিন ছেলে হত্যার বিচার হবে।
মামলার বাদী নওশের আলম রোমান বলেন, সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের সাড়ে ১১ বছর হয়ে গেল। এই সময়ে কত আলোচিত হত্যা মামলার বিচার শেষ হয়েছে। কিন্তু এই মামলার জন্য ১০০ বার সময় নিয়েও তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি। কোনো অদৃশ্য শক্তির কারণে সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত আটকে আছে? র্যাব ও সরকারের আন্তরিকতা নেই। সরকারের কাছে আমাদের পরিবারের দাবি এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য যেন দ্রুত উদ্ঘাটন হয়।
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবু আব্দুল্লাহ বলেন, অনেক সময় পার হয়ে গেল। সাগর-রুনি হত্যা মামলাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা উচিত। মামলার তদন্ত সংস্থা র্যাব যদি তদন্ত করতে না পারে তাহলে অন্য কোনো সংস্থা দিয়ে তদন্ত করানো যেতে পারে।
ডিএমপির প্রসিকিউশন বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ আনিসুর রহমান বলেন, সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার প্রতিবেদন এখনো পাইনি।
উল্লেখ্য, গোলাম মোস্তফা সারোয়ার ওরফে সাগর সারোয়ার ছিলেন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক। আর তার স্ত্রী মেহেরুন নাহার রুনা ওরফে মেহেরুন রুনি ছিলেন এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক। ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে নিজেদের বাসায় নির্মম খুন হন এ দম্পতি। সকালে তাদের ক্ষত-বিক্ষত লাশ পাওয়া যায়। ঘটনার পরদিন রুনির ভাই নওশের আলম রোমান রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলায় রুনির বন্ধু তানভীর রহমানসহ মোট ৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। অপর আসামিরা হলেন- বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী এনাম আহমেদ ওরফে হুমায়ুন কবির, রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু ওরফে মাসুম মিন্টু, কামরুল হাসান অরুণ, পলাশ রুদ্র পাল ও আবু সাঈদ। আসামিদের মধ্যে তানভীর ও পলাশ রুদ্র জামিনে আছেন। অন্যরা কারাগারে আছেন। আসামিদের আইনজীবীরা বলছেন, দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন দিক। দোষী হলে তারা সাজা পাক। কিন্তু দোষী প্রমাণিত না হয়ে ১১ বছর ধরে কারাগারে থাকা অমানবিক। সবার ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার আছে।
জানা যায়, আলোচিত এ মামলার তদন্তে প্রথমে শেরেবাংলা নগর থানার একজন এসআই নিয়োজিত ছিলেন। ৪ দিন পর ডিবি পুলিশকে দায়িত্ব দেয়া হয়। ডিবি পুলিশ দুই মাসে ব্যর্থ হলে হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল হত্যা মামলাটির তদন্তভার যায় র্যাবে। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর ১০ বছর ১০ মাস গড়িয়েছে, কিন্তু র্যাব এখনো হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করে প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি।