বান্দরবান জেলা প্রতিনিধি : বান্দরবানের রুমা উপজেলার কেওক্রাডং এর কাছেই সুংসুয়াং পাড়ায় কেএনএফ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যৌথবাহিনীর অভিযানে ভারতের মিজোরামে পালিয়ে যাওয়া বম জনগোষ্ঠীর প্রত্যাবর্তনের পর তাদের জীবনমান উন্নয়নে, কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ হতে ইকো রিসোর্ট নির্মাণ প্রকল্পের প্রাথমিক উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) সুংসুয়াং পাড়ায় বসবাসকারী পাড়াবাসির জন্য একটি ইকো রিসোর্ট নির্মাণ প্রকল্পের প্রাথমিক উদ্বোধন
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২১০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত সুংসুয়াং পাড়ায় বসবাসরত বম জনগোষ্ঠীর জীবন যাত্রার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে সেনাবাহিনী ইতিমধ্যে নানা ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
ইকো রিসোর্ট নির্মাণ প্রকল্পের প্রাথমিক উদ্বোধন করেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম রাকিব ইবনে রেজওয়ান, এএফডব্লিউসি, পিএসসি, কমান্ডার ৬৯ পদাতিক ব্রিগেড এবং রিজিয়ন কমান্ডার বান্দরবান রিজিয়ন।
২৪ পদাতিক ডিভিশনের অর্থায়নে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। সেনবাহিনীর ১৬ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট,দি ম্যাজিস্টিক টাইগার্স’ এর সেনা সদস্যরা পরিকল্পনা প্রণয়ন থেকে শুরু করে দুর্গম এলাকায় রিসোর্ট নির্মাণের জন্য স্থানীয় জনসাধারণকে সকল ধরনের সহযোগিতা প্রদান করে চলেছেন।নির্মিত ইকো রিসোর্টটির মালিকানা এবং পরিচালনার দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে স্থানীয় বম জনগোষ্ঠীর কাছে থাকবে বলে জানান সংশ্লিষ্ঠরা।
এই রিসোর্ট স্থাপনের ফলে প্রত্যাবর্তনকৃত বম সম্প্রদায়ের সদস্যদের জন্য সরাসরি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি তাদের জীবন মানের উন্নয়ন হবে। রিসোর্ট থেকে অর্জিত আয়ের সম্পূর্ণ অংশ সুংসুয়াং পাড়াবাসীর নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিভিন্ন সামাজিক কল্যাণমূলক কাজে ব্যবহৃত হবে বলে জানান সেনাবাহিনীর।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাস থেকে শুরু হওয়া কুকি চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ) এর সাথে যৌথ বাহিনীর সংঘাতে রুমা উপজেলায় অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ায় বম জনগোষ্ঠীর কিছু পরিবার এবং সদস্য নিজ পাড়া ছেড়ে ভারতের মিজোরাম এবং সীমান্তবর্তী দুর্গম অঞ্চলে আশ্রয় গ্রহণ করে। সেনাবাহিনীর চলমান বিশেষ অভিযানের ফলে কেএনএ সন্ত্রাসীদের আধিপত্য বহুলাংশে হ্রাস পায় এবং তাদের অনেকেই স্বাভাবিক জীবনে ফেরত আসতে আগ্রহ প্রকাশ করে। সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় সেনাবাহিনী নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এবং অর্থায়নে এই সকল বাস্তুচ্যুত বম পরিবারকে নিজ নিজ পাড়ায় ফেরত আনার কার্যক্রম শুরু করে।
ইতিমধ্যে প্রত্যাবর্তনকারী বম পরিবারের পুনর্বাসনের জন্য ২০ লক্ষ টাকা ২৪ পদাতিক ডিভিশন হতে বরাদ্দ করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ সহায়তায় গত ১৮ নভেম্বর ২০২৪ হ’তে বম পরিবারের সদস্যরা পুনরায় তদের নিজ আবাসভূমিতে প্রত্যাবর্তন করা শুরু করে।এ পর্যন্ত সর্বমোট ২০২ টি পরিবারের ৫০৩ জন বম সদস্য দেশে প্রত্যাবর্তন করেছেন।ফেরত আসা পরিবার ও তাদের সদস্যদের কর্মসংস্থান এবং আর্থ-সামাজিকভাবে স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে গত ৫ জুন হ’তে শুরু করে পর্যায়ক্রমে রুমা উপজেলার বিভিন্ন আকর্ষণীয় স্থান পর্যটকদের জন্য খুলে দেয়া হয়।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র দলগুলির বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর কঠোর অবস্থান এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য সেনাবাহিনী এই ধরনের জনকল্যাণ মূলক কার্যক্রম ভবিষ্যতেও অব্যাহত রাখার পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি,নিরাপত্তা ও উন্নয়ন নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
Post Views: 46




