আন্তর্জাতিক ডেস্ক: প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্বাঞ্চলে মার্কিন সামরিক বাহিনীর এক হামলায় একটি নৌযানে চারজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) মার্কিন সংবাদমাধ্যম ও আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভেনিজুয়েলাকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক তৎপরতা সীমিত করার প্রস্তাব কংগ্রেসে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পরপরই এই প্রাণঘাতী হামলার ঘোষণা আসে।
লাতিন আমেরিকা অঞ্চলে পরিচালিত ‘সাউদার্ন স্পিয়ার’ নামের অভিযানের দায়িত্বে থাকা ইউএস সাউদার্ন কমান্ড জানিয়েছে, বুধবারের হামলায় ‘চারজন পুরুষ নারকো-সন্ত্রাসীকে’ লক্ষ্য করা হয়েছে। তবে ধ্বংস হওয়া নৌযানটি মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত ছিল—এমন কোনো প্রমাণ তারা প্রকাশ করেনি।
মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথের নির্দেশে পরিচালিত এই অভিযানের মাধ্যমে গত সেপ্টেম্বর থেকে প্রশান্ত মহাসাগর ও ক্যারিবীয় অঞ্চলে মার্কিন হামলায় নিহতের সংখ্যা প্রায় ১০০ জনে পৌঁছেছে। ওয়াশিংটন স্বীকার করেছে, এ সময়কালে তারা অন্তত ২৬টি নৌযানে হামলা চালিয়েছে।
আন্তর্জাতিক আইনি বিশেষজ্ঞরা আন্তর্জাতিক জলসীমায় এ ধরনের অভিযানকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হিসেবে আখ্যা দিলেও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এসব হামলার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তার দাবি, ভেনিজুয়েলাভিত্তিক মাদক কার্টেলগুলোর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে মাদকের প্রবাহ ঠেকাতে এ ধরনের সামরিক পদক্ষেপ প্রয়োজন।
এদিকে ভেনিজুয়েলাকে কেন্দ্র করে ট্রাম্পের সামরিক ক্ষমতা সীমিত করার উদ্যোগ মার্কিন প্রতিনিধি সভায় বড় ধাক্কা খেয়েছে। রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণাধীন হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভস ২১০–২১৬ ভোটে এমন একটি প্রস্তাব নাকচ করে দেয়, যার লক্ষ্য ছিল কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া ভেনিজুয়েলার বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালানো থেকে প্রেসিডেন্টকে বিরত রাখা।
এই ভোটাভুটির মধ্যেই লাতিন আমেরিকায় যুক্তরাষ্ট্র ব্যাপক সামরিক সরঞ্জাম মোতায়েন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে হাজার হাজার সেনা, ওয়াশিংটনের সবচেয়ে বড় বিমানবাহী রণতরী এবং একটি পারমাণবিক চালিত সাবমেরিন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রকাশ্যেই ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার হুমকি দিয়ে আসছেন।
উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে গত মঙ্গলবার ট্রাম্প ভেনিজুয়েলার বন্দরগুলোতে প্রবেশকারী এবং সেখান থেকে ছেড়ে যাওয়া সব তেল ট্যাঙ্কার অবরোধের নির্দেশ দেন। মাদুরো সরকার এই সিদ্ধান্তকে ‘নৃশংস হুমকি’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেছে, এটি ভেনিজুয়েলার সম্পদ লুটের অপচেষ্টা।
এর আগে গত সপ্তাহে মার্কিন সেনারা ভেনিজুয়েলার উপকূল থেকে ‘স্কিপার’ নামের একটি তেল ট্যাঙ্কার জব্দ করে টেক্সাসে নিয়ে যায়। নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই নৌ-অবরোধের পর ভেনিজুয়েলার নৌবাহিনী তাদের তেলবাহী জাহাজগুলোকে নিরাপত্তা দিয়ে পাহারা দিতে শুরু করেছে।
এই পরিস্থিতিতে লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশ সম্ভাব্য সংঘাত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লডিয়া শিনবাম রক্তপাত এড়াতে জাতিসংঘকে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দ্য সিলভা ট্রাম্পের আগ্রাসী অবস্থান নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানের ওপর জোর দিয়েছেন।
অন্যদিকে ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে ফোনালাপ করেছেন এবং মার্কিন কর্মকর্তাদের বক্তব্যকে ‘বর্বর কূটনীতি’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্টিফেন মিলারের ভেনিজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের প্রাপ্য—এমন মন্তব্যকে তিনি উপনিবেশবাদী ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ বলে সমালোচনা করেন। সূত্র: আল জাজিরা




