নিজস্ব প্রতিনিধি: চট্টগ্রামের স্থানীয় ও কক্সবাজারে ভ্রমণে আসা পর্যটকদের পছন্দের শীর্ষে থাকা শুটকি মাছের চাহিদার আলোকে, কক্সবাজারের নাজিরারটেক এখন পরিণত হয়েছে দেশের সবচেয়ে ব্যস্ত ও বৃহত্তম শুঁটকি উৎপাদন মহালে। ভোর থেকেই উপকূলজুড়ে শুরু হয় মাছ ধোয়া, কাটা, মাচায় সাজানো আর শুকানোর কর্মযজ্ঞ। নভেম্বরের শুরুতেই উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা—এ মৌসুমে শুঁটকি রফতানিতে নতুন রেকর্ড গড়বে কক্সবাজার।

কক্সবাজার জেলার সমুদ্রতীরবর্তী প্রায় ১০০ একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত নাজিরারটেক শুঁটকি মহাল। এখানে কাজ করেন প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক, যার বড় অংশই নারী। প্রতিদিন সমুদ্র থেকে ধরা তাজা মাছ এনে ধোয়া–মোছা করে বাঁশের মাচায় ৩–৪ দিন ধরে প্রাকৃতিক সূর্যের তাপে শুকানো হয়। শুষ্ক মৌসুমে নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সবচেয়ে ব্যস্ত সময় হলেও বৃষ্টি না থাকলে সারা বছরই কিছু উৎপাদন চলে।

শুটকি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, নাজিরারটেকে প্রতি মৌসুমে ৫০–৬০ হাজার মেট্রিক টন শুঁটকি উৎপাদিত হয়, যার বাজারমূল্য চারশত কোটি টাকারও বেশি। উৎপাদিত শুঁটকি দেশের বাজারে সরবরাহের পাশাপাশি হংকং, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা ও মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে রফতানি হয়।

নাজিরারটেক ছাড়াও নুনিয়ারছড়া, খুরুশকুল, মহেশখালী, চৌফলদণ্ডী, সোনাদিয়া, উখিয়া, কুতুবদিয়া, মগনামা, টেকনাফ ও সেন্টমার্টিনের অন্তত ৩০০ শুঁটকি মহালে সমানতালে উৎপাদন চলছে। এসব মিলিয়ে কক্সবাজার জেলায় শুঁটকি উৎপাদন দেশের মোট উৎপাদনের বড় অংশজুড়ে রয়েছে।

মহালের ৫০–৬০টি আড়তে প্রতিদিন চিংড়ি, রূপচাঁদা, ছুরি, কোরাল, সুরমা, লইট্যা, পোপা, টেকচাঁদা, হাঙর, ফাইস্যা ও নাইল্যা মাছসহ প্রায় ২৫–৩০ প্রজাতির মাছ শুকানো হয়। গভীর সমুদ্র থেকে ধরা এসব মাছ এনে জেলেরা বিক্রি করে যান মহালে।

শুটকি ব্যবসায়ী মোঃ কামাল বলেন, এখানে মূলত উচ্চমানের সামুদ্রিক মাছ দিয়েই শুঁটকি তৈরি করা হয়। এ কারণে নাজিরারটেকের শুঁটকির চাহিদা বিদেশেও অনেক বেশি।

নারী শ্রমিক সুফিয়া বেগম বলেন, ভোরে বাসা থেকে এসে সারাদিন মাছ ধুয়ে মাচায় দিই। কাজটা কষ্টের, কিন্তু মৌসুমে ভালো আয় হয়। এই আয়েই সংসার চলে।

শ্রমিক সুখলাল জলদাস জানান, গভীর সাগরে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। তবুও মাছ ভালো থাকলে মৌসুমেই আমরা সবচেয়ে বেশি আয় করি।

শ্রমিক সোনিয়া পারভীন বলেন, প্রতিদিন রোদে দাঁড়িয়ে কাজ করতে হয়। কিন্তু এটাই আমাদের জীবিকা। এখানে নারীদের সুযোগ বেশি—এটাই বড় অর্জন।

বাজারে বিপুল চাহিদা থাকায় স্থানীয় বাজারে শুঁটকির কেজিপ্রতি দাম— লইট্যা ৮০০–১,৪০০ টাকা, ছুরি ৮০০–১,৮০০ টাকা, চিংড়ি ১,০০০–২,০০০ টাকা, মাইট্যা ৮০০–১,৬০০ টাকা, কোরাল ১,৫০০–২,০০০ টাকা, রূপচাঁদা ১,৮০০–২,৫০০ টাকা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ বছর উৎপাদন আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

কক্সবাজার মৎস্য ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের সভাপতি ওসমান গণি টুলু বলেন, গত বছর পোঁয়া শুঁটকি রপ্তানিতে ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকার আয় হয়েছিল। এ বছর উৎপাদন ভালো থাকলে রফতানি আয় ৪০০ কোটি টাকায় পৌঁছাতে পারে।

কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো: নাজমুল হুদা বলেন, শুঁটকি উৎপাদনকে সম্পূর্ণ বিষমুক্ত করতে আমরা প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি সহায়তা বাড়াচ্ছি। খুব শিগগিরই ১০০ শতাংশ বিষমুক্ত শুঁটকি উৎপাদন সম্ভব হবে।

জেলা প্রশাসক এম এ মান্নান বলেন, পর্যটকদের কাছে শুঁটকি অত্যন্ত জনপ্রিয়। তাই নাজিরারটেকে তদারকি বাড়ানো হয়েছে। উৎপাদন পরিবেশ, স্বাস্থ্যবিধি ও গুণগত মান নিশ্চিত করতে নিয়মিত মনিটরিং সংশ্লিষ্ট দপ্তর।

নিজস্ব প্রতিনিধি: চট্টগ্রামের স্থানীয় ও কক্সবাজারে ভ্রমণে আসা পর্যটকদের পছন্দের শীর্ষে থাকা শুটকি মাছের চাহিদার আলোকে, কক্সবাজারের নাজিরারটেক এখন পরিণত হয়েছে দেশের সবচেয়ে ব্যস্ত ও বৃহত্তম শুঁটকি উৎপাদন মহালে। ভোর থেকেই উপকূলজুড়ে শুরু হয় মাছ ধোয়া, কাটা, মাচায় সাজানো আর শুকানোর কর্মযজ্ঞ। নভেম্বরের শুরুতেই উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা—এ মৌসুমে শুঁটকি রফতানিতে নতুন রেকর্ড গড়বে কক্সবাজার।

কক্সবাজার জেলার সমুদ্রতীরবর্তী প্রায় ১০০ একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত নাজিরারটেক শুঁটকি মহাল। এখানে কাজ করেন প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক, যার বড় অংশই নারী। প্রতিদিন সমুদ্র থেকে ধরা তাজা মাছ এনে ধোয়া–মোছা করে বাঁশের মাচায় ৩–৪ দিন ধরে প্রাকৃতিক সূর্যের তাপে শুকানো হয়। শুষ্ক মৌসুমে নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সবচেয়ে ব্যস্ত সময় হলেও বৃষ্টি না থাকলে সারা বছরই কিছু উৎপাদন চলে।

শুটকি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, নাজিরারটেকে প্রতি মৌসুমে ৫০–৬০ হাজার মেট্রিক টন শুঁটকি উৎপাদিত হয়, যার বাজারমূল্য চারশত কোটি টাকারও বেশি। উৎপাদিত শুঁটকি দেশের বাজারে সরবরাহের পাশাপাশি হংকং, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা ও মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে রফতানি হয়।

নাজিরারটেক ছাড়াও নুনিয়ারছড়া, খুরুশকুল, মহেশখালী, চৌফলদণ্ডী, সোনাদিয়া, উখিয়া, কুতুবদিয়া, মগনামা, টেকনাফ ও সেন্টমার্টিনের অন্তত ৩০০ শুঁটকি মহালে সমানতালে উৎপাদন চলছে। এসব মিলিয়ে কক্সবাজার জেলায় শুঁটকি উৎপাদন দেশের মোট উৎপাদনের বড় অংশজুড়ে রয়েছে।

মহালের ৫০–৬০টি আড়তে প্রতিদিন চিংড়ি, রূপচাঁদা, ছুরি, কোরাল, সুরমা, লইট্যা, পোপা, টেকচাঁদা, হাঙর, ফাইস্যা ও নাইল্যা মাছসহ প্রায় ২৫–৩০ প্রজাতির মাছ শুকানো হয়। গভীর সমুদ্র থেকে ধরা এসব মাছ এনে জেলেরা বিক্রি করে যান মহালে।

শুটকি ব্যবসায়ী মোঃ কামাল বলেন, এখানে মূলত উচ্চমানের সামুদ্রিক মাছ দিয়েই শুঁটকি তৈরি করা হয়। এ কারণে নাজিরারটেকের শুঁটকির চাহিদা বিদেশেও অনেক বেশি।

নারী শ্রমিক সুফিয়া বেগম বলেন, ভোরে বাসা থেকে এসে সারাদিন মাছ ধুয়ে মাচায় দিই। কাজটা কষ্টের, কিন্তু মৌসুমে ভালো আয় হয়। এই আয়েই সংসার চলে।

শ্রমিক সুখলাল জলদাস জানান, গভীর সাগরে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। তবুও মাছ ভালো থাকলে মৌসুমেই আমরা সবচেয়ে বেশি আয় করি।

শ্রমিক সোনিয়া পারভীন বলেন, প্রতিদিন রোদে দাঁড়িয়ে কাজ করতে হয়। কিন্তু এটাই আমাদের জীবিকা। এখানে নারীদের সুযোগ বেশি—এটাই বড় অর্জন।

বাজারে বিপুল চাহিদা থাকায় স্থানীয় বাজারে শুঁটকির কেজিপ্রতি দাম— লইট্যা ৮০০–১,৪০০ টাকা, ছুরি ৮০০–১,৮০০ টাকা, চিংড়ি ১,০০০–২,০০০ টাকা, মাইট্যা ৮০০–১,৬০০ টাকা, কোরাল ১,৫০০–২,০০০ টাকা, রূপচাঁদা ১,৮০০–২,৫০০ টাকা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ বছর উৎপাদন আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

কক্সবাজার মৎস্য ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের সভাপতি ওসমান গণি টুলু বলেন, গত বছর পোঁয়া শুঁটকি রপ্তানিতে ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকার আয় হয়েছিল। এ বছর উৎপাদন ভালো থাকলে রফতানি আয় ৪০০ কোটি টাকায় পৌঁছাতে পারে।

কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো: নাজমুল হুদা বলেন, শুঁটকি উৎপাদনকে সম্পূর্ণ বিষমুক্ত করতে আমরা প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি সহায়তা বাড়াচ্ছি। খুব শিগগিরই ১০০ শতাংশ বিষমুক্ত শুঁটকি উৎপাদন সম্ভব হবে।

জেলা প্রশাসক এম এ মান্নান বলেন, পর্যটকদের কাছে শুঁটকি অত্যন্ত জনপ্রিয়। তাই নাজিরারটেকে তদারকি বাড়ানো হয়েছে। উৎপাদন পরিবেশ, স্বাস্থ্যবিধি ও গুণগত মান নিশ্চিত করতে নিয়মিত মনিটরিং সংশ্লিষ্ট দপ্তর।