মুন্নি আক্তার,নগর প্রতিবেদক: পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে প্লাস্টিকমুক্ত ক্যাম্পাস ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছেন। আজ রাজধানীর তার নিজস্ব বাসভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে নগরের রেডিসন ব্লু চাটগাঁ বে ভিউতে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত “টেকসই প্লাস্টিকমুক্ত সামুদ্রিক পরিবেশ” শীর্ষক ” অ্যাওয়ারনেস বিল্ডিং অ্যান্ড ডিসেমিনেশন ক্যাম্পেইন” -এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থী সম্পৃক্ততা, সচেতনতা কার্যক্রম এবং সহজলভ্য বিকল্প সরবরাহের মাধ্যমে এটি বাস্তবায়ন করতে হবে। তিনি বিশেষ করে মেয়েদের কাগজ, পাট বা কাপড়ের ব্যাগ তৈরি কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করার পরামর্শ দেন। সুবিধানির্ভর সংস্কৃতি ত্যাগ করে নতুন প্রজন্ম এগিয়ে এলে তা শুধু প্লাস্টিক দূষণ কমাবে না; পাটসহ স্থানীয় শিল্প পুনরুজ্জীবিত করবে, জাতীয় অর্থনীতি শক্তিশালী করবে এবং পরিবেশবান্ধব উৎপাদন ব্যবস্থাকে উৎসাহিত করবে।
উপদেষ্টা বলেন, প্লাস্টিকের ব্যবহার থেকে টেকসই বিকল্পে যেতে সময়, পরিশ্রম এবং ভোক্তাদের আচরণগত পরিবর্তন অপরিহার্য। গত কয়েক দশকে গড়ে ওঠা ভোক্তা-অভ্যাস রাতারাতি পরিবর্তন সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক ও এ ধরনের অপ্রয়োজনীয় প্লাস্টিক সামগ্রী বাদ দিয়ে প্লাস্টিকমুক্ত ক্যাম্পাস গড়ে তুলতেও দীর্ঘমেয়াদি প্রাতিষ্ঠানিক অঙ্গীকার প্রয়োজন। একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের বিস্তৃত ব্যবহারের বিষয়ে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ভোক্তাদের প্লাস্টিকনির্ভরতা মূলত সুবিধা এবং “ফ্রি” ধারণাজনিত ভুল বোঝাবুঝির ফল। বাস্তবে, প্লাস্টিক উৎপাদনে শ্রম, বিদ্যুৎ, আমদানিকৃত যন্ত্রপাতি ও কাঁচামালসহ নানা খরচ জড়িত থাকে, যার গোপন মূল্য পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থাকেই দিতে হয়।
রিজওয়ানা হাসান চার বছর মেয়াদি প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য আয়োজক প্রতিষ্ঠানকে প্রশংসা করেন এবং প্রকল্পের সম্প্রসারণ পরিকল্পনাকে স্বাগত জানান।
তিনি বলেন, আজ শিক্ষার্থীদের মাঝে যে পরিবেশশিক্ষা দেওয়া হচ্ছে, তা ভবিষ্যতের পরিবেশগত ফলাফল নির্ধারণ করবে। অতীত প্রজন্মের টেকসই জীবনধারা এবং একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক ত্যাগের আর্থনৈতিক ও পরিবেশগত সুফল সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের জানানো অত্যন্ত জরুরি।
উপদেষ্টা জানান, বর্তমানে অধিকাংশ একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক সামগ্রীর বিকল্প বিদ্যমান, যদিও ডিসপোজেবল কলমের মতো কিছু পণ্যের সম্পূর্ণ টেকসই বিকল্প এখনও উন্নয়নাধীন। বাংলাদেশের রয়েছে পাট, কাপড়সহ সহজলভ্য স্থানীয় উপাদান, যা দৈনন্দিন জীবনে প্লাস্টিকের কার্যকর বিকল্প হতে পারে। শিক্ষার্থীদের বিকল্প ব্যবহারে ক্রমবর্ধমান আগ্রহকে তিনি ভবিষ্যতের জন্য ইতিবাচক হিসেবে উল্লেখ করেন।
বঙ্গোপসাগর বিশ্বের নবম সর্বাধিক প্লাস্টিকদূষিত সামুদ্রিক অঞ্চল হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে উপদেষ্টা বলেন, এটি বাংলাদেশে অতিরিক্ত প্লাস্টিক ব্যবহারের কারণে নয়; বরং দুর্বল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও উজান থেকে ভেসে আসা প্লাস্টিক বর্জ্যের ফল। তিনি সতর্ক করে বলেন, পুনর্ব্যবহার (রিসাইক্লিং) সমাধান হিসেবে জনপ্রিয় হলেও এটি অত্যন্ত জ্বালানি-নির্ভর ও রাসায়নিকভাবে জটিল। তাই প্লাস্টিক ব্যবহার কমানো, প্লাস্টিক পণ্য পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলা এবং উৎপাদকদের দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করাই অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।
অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- প্রফেসর ড. মাহমুদ আব্দুল মতিন ভূঁইয়া, উপাচার্য, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) এবং প্রফেসর ড. মো. মাকসুদ হেলালী, উপাচার্য, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট)।
স্পেশাল গেস্ট হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রফেসর ড. আসিফুল হক, ডিন, সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ, চুয়েট; ড. ফাহমিদা খানম, অতিরিক্ত সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়; এবং প্রফেসর ড. মো. রিয়াজ আকতার মল্লিক, ।
অনুষ্ঠানের চিফ প্যাট্রন ছিলেন- প্রফেসর ড.-ইং. একহার্ড ক্রাফট, প্রকল্প পরিচালক, SCIP Plastics Project, বাউহাউস-ইউনিভার্সিটাট ভাইমার (BUW), জার্মানি; এবং সেশনটি সভাপতিত্ব করেন প্রফেসর ড. ম. ফারজানা রহমান জুথি, সায়েন্টিফিক ডিরেক্টর, SCIP Plastics Project, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, চুয়েট।




