ঢাকা অফিস: “নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে ইসির এখন কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। আমাদের প্রস্তুতি শতভাগ সম্পন্ন।আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহে নির্বাচন করার জন্য আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুত।” আজ শুক্রবার(০৭ নভেম্বর) বাসসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে নির্বাচন কমিশনের জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কর্মকর্তা কমিশনার আব্দুর রহমান মাছউদ এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, বিদেশ থেকে আনা ভোটের কালি এসে পৌঁছেছ-নির্বাচন প্রস্তুতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ভোটের আগে প্রয়োজনীয় প্রায় সব মৌলিক কাজ শেষ হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, “শান্তিপূর্ণ পরিবেশ শুধু নির্বাচনের জন্য নয়, দেশের উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার জন্যও জরুরি। রাজনৈতিক দলগুলো প্রার্থী ঘোষণা করার পর থেকেই ভোটের আমেজ তৈরি হয়েছে। সবাই মাঠে নামলে পরিস্থিতি আরও ভালো হবে।”
তিনি আরও বলেন, “আগামী জাতীয় নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচিত সরকার ও গণতান্ত্রিক ধারার প্রবর্তন ছাড়া স্থিতিশীলতা ও টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই এবারের নির্বাচন অবশ্যই সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হতে হবে।”
তিনি উল্লেখ করেন, পূর্ববর্তী নির্বাচনে অনিয়মের কারণে জনগণের মধ্যে যে অনাস্থা তৈরি হয়েছে, তা কাটিয়ে ওঠাই কমিশনের প্রধান লক্ষ্য।“ভালো নির্বাচন করা ছাড়া বিকল্প নেই। জাতির স্বার্থে আমাদের অবশ্যই সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। এবারের ভোটকে জনগণের উৎসবে পরিণত করাই লক্ষ্য,” বলেন তিনি।
ইসি সচিবালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, নির্বাচনী সামগ্রী সংগ্রহ, আইন সংশোধন ও ভোটার তালিকা হালনাগাদসহ মৌলিক প্রস্তুতির কাজ নভেম্বরের মধ্যেই শেষ হবে। ডিসেম্বরের শুরুতে তফসিল ঘোষণার আগেই সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে।
ইসির সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোট ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৭৬ লাখ ১২ হাজার ৩৮৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৪৭ লাখ ৬০ হাজার ৩৮২ জন, নারী ভোটার ৬ কোটি ২৮ লাখ ৫০ হাজার ৭৭২ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ১ হাজার ২৩০ জন। সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দুই মাসে ভোটার বেড়েছে ১৩ লাখ ৪ হাজার ৮৮০ জন।
ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ জানান, আগামী ১৮ নভেম্বর প্রকাশিত হবে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা। এর আগে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত দাবি-আপত্তি জানানো যাবে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচনী আইন সংশোধনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সরকার গত ৩ নভেম্বর ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন অধ্যাদেশ, ২০২৫’ এর গেজেট প্রকাশ করেছে।
নতুন সংশোধনের মূল দিকগুলো হলো- আদালত ঘোষিত ফেরারি আসামি প্রার্থী হতে পারবেন না,আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সেনা, নৌ, বিমান ও কোস্টগার্ড অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। একক প্রার্থীর আসনে ‘না ভোট’ পুনরায় চালু,২৬৮সমান ভোট পেলে লটারির পরিবর্তে পুনঃভোট,জোটগত নির্বাচনে নিজ দলের প্রতীকে ভোট বাধ্যতামূলক, নির্বাচনী জামানত ৫০ হাজার টাকা,আচরণবিধি লঙ্ঘনের শাস্তি দেড় লাখ টাকা জরিমানা বা ছয় মাস কারাদণ্ড,অনিয়ম প্রমাণিত হলে পুরো আসনের ভোট বাতিলের ক্ষমতা ইসির হাতে,পোস্টাল ভোটে আইটি সাপোর্ট ও এআই অনিয়মকে নির্বাচনী অপরাধ হিসেবে গণ্য, হলফনামায় অসত্য তথ্য দিলে নির্বাচন পরবর্তী ব্যবস্থার সুযোগ।
এছাড়া নতুন তিনটি রাজনৈতিক দল-জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্ক্সবাদী) ও বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টিকে নিবন্ধন দিয়েছে ইসি। তিন দলের প্রতীক যথাক্রমে ‘শাপলা কলি’, ‘কাঁচি’ ও ‘হ্যান্ডশেক’।
ইসি চূড়ান্তভাবে ৩০০ আসনে ৪২ হাজার ৭৬১টি ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ করেছে। এসব কেন্দ্রে পুরুষদের জন্য ১ লাখ ১৫ হাজার ১৩৭টি ও নারীদের জন্য ১ লাখ ২৯ হাজার ৬০২টি ভোটকক্ষসহ মোট ২ লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৯টি কক্ষ থাকবে।
প্রবাসীদের জন্য এবার প্রথমবারের মতো পোস্টাল ভোটিংয়ের সুযোগ থাকছে। এ উদ্দেশ্যে ‘পোস্টাল ভোট রেজিস্ট্রেশন অ্যাপ’ চালু করা হবে ১৬ নভেম্বর। নিবন্ধনের সময়সীমা উদ্বোধনের দিন ঘোষণা করা হবে।
আগামী সপ্তাহ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচনী সংলাপ শুরু হতে পারে বলে ইসি সূত্রে জানা গেছে। সংলাপে দলগুলোকে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিতে সহযোগিতার আহ্বান জানানো হবে।
জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমান মাছউদ বলেন, “আমরা চাই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন একটি গণতান্ত্রিক উৎসবে পরিণত হোক। জনগণ যেন স্বাধীনভাবে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে-এটাই আমাদের মূল লক্ষ্য।”




