মিজবাউল হক, চকরিয়া : কক্সবাজারের চকরিয়ায় প্রবাসী সিরাজুল ইসলাম হত্যার ঘটনায় ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় আরও ৮-১০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করা হয়েছে।আজ মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সিরাজুল ইসলামের পিতা ওমর আলী বাদী হয়ে এ মামলাটি করেন। গত ২৫ অক্টোবর বিকাল ২টার দিকে চকরিয়া উপজেলার চিরিঙ্গা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের চারা বটতলী এলাকায় জাহাঙ্গীর আলম বাহিনীর হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান সিরাজ।
এরই মধ্যে চিংড়িজোনের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে খুনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে নুর মোহাম্মদ মানিক ওরফে মানিক্কা (৪৫) ও কুতুবউদ্দিন (২৬) নামের দুই সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এসময় মানিক্কার কাছ থেকে একটি দেশে তৈরি বন্দুক উদ্ধার করা হয়েছে।
এদিকে সিরাজুল ইসলাম হত্যার ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক লুটপাট চালাচ্ছে প্রতিপক্ষের লোকজন। গত দু’দিনে বাড়ি ভাঙচুর, গরু-ছাগল ও আসবাবপত্র লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। মারধর করছেন আসামী পক্ষের লোকজনদেরকে। ভয় ও আতঙ্কে এলাকা ছাড়ছেন নারী পুরুষ। এক ধরণের পুরুষ শুন্য হয়ে পড়েছে সওদাগরঘোণা।
জানা যায়, চকরিয়া উপজেলার চিরিঙ্গা ইউনিয়নের চিংড়িজোন খ্যাত চরণদ্বীপ ও রামপুর মৌজায় জাহাঙ্গীর আলম ও নেজাম উদ্দিন গ্রুপের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে স্থানীয় এলাকাবাসী। এই দুই গ্রুপকে নিয়মিত চাঁদা দিতে হয় ঘের মালিকদের। চিংড়িঘের দখল ও ঘের মালিকদের কাছ থেকে চাঁদা তোলা নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে নিয়মিতভাবে। গত একছরে অর্ধশতাধিক সংঘর্ষ হয়েছে দু’পক্ষের মধ্যে। প্রাণ গেছে ৬-৭ জনের মতো। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরবতাকে অনেকে দুষছেন।
গতবছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বৈধ এবং অবৈধ চিংড়িঘের দখল-বেদখল নিয়ে একাধিক সশস্ত্র গ্রুপের উত্থান ঘটে। দীর্ঘদিন ধরে গ্রুপগুলোর মধ্যে চলে আসছিলো চরম দ্বন্ধ। ইতোমধ্যে চিংড়িঘের দখল বেদখলের ঘটনায় গ্রুপ গুলোর মধ্যে ৫-৬টি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে উপ গ্রুপ গুলো অবৈধ অস্ত্রের মহড়া দিচ্ছেন নিয়মিতভাবে। তাদের বেপরোয়ায় আচরণে প্রাণ যাচ্ছে সাধারণ মানুষের।
৫ আগস্ট সরকারের পট পরিবর্তনের পর জাহাঙ্গীর আলম গ্রুপ থেকে বের হয়ে নেজাম উদ্দিন আলাদা একটি গ্রুপ তৈরি করে। দু’গ্রুপের সবাই চিরিঙ্গা ইউনিয়নের সওদাগরঘোনা এলাকার বাসিন্দা। দীর্ঘদিন ধরে এই দুই গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। এর জের ধরে গত ২৫ অক্টোবর দুই পক্ষের লোকজনের মধ্যে গোলাগুলি চলে। বিকাল ২টার দিকে চিরিঙ্গা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের সওদাগরঘোনা চারাবটতলী এলাকায় দুইপক্ষের মধ্যে গোলাগুলির একপর্যায়ে নেজাম উদ্দিন গ্রুপের সদস্য সিরাজুল ইসলাম গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।
চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি তদন্ত ইয়াসিন মিয়া বলেন, চিরিঙ্গা ইউনিয়নের সওদাগর এলাকায় প্রতিপক্ষের গুলিতে সিরাজুল ইসলাম হত্যার ঘটনায় ১৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় আরও ৮- ১০ জন অজ্ঞাতনামা আসামী করা হয়েছে। এরমধ্যে দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এজাহারভুক্ত অন্য আসামীদের গ্রেফতারের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।




