দি ক্রাইম ডেস্ক: অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে চট্টগ্রামের হালদা নদীতে রুইজাতীয় মা-মাছেরা ‘সাদা সোনা’ খ্যাত নিষিক্ত ডিম ছেড়েছে। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টা থেকে শুরু হয়ে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ডিম সংগ্রহ চলে। বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেও রেকর্ড পরিমাণ ডিম সংগ্রহ হয়েছে—যা গত বছরের তুলনায় ৮-৯ গুণ বেশি বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
ডিম সংগ্রহ উপলক্ষ্যে নদীর দুই পাড়ে উত্সবের আমেজ তৈরি হয়েছিল। মদুনাঘাট থেকে শুরু করে রামদাশ মুন্সিরহাট, আমতুয়া, আজিমের ঘাট, মাচুয়া গোনা, অঙ্কুরিঘোনা, কাগতিয়া, কেরামতালি পর্যন্ত প্রায় ২৫০টি নৌকায় ৫৫০ জনের বেশি ডিম সংগ্রহকারী একযোগে সংগ্রহে অংশ নেন। এবার প্রায় ১৪ হাজার কেজি নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক ড. মো. মনজুরুল কিবরিয়া জানান, বৃহস্পতিবার রাত ২টা থেকে শুরু হওয়া এই ডিম ছাড়ার ঘটনা হালদা নদীর জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। নদীর প্রায় সব স্পটে ডিম পাওয়া গেছে।
রাউজান সিনিয়র উপজেলা মত্স্য কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন আজাদী বলেন, অনুকূল আবহাওয়া থাকায় এ বছর রেকর্ডসংখ্যক ডিম সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। প্রায় ১৪ হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ হয়েছে, যা পরবর্তী সময় হ্যাচারিতে রেণু উত্পাদনে ব্যবহূত হচ্ছে।
এদিকে স্থানীয় প্রবীণ সংগ্রহকারী উদয়ন বড়ুয়া বলেন, বছরের পর বছর এমন দৃশ্য দেখিনি। কষ্ট হলেও এমন পরিমাণ ডিম পেয়ে আমরা খুবই খুশি। একই সঙ্গে মো. সোহেল ও মো. হাসানসহ অনেকে জানান, তারা নিজ নিজ এলাকায় পাঁচ-ছয়টি নৌকা ব্যবহার করে ২০-৩০ বালতি পর্যন্ত ডিম সংগ্রহ করতে পেরেছেন।
চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও হালদা গবেষক ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, জোয়ারের সময় আমতুয়া অংশে মা-মাছ ডিম ছাড়ে এবং তা নদীর বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে। যারা আগে নদীতে অবস্থান নিয়েছিলেন, তারা সবচেয়ে বেশি ডিম সংগ্রহে সক্ষম হয়েছেন। হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির তথ্য অনুযায়ী, গত ১১ বছরের মধ্যে ২০২০ সালে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি ডিম সংগ্রহ হয়েছিল। চলতি বছর সেই রেকর্ড ছুঁতে না পারলেও ডিমের পরিমাণ সন্তোষজনক বলে মন্তব্য করেছেন গবেষকরা।
বর্তমানে নদীর পাড়ে স্থাপিত সরকারি ও ব্যক্তিগত হ্যাচারিগুলোতে রেণু উত্পাদনের কাজ চলছে পুরোদমে। সরকার, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, নৌ পুলিশ এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ ব্যবস্থাপনায় ডিম সংগ্রহ ও পরিবেশ মনিটরিং অব্যাহত রয়েছে।