*পরিকল্পনা নিয়ন্ত্রন হয় নগরী-পারকি বিচে বসে

*দ্রুত পাচার হয় ইয়াবার চালান

*অধরা জড়িতরা

বিশেষ প্রতিনিধি: চট্টগ্রাম শহরের পতেঙ্গা ও আনোয়ারার সমুদ্র উপকূলকে কেন্দ্র করে অবিশ্বাস্যভাবে বেড়ে চলেছে চোরাচালান ব্যবসা। স্রোতের মতো খালাস হচ্ছে বড় বড় ইয়াবার চালান। নগরীর পতেঙ্গা ও আনোয়ারার পর একইভাবে কর্ণফুলী উপজেলাকে ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

সমুদ্র উপকুলের এই দুই উপজেলা হচ্ছে চট্টগ্রাম শহরের একেবারে লাগোয়া। বলতে গেলে একুল- অকুল। ইয়াবাসহ নানা চোরাচালান পণ্য খালাস হওয়ার পর চট্টগ্রাম শহরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে দ্রুত পাচার করে দেয়া হচ্ছে। পুলিশি অভিযান ঝিমিয়ে পড়ার সুযোগ কাজে লাগানো হচ্ছে ইয়াবা পাচারে। চিহ্নিত চোরাচালান ব্যবসায়ীরা মিয়ানমানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে মাদকসহ নানা পণ্য নিয়ে আসছে পতেঙ্গা আনোয়ারার সমুদ্র উপকুলীয় গহিরা বরুমচড়া ও কর্ণফুলী এলাকায়। স্থলপথেও আনা হচ্ছে। আইন শৃংখলা বাহিনীর নজরদারী কঠোর হলে আনোয়ারা উপকূল বাদ দিয়ে দ্রুত নগরীর পতেঙ্গা দিয়ে নিরাপদে খালাস করা হচ্ছে মাদকের বড় বড় চালান। খালাস হওয়ার পর সুযোগ বুঝে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় স্থানে দ্রুত পাচার করে দেয়া হচ্ছে।তবে আইন শৃংখলাবাহিনীও বসে নেই খবর ফেলে তারাও অভিযান পরিচালনা করছে। ধরা পড়ছে ইয়াবাসহ জড়িত মাদক ব্যবসায়ীরা। এধরনের একটি খবর পেয়ে নগরীর চান্দগাঁও থানার খরমপাড়ায় র‌্যাবের একটি দল অভিযান চালিয়ে ৭হাজার ৮৩০পিস ইয়াবাসহ আলমগীর নামের এক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়। যার আনুমানিক মূল্য সাড়ে ২৩ লক্ষ টাকা। তার বাড়ি আনোয়ারা উপজেলার চাপাতলী গ্রামে।

গত বুধবার(১২-৬-২৪) বিকেল ৪টার দিকে খরমপাড়ার একটি ফ্ল্যাট বাড়ি থেকে ইয়াবাসহ আলমগীরকে গ্রেফতার করা হয় বলে র‌্যাব সুত্র জানিয়েছে। ধৃত মোঃ আলমগীর স্থানীয় চাপাতলী গ্রামের মৃত মোঃ ইউনুছ এর পুত্র। ধারনা করা হচ্ছে ছোট আকারের ইয়াবার এই চালান আনোয়ারা উপকূলের গহিরা কিংবা পারকি থেকে চট্টগ্রাম শহরে নিয়ে আসে এই আলমগীর। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে চাঞ্চল্যকর গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য বের হয়ে আসবে বলে একটি নির্ভরযোগ্য সুত্র জানিয়েছে। আন্তর্জাতিক মাফিয়া চক্রের এদেশীয় এজেন্ট হিসেবে উপকূলীয় এলাকার দুই চেয়ারম্যান জড়িত বলে জানা গেছে।

সুত্র জানায়, বেশ কয়েক বছর আগে র‌্যাপিড এ্যাকশান ব্যাটেলিয়ান র‌্যাব উপকূলীয় গহিরার অদুরে বঙ্গোপসাগরে অভিযান চালিয়ে বড় ধরনের একটি ইয়াবার চালান জব্দ করা হয়। শক্তিশালী ইঞ্জিন বোটে করে পাশের দেশ মিয়ানমান থেকে বঙ্গোপসাগর হয়ে আনোয়ারার সমুদ্র উপকুল গহিরায় ইয়াবার বিশাল এই চালান খালাস করার কথা ছিল। তার আগেই র‌্যাবের অভিযানে ধরা পড়ে ইয়াবার বিশাল এই চালান।

বোটে থাকা বেশ কয়েকজন বহনকারীও গ্রেফতার হয় তখন। জিজ্ঞাসাবাদে এসব লোকজন স্বীকার করে জানায়, ইয়াবার মালিক মোজাহের সওদাগর ও নুন জলিল নামের দুই ব্যক্তি। তাদের স্বীকারোক্তি মতে র‌্যাব দল নগরীর সুগন্ধা আবাসিক এলাকায় অভিযান চালিয়ে চোরাকারবারি মোজাহের সওদাগরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। তার বাড়ি আনোয়ারার গহিরা এলাকায়। অপর চোরাকারবারি নুন জলিল র‌্যাবের অভিযানের খবর টের পেয়ে বিদেশে পালিয়ে যায়। নুন জলিল বর্তমানে আমেরিকায় অবস্থান করছে বলে একটি সুত্র নিশ্চিত করেছে। এই দুইজনের বাড়ি আনোয়ারা সমুদ উপকূলীয় গহিরা এলাকায়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে এতো বড় মাদকের চালান আর আটক হয়নি। যার বাজার মূল্য পাঁচশ’ কোটি টাকার উপরে। আটক হওয়ার পর খবর পেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল র‌্যাবের তৎকালিন ডিজি বেনজীর আহমদসহ সরকারী প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে ছুটে আসেন। এঘটনার পর চট্টগ্রামে আর বড় ধরনের কোন ইয়াবা কিংবা অন্য কোন মাদকের চালান ধরা পড়েনি বলে জানা গেছে। ইয়াবার এতো বড় চালান আটক হওয়ার পরও এই ব্যবসার লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছেনা।

প্রায় সময় ছোটখাট ইয়াবার চালানে বহনকারী চুনোপুটিরা ধরা পড়লেও আসল রাঘব বোয়ালরা থেকে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। তাদের গ্রেফতার করা যাচ্ছেনা। পাশের দেশ মিয়ানমার থেকে কৌশলে সীমান্ত ও সমুদ্র পথে এই ব্যবসা দিনদিন জোরদার করা হচ্ছে। বিভিন্ন বাহনে করে চট্টগ্রাম শহরের পতেঙ্গা আনোয়ারা পটিয়া কিংবা কর্ণফুলী উপজেলার বিভিন্ন নিরাপদ স্থানে খালাস করা হচ্ছে। গ্রামে কিংবা চট্টগ্রাম মহানগরীর এমন কোন জায়গা নেই যেখানে প্রকাশ্যে গোপনে মাদক বিক্রি করা হচ্ছেনা। যুব সমাজ আজ মাদকে আসক্ত হয়ে ধংসের পথে। নগরীর ফিশারী ঘাটে প্রকাশ্যে বিকিকিনি ও মাদকের হাট বসে।

সদরঘাট, ষ্টেশন রোড ও আগ্রাবাদ এলাকার বেশ কয়েকটি আবাসিক হোটেলে অবৈধ মদের বার খুলে ছুটিয়ে ব্যবসা করা হচ্ছে। গ্রামে এবং নগরীতে হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে ইয়াবাসহ হরেক রকমের মাদক। তবে আইনশৃংখলা বাহিনীও বসে নেই তারা বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে প্রায় সময় মাদক দ্রব্য উদ্ধার করছে। তবে সেটি সীমিত পর্যায়ে। চুনোপুটি বহনকারীরা প্রায় সময় ধরা পড়লেও আসল বড় রাঘববোয়ালরা থেকে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। তারা বিভিন্ন জায়গায় ম্যানেজ করে মাদক ব্যবসা পরিচালনা করছে। দেশের যুব সমাজকে ধংস করে ভাগ্য বদল করে চিহ্নিত এসব চোরাকারবারি বর্তমানে অঢেল সম্পদের মালিক বনে গেছে। গ্রামেগঞ্জে শোনা যাচ্ছে অমুক নেতা অমুক চেয়ারম্যান অঢেল সম্পদ এবং গাড়ি বাড়ির মালিক। থাকেন শহরের আলিশান বাসায়।

সুত্র জানায়, গেল বছরের জানুয়ারী থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত আনোয়ারা থানার পুলিশের তথ্য মতে চোরাচালান মামলা দায়ের হয় ১০১টি। এসব মামলায় ইয়াবা উদ্ধার করা হয় ৮৩ হাজার ৫০৫পিচ, ১২কেজি ২৮০গ্রাম গাঁজা ও ২ হাজার ৭০৯ লিটার মদ উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতার করা হয় ১২৭জনকে।

র‌্যাবের তথ্য মতে, মামলা দায়ের হয় ৬টি উদ্ধার করা হয় ২ লাখ ৫৭হাজার ৩শ’ পিচ ইয়াবা গ্রেফতার করা হয় ৮ জনকে। পতেঙ্গা থানার পুলিশও প্রায় সময় ইয়াবাসহ নানা জাতের মাদক দ্রব্য উদ্ধার জড়িতদের গ্রেফতার করা হচ্ছে বলে জানায়। নগর সিএমপির পুলিশও বিভিন্ন সময়ে অভিযান পরিচালনা করে মাদক দ্রব্য উদ্ধার করছে। একইভাবে চেকপোষ্টের দায়িত্বরত আইন শৃংখলাবাহিনীর সদস্যরাও বিভিন্ন যানবাহনে এবং সন্দেহভাজনদের শরীর তল্লাশি করে ইয়াবাসহ নানাজাতের মাদক দ্রব্য উদ্ধার করছে। তারপরও ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন স্থান ঘুরে চট্টগ্রাম শহরে বড় বড় মাদক ইয়াবার চালান ঢুকে পড়ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। একইভাবে তিন
পার্বত্য অঞ্চল থেকেও আসে দেশীয় বাংলা মদ। এসব মদ চট্টগ্রামসহ জেলা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে খালাস হওয়ার পর খুচরা ও পাইকারী ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে।

চট্টগ্রাম শহরের রেলষ্টেশন, ফিশারী ঘাটে মদের মহালে প্রকাশ্যে আসর বসানো হয়। বিভিন্ন আবাসিক হোটেলগুলোতেও অবৈধভাবে খোলা হয়েছে মদের বার বসানো হয়েছে আসর। চট্টগ্রাম আদালত ভবনের পূর্ব পাশের রঙ্গম টাওয়ারের পাশের এক আবাসিক হোটেলের নিচের ভবনে প্রতিদিন রীতিমতো জুয়া ও মদের আসর বসানো হয়। পুলিশের অনুমতি নিয়ে সেখানে মদ গাঁজা জুয়ার আসর বসানো হয় বলে একটি সুত্র জানায়।

হালিশহরের খাঁজা রোড এলাকার একটি ভবনে সাবেক কাউন্সিলর এর বাড়ির পাশে প্রতিদিন মদ গাঁজা ও জুয়ার আসর বসানো হয় বলে জানা গেছে। ডিস ব্যবসার আড়ালে এই অবৈধ কর্মকান্ড চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

নিরাপদ রুট সিইউএফএল সড়ক

সুত্র জানায়, ইয়াবার চালান মিয়ানমার সীমান্ত পার হয়ে প্রথমে টেকনাফ কিংবা সেন্টমার্টিন হয়ে সমুদ্র পথে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা আনোয়ারা-কর্ণফুলী উপকুলের নিরাপদ স্থানে খালাস করা হচ্ছে। সমুদ্র উপকূলের গহিরা প্যারাবন,সাপমারা খালের মুখ ও পারকি সমুদ্র সৈকত দিয়ে বড় বড় ইয়াবার চালান খালাস করা হচ্ছে। তাছাড়া পারকি সমুদ্র সৈকতে রীতিমতো ইয়াবা ও মদের বেচাকেনার হাট বসে। পারকি সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন হোটেলে বসে মদের ব্যবসা নিয়ন্ত্রন করা হচ্ছে। এই মদের ব্যবসা করে অনেকে ফুলে ফেফে উঠেছে বলে একটি সুত্র জানায়। ওই চক্রটি স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কতিপয় অসৎ ব্যক্তিকে বসে নিয়ে কোটি কোটি টাকার ইয়াবার চালান নিরাপদে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। নিয়মিত বিদেশী মদের চালানও আনা হচ্ছে সমুদ্র উপকূলের গহিরা পারকিতে। পুলিশ ও রাজনীতির পদবি ধারী ব্যক্তিরাও এই চোরাচালান ব্যবসায় ভাগ পাচ্ছে বলে চাউর রয়েছে এলাকায়।

ইয়াবার চালান সমুদ্র পথে আসার পর উপকূলের গহিরা পারকি সৈকত এলাকায় খালাস হওয়ার পর সিইউএফএল সড়ককে নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সড়কের পাশে আছে আনোয়ারা থানার রাঙ্গাদিয়া ও কর্ণফুলী থানার দুই পুলিশ ফাঁড়ি। এই দুই ফাঁড়ি পুলিশের সহায়তা পাচ্ছে চোরাচালান চক্র। ম্যানেজ করে ইয়াবা ব্যবসা চালানো হচ্ছে। বড় বড় ইয়াবার চালান নিরাপদে চট্টগ্রাম শহরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। ঈদের বন্ধের এসুযোগ কাজে লাগানোর চেষ্ঠায় আছে চোরাচালান চক্র। যেকোন সময়ে বড় ধরনের মদের চালান খালাস হতে পারে কিংবা সড়ক পথে চট্টগ্রাম শহরে নিয়ে আসা হতে পারে বলে একটি সুত্র নিশ্চিত করেছে।

*পরিকল্পনা নিয়ন্ত্রন হয় নগরী-পারকি বিচে বসে

*দ্রুত পাচার হয় ইয়াবার চালান

*অধরা জড়িতরা

বিশেষ প্রতিনিধি: চট্টগ্রাম শহরের পতেঙ্গা ও আনোয়ারার সমুদ্র উপকূলকে কেন্দ্র করে অবিশ্বাস্যভাবে বেড়ে চলেছে চোরাচালান ব্যবসা। স্রোতের মতো খালাস হচ্ছে বড় বড় ইয়াবার চালান। নগরীর পতেঙ্গা ও আনোয়ারার পর একইভাবে কর্ণফুলী উপজেলাকে ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

সমুদ্র উপকুলের এই দুই উপজেলা হচ্ছে চট্টগ্রাম শহরের একেবারে লাগোয়া। বলতে গেলে একুল- অকুল। ইয়াবাসহ নানা চোরাচালান পণ্য খালাস হওয়ার পর চট্টগ্রাম শহরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে দ্রুত পাচার করে দেয়া হচ্ছে। পুলিশি অভিযান ঝিমিয়ে পড়ার সুযোগ কাজে লাগানো হচ্ছে ইয়াবা পাচারে। চিহ্নিত চোরাচালান ব্যবসায়ীরা মিয়ানমানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে মাদকসহ নানা পণ্য নিয়ে আসছে পতেঙ্গা আনোয়ারার সমুদ্র উপকুলীয় গহিরা বরুমচড়া ও কর্ণফুলী এলাকায়। স্থলপথেও আনা হচ্ছে। আইন শৃংখলা বাহিনীর নজরদারী কঠোর হলে আনোয়ারা উপকূল বাদ দিয়ে দ্রুত নগরীর পতেঙ্গা দিয়ে নিরাপদে খালাস করা হচ্ছে মাদকের বড় বড় চালান। খালাস হওয়ার পর সুযোগ বুঝে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় স্থানে দ্রুত পাচার করে দেয়া হচ্ছে।তবে আইন শৃংখলাবাহিনীও বসে নেই খবর ফেলে তারাও অভিযান পরিচালনা করছে। ধরা পড়ছে ইয়াবাসহ জড়িত মাদক ব্যবসায়ীরা। এধরনের একটি খবর পেয়ে নগরীর চান্দগাঁও থানার খরমপাড়ায় র‌্যাবের একটি দল অভিযান চালিয়ে ৭হাজার ৮৩০পিস ইয়াবাসহ আলমগীর নামের এক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়। যার আনুমানিক মূল্য সাড়ে ২৩ লক্ষ টাকা। তার বাড়ি আনোয়ারা উপজেলার চাপাতলী গ্রামে।

গত বুধবার(১২-৬-২৪) বিকেল ৪টার দিকে খরমপাড়ার একটি ফ্ল্যাট বাড়ি থেকে ইয়াবাসহ আলমগীরকে গ্রেফতার করা হয় বলে র‌্যাব সুত্র জানিয়েছে। ধৃত মোঃ আলমগীর স্থানীয় চাপাতলী গ্রামের মৃত মোঃ ইউনুছ এর পুত্র। ধারনা করা হচ্ছে ছোট আকারের ইয়াবার এই চালান আনোয়ারা উপকূলের গহিরা কিংবা পারকি থেকে চট্টগ্রাম শহরে নিয়ে আসে এই আলমগীর। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে চাঞ্চল্যকর গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য বের হয়ে আসবে বলে একটি নির্ভরযোগ্য সুত্র জানিয়েছে। আন্তর্জাতিক মাফিয়া চক্রের এদেশীয় এজেন্ট হিসেবে উপকূলীয় এলাকার দুই চেয়ারম্যান জড়িত বলে জানা গেছে।

সুত্র জানায়, বেশ কয়েক বছর আগে র‌্যাপিড এ্যাকশান ব্যাটেলিয়ান র‌্যাব উপকূলীয় গহিরার অদুরে বঙ্গোপসাগরে অভিযান চালিয়ে বড় ধরনের একটি ইয়াবার চালান জব্দ করা হয়। শক্তিশালী ইঞ্জিন বোটে করে পাশের দেশ মিয়ানমান থেকে বঙ্গোপসাগর হয়ে আনোয়ারার সমুদ্র উপকুল গহিরায় ইয়াবার বিশাল এই চালান খালাস করার কথা ছিল। তার আগেই র‌্যাবের অভিযানে ধরা পড়ে ইয়াবার বিশাল এই চালান।

বোটে থাকা বেশ কয়েকজন বহনকারীও গ্রেফতার হয় তখন। জিজ্ঞাসাবাদে এসব লোকজন স্বীকার করে জানায়, ইয়াবার মালিক মোজাহের সওদাগর ও নুন জলিল নামের দুই ব্যক্তি। তাদের স্বীকারোক্তি মতে র‌্যাব দল নগরীর সুগন্ধা আবাসিক এলাকায় অভিযান চালিয়ে চোরাকারবারি মোজাহের সওদাগরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। তার বাড়ি আনোয়ারার গহিরা এলাকায়। অপর চোরাকারবারি নুন জলিল র‌্যাবের অভিযানের খবর টের পেয়ে বিদেশে পালিয়ে যায়। নুন জলিল বর্তমানে আমেরিকায় অবস্থান করছে বলে একটি সুত্র নিশ্চিত করেছে। এই দুইজনের বাড়ি আনোয়ারা সমুদ উপকূলীয় গহিরা এলাকায়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে এতো বড় মাদকের চালান আর আটক হয়নি। যার বাজার মূল্য পাঁচশ’ কোটি টাকার উপরে। আটক হওয়ার পর খবর পেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল র‌্যাবের তৎকালিন ডিজি বেনজীর আহমদসহ সরকারী প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে ছুটে আসেন। এঘটনার পর চট্টগ্রামে আর বড় ধরনের কোন ইয়াবা কিংবা অন্য কোন মাদকের চালান ধরা পড়েনি বলে জানা গেছে। ইয়াবার এতো বড় চালান আটক হওয়ার পরও এই ব্যবসার লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছেনা।

প্রায় সময় ছোটখাট ইয়াবার চালানে বহনকারী চুনোপুটিরা ধরা পড়লেও আসল রাঘব বোয়ালরা থেকে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। তাদের গ্রেফতার করা যাচ্ছেনা। পাশের দেশ মিয়ানমার থেকে কৌশলে সীমান্ত ও সমুদ্র পথে এই ব্যবসা দিনদিন জোরদার করা হচ্ছে। বিভিন্ন বাহনে করে চট্টগ্রাম শহরের পতেঙ্গা আনোয়ারা পটিয়া কিংবা কর্ণফুলী উপজেলার বিভিন্ন নিরাপদ স্থানে খালাস করা হচ্ছে। গ্রামে কিংবা চট্টগ্রাম মহানগরীর এমন কোন জায়গা নেই যেখানে প্রকাশ্যে গোপনে মাদক বিক্রি করা হচ্ছেনা। যুব সমাজ আজ মাদকে আসক্ত হয়ে ধংসের পথে। নগরীর ফিশারী ঘাটে প্রকাশ্যে বিকিকিনি ও মাদকের হাট বসে।

সদরঘাট, ষ্টেশন রোড ও আগ্রাবাদ এলাকার বেশ কয়েকটি আবাসিক হোটেলে অবৈধ মদের বার খুলে ছুটিয়ে ব্যবসা করা হচ্ছে। গ্রামে এবং নগরীতে হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে ইয়াবাসহ হরেক রকমের মাদক। তবে আইনশৃংখলা বাহিনীও বসে নেই তারা বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে প্রায় সময় মাদক দ্রব্য উদ্ধার করছে। তবে সেটি সীমিত পর্যায়ে। চুনোপুটি বহনকারীরা প্রায় সময় ধরা পড়লেও আসল বড় রাঘববোয়ালরা থেকে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। তারা বিভিন্ন জায়গায় ম্যানেজ করে মাদক ব্যবসা পরিচালনা করছে। দেশের যুব সমাজকে ধংস করে ভাগ্য বদল করে চিহ্নিত এসব চোরাকারবারি বর্তমানে অঢেল সম্পদের মালিক বনে গেছে। গ্রামেগঞ্জে শোনা যাচ্ছে অমুক নেতা অমুক চেয়ারম্যান অঢেল সম্পদ এবং গাড়ি বাড়ির মালিক। থাকেন শহরের আলিশান বাসায়।

সুত্র জানায়, গেল বছরের জানুয়ারী থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত আনোয়ারা থানার পুলিশের তথ্য মতে চোরাচালান মামলা দায়ের হয় ১০১টি। এসব মামলায় ইয়াবা উদ্ধার করা হয় ৮৩ হাজার ৫০৫পিচ, ১২কেজি ২৮০গ্রাম গাঁজা ও ২ হাজার ৭০৯ লিটার মদ উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতার করা হয় ১২৭জনকে।

র‌্যাবের তথ্য মতে, মামলা দায়ের হয় ৬টি উদ্ধার করা হয় ২ লাখ ৫৭হাজার ৩শ’ পিচ ইয়াবা গ্রেফতার করা হয় ৮ জনকে। পতেঙ্গা থানার পুলিশও প্রায় সময় ইয়াবাসহ নানা জাতের মাদক দ্রব্য উদ্ধার জড়িতদের গ্রেফতার করা হচ্ছে বলে জানায়। নগর সিএমপির পুলিশও বিভিন্ন সময়ে অভিযান পরিচালনা করে মাদক দ্রব্য উদ্ধার করছে। একইভাবে চেকপোষ্টের দায়িত্বরত আইন শৃংখলাবাহিনীর সদস্যরাও বিভিন্ন যানবাহনে এবং সন্দেহভাজনদের শরীর তল্লাশি করে ইয়াবাসহ নানাজাতের মাদক দ্রব্য উদ্ধার করছে। তারপরও ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন স্থান ঘুরে চট্টগ্রাম শহরে বড় বড় মাদক ইয়াবার চালান ঢুকে পড়ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। একইভাবে তিন
পার্বত্য অঞ্চল থেকেও আসে দেশীয় বাংলা মদ। এসব মদ চট্টগ্রামসহ জেলা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে খালাস হওয়ার পর খুচরা ও পাইকারী ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে।

চট্টগ্রাম শহরের রেলষ্টেশন, ফিশারী ঘাটে মদের মহালে প্রকাশ্যে আসর বসানো হয়। বিভিন্ন আবাসিক হোটেলগুলোতেও অবৈধভাবে খোলা হয়েছে মদের বার বসানো হয়েছে আসর। চট্টগ্রাম আদালত ভবনের পূর্ব পাশের রঙ্গম টাওয়ারের পাশের এক আবাসিক হোটেলের নিচের ভবনে প্রতিদিন রীতিমতো জুয়া ও মদের আসর বসানো হয়। পুলিশের অনুমতি নিয়ে সেখানে মদ গাঁজা জুয়ার আসর বসানো হয় বলে একটি সুত্র জানায়।

হালিশহরের খাঁজা রোড এলাকার একটি ভবনে সাবেক কাউন্সিলর এর বাড়ির পাশে প্রতিদিন মদ গাঁজা ও জুয়ার আসর বসানো হয় বলে জানা গেছে। ডিস ব্যবসার আড়ালে এই অবৈধ কর্মকান্ড চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

নিরাপদ রুট সিইউএফএল সড়ক

সুত্র জানায়, ইয়াবার চালান মিয়ানমার সীমান্ত পার হয়ে প্রথমে টেকনাফ কিংবা সেন্টমার্টিন হয়ে সমুদ্র পথে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা আনোয়ারা-কর্ণফুলী উপকুলের নিরাপদ স্থানে খালাস করা হচ্ছে। সমুদ্র উপকূলের গহিরা প্যারাবন,সাপমারা খালের মুখ ও পারকি সমুদ্র সৈকত দিয়ে বড় বড় ইয়াবার চালান খালাস করা হচ্ছে। তাছাড়া পারকি সমুদ্র সৈকতে রীতিমতো ইয়াবা ও মদের বেচাকেনার হাট বসে। পারকি সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন হোটেলে বসে মদের ব্যবসা নিয়ন্ত্রন করা হচ্ছে। এই মদের ব্যবসা করে অনেকে ফুলে ফেফে উঠেছে বলে একটি সুত্র জানায়। ওই চক্রটি স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কতিপয় অসৎ ব্যক্তিকে বসে নিয়ে কোটি কোটি টাকার ইয়াবার চালান নিরাপদে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। নিয়মিত বিদেশী মদের চালানও আনা হচ্ছে সমুদ্র উপকূলের গহিরা পারকিতে। পুলিশ ও রাজনীতির পদবি ধারী ব্যক্তিরাও এই চোরাচালান ব্যবসায় ভাগ পাচ্ছে বলে চাউর রয়েছে এলাকায়।

ইয়াবার চালান সমুদ্র পথে আসার পর উপকূলের গহিরা পারকি সৈকত এলাকায় খালাস হওয়ার পর সিইউএফএল সড়ককে নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সড়কের পাশে আছে আনোয়ারা থানার রাঙ্গাদিয়া ও কর্ণফুলী থানার দুই পুলিশ ফাঁড়ি। এই দুই ফাঁড়ি পুলিশের সহায়তা পাচ্ছে চোরাচালান চক্র। ম্যানেজ করে ইয়াবা ব্যবসা চালানো হচ্ছে। বড় বড় ইয়াবার চালান নিরাপদে চট্টগ্রাম শহরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। ঈদের বন্ধের এসুযোগ কাজে লাগানোর চেষ্ঠায় আছে চোরাচালান চক্র। যেকোন সময়ে বড় ধরনের মদের চালান খালাস হতে পারে কিংবা সড়ক পথে চট্টগ্রাম শহরে নিয়ে আসা হতে পারে বলে একটি সুত্র নিশ্চিত করেছে।