অনুসন্ধাানী প্রতিবেদন———

এস এম আকাশ,বিশেষ প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালে কর্মরত আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা.মো.নাজিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, আর্থিক অনিয়ম,যৌন হয়রানি,ক্ষমতার অপব্যবহার এবং পতিত স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ আমল থেকে অদ্যাবধি রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার সহ গুরুতর বহু অভিযোগ এনে চলতি বছরের ১৭ জুলাই চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার বরাবরে একটি আবেদনপত্র জমা দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক সদস্য শওকত হোসেন (পিপিএম) নামের এক ব্যক্তি এ অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে ডা.নাজিমের বিরুদ্ধে বিস্তারিত তথ্য প্রমাণসহ বিভিন্ন সময়ের নানান ঘটনার বর্ণনা ও বিষয়বস্তু উল্লেখ করে তার স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি জানানো হয়েছে।

অভিযোগকারী শওকত হোসেনের অভিযোগ মতে, ডা.নাজিম উদ্দিন ছাত্রজীবন থেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন এবং পরবর্তীতে চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাচিপের সক্রিয় সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন।

অভিযোগে বলা হয়,তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে চট্টগ্রাম ইউএসটিসিতে প্রবেশে বাধা দেওয়ার ক্ষেত্রে উল্লেখ যোগ্য ও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন।

ওভার ফোনে অভিযোগকারী শওগত হোসেনের সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনি বর্তমানে চট্টগ্রামে নেই এবং তিনি এই অভিযোগের বিষয়ে কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এক পর্যায়ে বলে বসেন এমনও হতে পারে উক্ত অভিযোগ খানা আমি নাও করতে পারি আমার নাম ব্যবহার করে অন্য কেউ এমনটা করতে পারে বলে বিষয়টাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে রেখেছেন। তা ছাড়া এবিষয়ে তার সাথে যোগাযোগও করতে মানা করেছেন।

আর্থিক দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার

অভিযোগ পত্রে ডা.নাজিমের বিরুদ্ধে একাধিক আর্থিক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে অসুস্থ পুলিশ সদস্যদের ছুটি দিয়ে টাকা আদায়,মিথ্যা মেডিক্যাল সার্টিফিকেট ইস্যু, এবং বিভিন্ন কোর্সে ভুয়া সনদ দিয়ে টাকা আদায় করা। এছাড়াও সরকারি হাসপাতালের রোগী বেসরকারি ক্লিনিকে পাঠিয়ে কমিশন আদায় এবং বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক ল্যাব থেকে কমিশন নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

অভিযুক্ত কর্মকর্তা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে থাকাকালীন তার বিরুদ্ধে গুরুতর অসংখ্য অনিয়মের অভিযোগ ওঠে । হাইতিতে BANFPU-3 (Rotation-6) মিশন থেকে ফেরার সময় তার লাগেজ থেকে বিপুল পরিমাণ ঔষধ ও হাসপাতালের যন্ত্রপাতি জব্দ করা হয়, যার আনুমানিক মূল্য ছিল ৮৪,৮১৬ টাকা। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করে এবং একটি ব্যাখ্যা তলব নোটিশও জারি করা হয়।

তবে অভিযোগকারী দাবি করেন, তৎকালীন স্বরাষ্ট্র সচিবের সহায়তায় এবং আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে সেই তদন্ত আলোর মুখ দেখেনি। আচার্যের বিষয় হলো জনৈক ডা.নাজিমের মূল কর্মস্থল রাজশাহীর সারদা পুলিশ একাডেমী হাসপাতাল হলেও,তিনি চাকুরি জীবনের বেশিরভাগ সময়ই রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালে প্রেষণে বা সুকৌশলে কর্মরত ছিলেন। এমনকি করোনা মহামারীর সময়ে সারদা পুলিশ একাডেমীতে তীব্র চিকিৎসক সংকট থাকা সত্ত্বেও তাকে মূল কর্মস্থলে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি বা পারনি সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর।

সহকর্মীদের অনাস্থা ও শাস্তিমূলক বদলি

চট্টগ্রাম বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালের সকল চিকিৎসক ডাঃ নাজিমের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে অসম্মতি প্রকাশ ও কোন ভাবেই সম্ভব নয় বলে গত ২০২২ সালের ২১ সেপ্টেম্বর তারিখে লিখিতভাবে অভিযোগ দাখিল করেন জানান। চিকিৎসকদের অভিযোগ ছিল,করোনা মহামারীর সময় ডা.নাজিম হাসপাতালে না এসে বিভ্রান্তিমূলক নির্দেশনা দিতেন এবং রোগীদের ছুটির ছাড়পত্র নিয়ে অনৈতিক অর্থনৈতিক সুবিধা আদায়ের জন্য অসহযোগিতা করতেন। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে তৎকালীন পুলিশ কমিশনার তার প্রেষণাদেশ বাতিল করে রাজশাহীতে ফেরত পাঠানোর সুপারিশ করেন। ফলস্বরূপ ২০২২ সালের ৬ নভেম্বর তার প্রেষণাদেশ বাতিল করে মূল কর্মস্থল সারদা পুলিশ একাডেমী হাসপাতালে পাঠানো হয়। তার ক্ষমতার প্রভাবে সে পুনরায় চট্টগ্রামে ফিরে আসেন বলেও উক্ত অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়।

যৌন হয়রানির অভিযোগ

ডা.নাজিমের বিরুদ্ধে সবচেয়ে আলোচিত অভিযোগ গুলোর মধ্যে রয়েছে যৌন হয়রানি। ২০১৭ সালে চট্টগ্রামের চৌমুহনী পাঠানটুলীস্থ মিড পয়েন্ট হাসপাতালের আংশিক মালিক থাকাকালীন তিনি ডা. জোবাইদা আক্তার চৌধুরী নামে একজন নারী চিকিৎসককে যৌন হয়রানি করেন। ডা.জোবাইদা তার কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তাকে পুলিশি ক্ষমতার ভয় দেখানো হয়। এই ঘটনার প্রতিবাদ করায় ডা.জোবাইদার ভাইকে পুলিশ দিয়ে হয়রানি ও শারীরিক নির্যাতন করা হয় বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। পরবর্তীতে ডা.জোবাইদা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা দায়ের করেন (মামলা নং- ৩২৮/২০১৭)। কিন্তু ডা.নাজিমের রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে সেই অভিযোগ আলোর মুখ দেখেনি এবং ভাইয়ের জীবন বাঁচাতে ডা. জোবাইদা মামলা পরিচালনা স্থগিত করতে বাধ্য হন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।এছাড়াও জাতিসংঘ মিশনে কর্মরত থাকাকালীন সময়ে একাধিক নারী পুলিশ সদস্য তার বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছিলেন বলে আবেদনপত্রে দাবি করা হয়েছে।

অভিযোগকারী শওকত হোসেন তার আবেদনে উল্লেখ করেন,ডা.নাজিমের মতো দুর্নীতিবাজ ও চরিত্রহীন কর্মকর্তা এবং সে বাংলাদেশ পুলিশের জন্য কলঙ্কস্বরূপ। তিনি এই আবেদনের অনুলিপি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়,স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়,পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে প্রেরণ করেছেন।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক শেখ ফজলে রাব্বির কাছে বিষয় টা তুলে ধরলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, সত্যি বলতে আমি মাত্র জানলাম পুরো ঘটনার বিবরণ। তবে এটা খুবই দুঃখজনক ও শাস্তি যোগ্য অপরাধ। আমি বিষয়টা অবশ্যই নজর রাখবো।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালের পরিচালক রবিউল হাসান চৌধুরী এ প্রতিবেদকে বলেন,আমার পদায়ন বেশি দেরি হয়নি তাই হয়তো ব্যাপারটা আমার টেবিল পর্যন্ত আসেনি এবং সত্যিই আমি এবিষয়ে তেমন কিছু জানিনা তবে আপনি প্রতিবেদক থেকে যতটুকু জানলাম এতে এতটুকু বুঝতে পারছি যে,বিষয়টা এত ছোট করে দেখার সুযোগ নেই সুতরাং আমি আমার অবস্থান থেকে দাপ্তরিক ভাবে অগ্রসর হবো।

ভুক্তভোগী মহিলা চিকিৎসক ডা:জোবাইদা আক্তার চৌধুরী সাথে ওভার ফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন,ভাই আমি তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। এখানে আসলে আমার আর কিছু বলতে আগ্রহ নেই। আমার সাথে যা কিছু হয়েছে তার জন্য আল্লাহ তায়ালার উপর ছেড়ে দিলাম।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা: জাহাঙ্গীর আলম ওভার ফোনে এ প্রতিবেদককে বলেন,যেহেতু চট্টগ্রাম বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালের নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা আমাদের হাতে নেই শুধুমাত্র আনুষাঙ্গিক সহযোগিতা ছাড়া সেহেতু ওদের কোন বিষয়ে চাইলে আমরা পক্ষে বিপক্ষে আলাদা পদক্ষেপ নিতে পারিনা। তবে ব্যাপার টা আমার কানে এসেছে যদি বিষয় টা সত্যি হয়ে থাকে এবং একজন ডাক্তারের সাথে হয়ে থাকে তা মোটেও ভালো সংবাদ নয়। এটা অভ্যন্তরীণ ভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিৎ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আনিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ও প্রাসঙ্গিক বিষয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালে কর্মরত আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা.মো.নাজিম উদ্দিন এর সাথে ওভার ফোনে উক্ত বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদকের ফোন রিসিভ করেননি এবং এক পর্যায়ে ফোন রিসিভ করে পরে কথা বলবেন বলে মোবাইল ফোনের লাইন কেটে দেন।

অনুসন্ধাানী প্রতিবেদন———

এস এম আকাশ,বিশেষ প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালে কর্মরত আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা.মো.নাজিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, আর্থিক অনিয়ম,যৌন হয়রানি,ক্ষমতার অপব্যবহার এবং পতিত স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ আমল থেকে অদ্যাবধি রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার সহ গুরুতর বহু অভিযোগ এনে চলতি বছরের ১৭ জুলাই চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার বরাবরে একটি আবেদনপত্র জমা দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক সদস্য শওকত হোসেন (পিপিএম) নামের এক ব্যক্তি এ অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে ডা.নাজিমের বিরুদ্ধে বিস্তারিত তথ্য প্রমাণসহ বিভিন্ন সময়ের নানান ঘটনার বর্ণনা ও বিষয়বস্তু উল্লেখ করে তার স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি জানানো হয়েছে।

অভিযোগকারী শওকত হোসেনের অভিযোগ মতে, ডা.নাজিম উদ্দিন ছাত্রজীবন থেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন এবং পরবর্তীতে চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাচিপের সক্রিয় সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন।

অভিযোগে বলা হয়,তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে চট্টগ্রাম ইউএসটিসিতে প্রবেশে বাধা দেওয়ার ক্ষেত্রে উল্লেখ যোগ্য ও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন।

ওভার ফোনে অভিযোগকারী শওগত হোসেনের সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনি বর্তমানে চট্টগ্রামে নেই এবং তিনি এই অভিযোগের বিষয়ে কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এক পর্যায়ে বলে বসেন এমনও হতে পারে উক্ত অভিযোগ খানা আমি নাও করতে পারি আমার নাম ব্যবহার করে অন্য কেউ এমনটা করতে পারে বলে বিষয়টাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে রেখেছেন। তা ছাড়া এবিষয়ে তার সাথে যোগাযোগও করতে মানা করেছেন।

আর্থিক দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার

অভিযোগ পত্রে ডা.নাজিমের বিরুদ্ধে একাধিক আর্থিক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে অসুস্থ পুলিশ সদস্যদের ছুটি দিয়ে টাকা আদায়,মিথ্যা মেডিক্যাল সার্টিফিকেট ইস্যু, এবং বিভিন্ন কোর্সে ভুয়া সনদ দিয়ে টাকা আদায় করা। এছাড়াও সরকারি হাসপাতালের রোগী বেসরকারি ক্লিনিকে পাঠিয়ে কমিশন আদায় এবং বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক ল্যাব থেকে কমিশন নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

অভিযুক্ত কর্মকর্তা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে থাকাকালীন তার বিরুদ্ধে গুরুতর অসংখ্য অনিয়মের অভিযোগ ওঠে । হাইতিতে BANFPU-3 (Rotation-6) মিশন থেকে ফেরার সময় তার লাগেজ থেকে বিপুল পরিমাণ ঔষধ ও হাসপাতালের যন্ত্রপাতি জব্দ করা হয়, যার আনুমানিক মূল্য ছিল ৮৪,৮১৬ টাকা। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করে এবং একটি ব্যাখ্যা তলব নোটিশও জারি করা হয়।

তবে অভিযোগকারী দাবি করেন, তৎকালীন স্বরাষ্ট্র সচিবের সহায়তায় এবং আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে সেই তদন্ত আলোর মুখ দেখেনি। আচার্যের বিষয় হলো জনৈক ডা.নাজিমের মূল কর্মস্থল রাজশাহীর সারদা পুলিশ একাডেমী হাসপাতাল হলেও,তিনি চাকুরি জীবনের বেশিরভাগ সময়ই রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালে প্রেষণে বা সুকৌশলে কর্মরত ছিলেন। এমনকি করোনা মহামারীর সময়ে সারদা পুলিশ একাডেমীতে তীব্র চিকিৎসক সংকট থাকা সত্ত্বেও তাকে মূল কর্মস্থলে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি বা পারনি সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর।

সহকর্মীদের অনাস্থা ও শাস্তিমূলক বদলি

চট্টগ্রাম বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালের সকল চিকিৎসক ডাঃ নাজিমের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে অসম্মতি প্রকাশ ও কোন ভাবেই সম্ভব নয় বলে গত ২০২২ সালের ২১ সেপ্টেম্বর তারিখে লিখিতভাবে অভিযোগ দাখিল করেন জানান। চিকিৎসকদের অভিযোগ ছিল,করোনা মহামারীর সময় ডা.নাজিম হাসপাতালে না এসে বিভ্রান্তিমূলক নির্দেশনা দিতেন এবং রোগীদের ছুটির ছাড়পত্র নিয়ে অনৈতিক অর্থনৈতিক সুবিধা আদায়ের জন্য অসহযোগিতা করতেন। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে তৎকালীন পুলিশ কমিশনার তার প্রেষণাদেশ বাতিল করে রাজশাহীতে ফেরত পাঠানোর সুপারিশ করেন। ফলস্বরূপ ২০২২ সালের ৬ নভেম্বর তার প্রেষণাদেশ বাতিল করে মূল কর্মস্থল সারদা পুলিশ একাডেমী হাসপাতালে পাঠানো হয়। তার ক্ষমতার প্রভাবে সে পুনরায় চট্টগ্রামে ফিরে আসেন বলেও উক্ত অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়।

যৌন হয়রানির অভিযোগ

ডা.নাজিমের বিরুদ্ধে সবচেয়ে আলোচিত অভিযোগ গুলোর মধ্যে রয়েছে যৌন হয়রানি। ২০১৭ সালে চট্টগ্রামের চৌমুহনী পাঠানটুলীস্থ মিড পয়েন্ট হাসপাতালের আংশিক মালিক থাকাকালীন তিনি ডা. জোবাইদা আক্তার চৌধুরী নামে একজন নারী চিকিৎসককে যৌন হয়রানি করেন। ডা.জোবাইদা তার কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তাকে পুলিশি ক্ষমতার ভয় দেখানো হয়। এই ঘটনার প্রতিবাদ করায় ডা.জোবাইদার ভাইকে পুলিশ দিয়ে হয়রানি ও শারীরিক নির্যাতন করা হয় বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। পরবর্তীতে ডা.জোবাইদা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা দায়ের করেন (মামলা নং- ৩২৮/২০১৭)। কিন্তু ডা.নাজিমের রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে সেই অভিযোগ আলোর মুখ দেখেনি এবং ভাইয়ের জীবন বাঁচাতে ডা. জোবাইদা মামলা পরিচালনা স্থগিত করতে বাধ্য হন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।এছাড়াও জাতিসংঘ মিশনে কর্মরত থাকাকালীন সময়ে একাধিক নারী পুলিশ সদস্য তার বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছিলেন বলে আবেদনপত্রে দাবি করা হয়েছে।

অভিযোগকারী শওকত হোসেন তার আবেদনে উল্লেখ করেন,ডা.নাজিমের মতো দুর্নীতিবাজ ও চরিত্রহীন কর্মকর্তা এবং সে বাংলাদেশ পুলিশের জন্য কলঙ্কস্বরূপ। তিনি এই আবেদনের অনুলিপি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়,স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়,পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে প্রেরণ করেছেন।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক শেখ ফজলে রাব্বির কাছে বিষয় টা তুলে ধরলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, সত্যি বলতে আমি মাত্র জানলাম পুরো ঘটনার বিবরণ। তবে এটা খুবই দুঃখজনক ও শাস্তি যোগ্য অপরাধ। আমি বিষয়টা অবশ্যই নজর রাখবো।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালের পরিচালক রবিউল হাসান চৌধুরী এ প্রতিবেদকে বলেন,আমার পদায়ন বেশি দেরি হয়নি তাই হয়তো ব্যাপারটা আমার টেবিল পর্যন্ত আসেনি এবং সত্যিই আমি এবিষয়ে তেমন কিছু জানিনা তবে আপনি প্রতিবেদক থেকে যতটুকু জানলাম এতে এতটুকু বুঝতে পারছি যে,বিষয়টা এত ছোট করে দেখার সুযোগ নেই সুতরাং আমি আমার অবস্থান থেকে দাপ্তরিক ভাবে অগ্রসর হবো।

ভুক্তভোগী মহিলা চিকিৎসক ডা:জোবাইদা আক্তার চৌধুরী সাথে ওভার ফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন,ভাই আমি তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। এখানে আসলে আমার আর কিছু বলতে আগ্রহ নেই। আমার সাথে যা কিছু হয়েছে তার জন্য আল্লাহ তায়ালার উপর ছেড়ে দিলাম।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা: জাহাঙ্গীর আলম ওভার ফোনে এ প্রতিবেদককে বলেন,যেহেতু চট্টগ্রাম বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালের নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা আমাদের হাতে নেই শুধুমাত্র আনুষাঙ্গিক সহযোগিতা ছাড়া সেহেতু ওদের কোন বিষয়ে চাইলে আমরা পক্ষে বিপক্ষে আলাদা পদক্ষেপ নিতে পারিনা। তবে ব্যাপার টা আমার কানে এসেছে যদি বিষয় টা সত্যি হয়ে থাকে এবং একজন ডাক্তারের সাথে হয়ে থাকে তা মোটেও ভালো সংবাদ নয়। এটা অভ্যন্তরীণ ভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিৎ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আনিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ও প্রাসঙ্গিক বিষয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালে কর্মরত আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা.মো.নাজিম উদ্দিন এর সাথে ওভার ফোনে উক্ত বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদকের ফোন রিসিভ করেননি এবং এক পর্যায়ে ফোন রিসিভ করে পরে কথা বলবেন বলে মোবাইল ফোনের লাইন কেটে দেন।