মিজবাউল হক, চকরিয়া : কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত সালাহউদ্দিন আহমদ সিআইপি ঋণখেলাপীর অভিযোগে উচ্চ আদালতে মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় নির্বাচনে অংশ নেওয়া নিয়ে সংকট তৈরী হয়েছে।আজ শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) নির্বাচন কমিশনে আপিল শুনানীতে তার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়। ফলে আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণে অনিশ্চিয়তার মধ্যে পড়েছেন তিনি।এদিকে সালাহউদ্দিন আহমদের মনোনয়ন আইনী জটিলতায় আটকে যাওয়ায় তার সমর্থকদের মাঝে চরম হতাশা নেমে আসে।
সালাহউদ্দিন আহমদের সমর্থকদের অভিযোগ, সালাহউদ্দিনের মনোনয়নপত্র বাতিল হলেও পরবর্তীতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডাটাবেজে সিআইবির তালিকা থেকে তার নাম প্রত্যাহার করা হয়েছে। এরপরও আইনী জটিলতায় আটকে রয়েছে তার মনোনয়ন।
তাদের আশা, শেষ পর্যন্ত উচ্চ আদালতে আইনী লড়াইয়ের মাধ্যমে সালাহউদ্দিন সিআইপির মনোনয়ন ফিরে পাবেন। আবারও চকরিয়া-পেকুয়াবাসীর মাঝে ফিরে আসবেন এমনটা আশা করছেন তার সমর্থকরা।
এদিকে নতুন করে আলোচনায় এসেছেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিম। এতোদিন নিরব থাকলেও হঠাৎ করে সরব হয়েছে তার দল বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি। মানুষের মুখে মুখে পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) সৈয়দ মো. ইব্রাহিমের নাম। তিনি চকরিয়া-পেকুয়া আসনে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন সেটা অনেকটা নিশ্চিত। তাকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সমর্থন দিচ্ছেন বলে এমন গুঞ্জণও রয়েছে।
১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে চকরিয়ার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করার ঘোষণা দিয়েছেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) সৈয়দ মো. ইব্রাহিম। তিনি চকরিয়া-পেকুয়াবাসীর পাশে থাকার ঘোষণা দিয়ে একটি অনলাইন টিভিতে সাক্ষাতকার দিয়েছেন।
জানা যায়, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটগত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ঘোষণা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল। বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (জেপি) ও ওর্য়াকার্স পার্টিসহ আরও ৬টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল নৌকা প্রতীক চেয়ে নির্বাচন করার চিঠি দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনে। এরই মধ্যে চকরিয়া-পেকুয়া আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জেপির প্রেসিডিয়াম সদস্য সালাহউদ্দিন মাহমুদ ও ওর্য়াকার্স পার্টির পলিট ব্যুরোর সদস্য হাজী মো. বশিরুল আলম। তারা নিজ নিজ দলের মনোনয়ন পেলেও নৌকা প্রতীক পাননি। এর মধ্যে সালাহউদ্দিন মাহমুদ মনোনয়ন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলেও মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন হাজী বশিরুল আলম। তিনি ওর্য়াকার্স পার্টির হাতুড়ি প্রতীক নিয়ে ভোটের মাঠে থাকবেন বলে জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে জেপির প্রেসিডিয়াম সদস্য সালাহউদ্দিন মাহমুদ বলেন, জেপির সাথে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আদর্শিক জোট রয়েছে। আমি চকরিয়া-পেকুয়া আসনে মনোনয়ন চেয়েছিলাম। কিন্তু মনোনয়ন পাইনি। দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছি। মনোনয়ন প্রত্যাহারের সবুজ সংকেত পেয়েছি। তাই ১৭ ডিসেম্বর আমার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেবো।
ওর্য়াকার্স পার্টির পলিট ব্যুরোর সদস্য হাজী বশিরুল আলম বলেন, চকরিয়া-পেকুয়া আসনে পার্টির মনোনয়ন জমা দিয়েছি। কিন্তু জোটগত নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কারণে নৌকা প্রতীক পাইনি। আওয়ামী লীগের প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমদ নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন। কিন্তু সালাহউদ্দিন আইনী জটিলতায় তার মনোনয়ন অনিশ্চতায় রয়েছেন। তাই আমি হাতুড়ি প্রতীক নিয়ে ভোট যুদ্ধে চালিয়ে যাবো।
বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আবদুল আওয়াল মামুন বলেন, আমাদের দলের পক্ষ থেকে কক্সবাজার-৩ (সদর, রামু-ঈদগাঁও) ও কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি। এই দু’টি আসনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সবুজ সংকেত পেয়েছি। ইতোমধ্যে পার্টির চেয়ারম্যান চকরিয়ার বীর মুক্তিযোদ্ধার সাথে মতবিনিময় করবেন।
চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি সরওয়ার আলম বলেন, চকরিয়া-পেকুয়া আসনে দলের মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমদ সিআইপি। তার মনোনয়নে চকরিয়া-পেকুয়াবাসীর আশার সঞ্চার হয়েছে। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ ও দখলবাজের বিরুদ্ধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই আসনে সালাহউদ্দিন আহমদকে মনোনয়ন দিয়েছেন। কিন্তু বাংকের ভূল তথ্যের কারণে তার মনোনয়নটি বাতিল হয়ে যায়। পরবর্তীতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডাটাবেজ সিআইবি’র খেলাপীর তালিকা থেকে তার নাম প্রত্যাহার করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আইনী জটিলতায় আটকে রয়েছে। এরপরও আমরা মনোনয়ন ফিরে পেতে উচ্চ আদালতে যাবো। চকরিয়া-পেকুয়াবাসীর মাঝে আমাদের নেতা ফিরে আসবে।
অন্যদিকে চকরিয়া-পেকুয়া আসনে বর্তমান সাংসদ জাফর আলম দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে রয়েছেন। একই আসনে তার পুত্র তানবির আহমদ সিদ্দিকী তুহিন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে তাদের কে থাকছেন সেটা দেখা যাবে ১৭ ডিসেম্বর প্রত্যাহারের শেষদিনে।




