লোহাগাড়া প্রতিনিধি: ভারত উপমহাদেশের শীর্ষস্থানীয় আলেমদের মধ্যে অন্যতম আল্লামা আবুল বারাকাত মুহাম্মদ ফজলুল্লাহ (রহ.) ছিলেন বহুমাত্রিকতার সংমিশ্রণে একজন ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ। তিনি একাধারে মুহাদ্দিস, মুফাসসির, মুফতি, ইসলামী চিন্তাবিদ, উর্দু, আরবী, ফার্সি ও বাংলা ভাষার শায়ের (কবি), সাহিত্যিক, লেখক ও অনুবাদক। তিনি কিংবদন্তি মুসলিম মনীষী হযরত আল্লামা খলিল আহমদ সাহরনপুরি (রাহ.) এর ছাত্র এবং হাকিমুল উম্মত হযরত আল্লামা আশরাফ আলী থানভী (রাহ.) এর ‘মুরিদে খাছ’ ছিলেন। অত্যন্ত ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ও যুগশ্রেষ্ঠ এই আলেমেদ্বীন ছিলেন ঐক্যের প্রতীক এবং নেতৃত্ব ও সেবার প্রেরণা। আজ শনিবার (১৯ নভেম্বর) লোহাগাড়ার ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চুনতী হাকিমিয়া কামিল (অনার্স-মাস্টার্স) মাদ্রাসায় আল্লামা ফজলুল্লাহ ফাউন্ডেশন ও আনজুমনে তোলাবায়ে সাবেকীন (প্রাক্তন ছাত্র পরিষদ) এর সহযোগিতায় সম্প্রসারিত মসজিদে আসমাউল হুসনা’র উদ্বোধন, বুখারী ও মুসলিম শরীফের সবকদান, আল্লামা ফজলুল্লাহ (রহ.)’র জীবনীগ্রন্থসহ কয়েকটি গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন ও মাদ্রাসার প্রাক্তন ছাত্রদের মধ্যে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনকারী, কামিল সম্মিলিত মেধা তালিকায় দ্বিতীয় স্থান অধিকারীদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনের সংসদ,আইআইউসি বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান শায়খুল হাদীস প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন  এ কথা বলেন।
May be an image of 5 people, people standing and indoor
তিনি বলেন, এ মনীষীর সান্নিধ্যে এসে যে কেহই মুগ্ধ না হয়ে পারতেন না। তিনি তাঁর সময়ের চেয়ে অনেক বেশি আধুনিক ছিলেন। প্রচলিত ধ্যান-ধারণা ও জরাজীর্ণ ইতিহাস বদলে দিয়ে নিজেই রচনা করে গেছেন নতুন ইতিহাস। তিনি জ্ঞানের প্রতিটি শাখা-প্রশাখায় বিচরণ করেছেন অবাধে এবং সৃষ্টি করেছেন অনেক মূল্যবান গ্রন্থ। এমনকি নাট্যকলা ও সঙ্গীতও বাদ যায়নি তাঁর জ্ঞানপিপাসার তালিকা থেকে। নির্ভরযোগ্য হাদিসগ্রন্থ ‘শামায়েলে তিরমিযী’র বঙ্গানুবাদসহ তাঁর স্বহস্তে লেখা অনেক পান্ডুলিপি বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর রচিত ‘যুক্তির কষ্ঠি পাথরে ইসলাম’ গ্রন্থটিও নতুনভাবে প্রকাশ হতে যাচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে তিনি আরও ১৯টি গ্রন্থ রচনা করেছেন। এই মনীষীর স্বহস্তে লিখিত পান্ডুলিপি দেখে সুধী মহল বিস্ময়ে অবাক হয়ে পড়েন।
প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন  বলেন,  আল্লামা আবুল বারাকাত মুহাম্মদ ফজলুল্লাহ (১৮৯৮-১৯৭৯) ভারতের প্রসিদ্ধ দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মাজহারুল উলুম সাহারানপুর থেকে শিক্ষা সমাপ্ত করে কলিকাতা আকাড়া আলীয়া মাদরাসায় (১৯২২ থেকে ১৯৪২ইং পর্যন্ত) দীর্ঘ ২০ বছর যাবত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি হাকিমিয়া আলীয়া মাদ্রাসায় নাজেমে আ’লা (মহাপরিচালক) হিসেবে আমৃত্যূ ইলমে দ্বীনের খেদমতে আত্মনিয়োগ করেন। জ্ঞানচর্চার পাশাপাশি তৎকালীন রাজনৈতিক আবহ থেকেও তিনি নিজকে মুক্ত রাখেননি।
তিনি বলেন, প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, খাজা নাজিমুদ্দিন, চৌধুরী মোহাম্মদ আলী প্রমূখ শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সাথে তাঁর সুসম্পর্ক ছিল। তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় চুনতির শাহ সাহেব হযরত মাওলানা হাফেজ আহমদ (রাহ.) প্রবর্তিত মাহফিলে সীরতুন্নবী (সাঃ) হয়ে ওঠে দলমত নির্বিশেষে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মিলনস্থল। আলীয়া এবং কওমী ঘরানার বিদগ্ধ আলেম-ওলামাদের বিষয়ভিত্তিক ওয়াজের দাওয়াত দিয়ে মাহফিলকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছিলেন। প্রতিদিনকার মাহফিলের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পরিচালকের চেয়ারে বসে তিনি মাহফিলের সার্বিক তদারকি করতেন।
প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী এমপি বলেন, নৈসর্গিক সৌন্দর্য মন্ডিত বাংলাদেশের প্রাচীনতম দ্বীনি শিক্ষা নিকেতন ‘উম্মুল মাদারেস’ খ্যাত চুনতী হাকিমিয়া কামিল মাদ্রাসা থেকে তৈরি হয়েছে অসংখ্য মুহাদ্দিস, মুফাচ্ছির, বরেণ্য শিক্ষাবিদ ও গবেষক। পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনকারী প্রাক্তন ছাত্রদের সংখ্যা প্রায় অর্ধ শতাধিক। তিনি অত্র মাদ্রাসার প্রাক্তন ছাত্র পরিষদ ‘আনজুমনে তোলবায়ে সাবেকীন’কে সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রীতির বন্ধনের অনবদ্য প্রয়াস আখ্যায়িত করে বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ও ঐতিহ্য রক্ষায় প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা নানাভাবে যে ভূমিকা রাখতে পারে তার উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত এই আনজুমনে তোলবায়ে সাবেকীন। দীর্ঘ প্রায় সাত দশক ধরে এই সংগঠনটি মাদ্রাসার উন্নয়নে নানাভাবে ভূমিকা রেখেছে। দেশের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের জন্য ‘আনজুমন’ এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত ও মডেল। অত্র মাদ্রাসার ছাত্র হতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান দাবী করে তিনি বলেন, কৈশোরের আকাশ-কুসুম স্বপ্নগুলোর শুরু হয়েছিল এই মাদ্রাসা থেকেই। এখান থেকেই স্বপ্ন দেখেছি ভালো মানুষ হওয়ার, সুন্দর ভবিষ্যতের। এখান থেকেই স্বপ্ন দেখেছি উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে মা-বাবা, প্রতিবেশি ও দেশের মুখ উজ্জ্বল করার। আলোচনা সভার পূর্বে দেশের শীর্ষ আলেমদের উপস্থিতিতে ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী এমপি কামিল শ্রেণীর ছাত্রদের বুখারী, মুসলিম শরীফের সবক প্রদান করেন।
No photo description available.
মাদ্রাসা গভর্ণিং বডির সভাপতি ও আল্লামা ফজলুল্লাহ (রাহ.) ফাউন্ডেশন এর চেয়ারম্যান মাওলানা অধ্যাপক ড. আবুল আ’লা মুহাম্মদ হোছামুদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি ছিলেন জামেয়া দারুল মা’আরিফ আল-ইসলামিয়া, চট্টগ্রাম এর প্রতিষ্ঠাতা মহাপরিচালক আল্লামা সুলতান যাওক নদভী।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড (বেফাক) এর মহাপরিচালক মাওলানা ওবায়দুর রহমান খান নদভী, রাহবারে বায়তুশ শরফ মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল হাই নদভী, আইআইইউসি ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী দীন মোহাম্মদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের প্রফেসর ড. আ.ক.ম আব্দুল কাদের, চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোজাহেদুল ইসলাম চৌধুরী, চুনতী হাকিমিয়া কামিল (অনার্স-মাস্টার্স) মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ মাওলানা মাহমুদুল হক, সাবেক উপাধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ আজিজুল হক, ড. মাওলানা মুহাম্মদ ঈসা শাহেদী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রফেসর ড. এনামুল হক। বিদেশে অবস্থানরত আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম এর সাবেক প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. আবু বকর রফীক আহমদের লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন অধ্যাপক ড. আবুল আলা মুহাম্মদ হোছামুদ্দিন।
সম্মানিত অতিথি ছিলেন জামেয়া দারুল মা’আরিফের সহকারী মহাপরিচালক মাওলানা ফোরকান উল্লাহ খলিল, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলহাজ্ব মোহাম্মদ ইদ্রিছ, লোহাগাড়া উপজেলার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ইব্রাহিম কবির, সাতকানিয়ার পৌর মেয়র মোহাম্মদ জোবায়ের, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সদস্য এরফানুল করিম চৌধুরী, চুনতি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন জনু, আধুনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নাজিম উদ্দীন, মাদার্শা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আ.ন.ম সেলিম, অধ্যাপক মাওলানা সিরাজুল আরেফীন ছিদ্দিকী, কাজী মাওলানা নাসির উদ্দিন, শিল্পপতি আলহাজ্ব আবদুশ শুকুর, আলহাজ্ব মোসলেম উদ্দিন, টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব আহমদ হোছাইন, সাতকানিয়া সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব জসিম উদ্দিন প্রমুখ।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন চুনতী হাকিমিয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা ফারুক হোসাইন, শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন আনজুমনে তোলবায়ে সাবেকীনের সভাপতি মাওলানা মমতাজুর রহমান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মাওলানা জিয়াউল করিম। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিভিন্ন পেশায় জড়িত প্রাক্তন ছাত্রদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের ফলে পুরো অনুষ্ঠানমালা অভূতপূর্ব এক মিলনমেলায় পরিণত হয়।
লোহাগাড়া প্রতিনিধি: ভারত উপমহাদেশের শীর্ষস্থানীয় আলেমদের মধ্যে অন্যতম আল্লামা আবুল বারাকাত মুহাম্মদ ফজলুল্লাহ (রহ.) ছিলেন বহুমাত্রিকতার সংমিশ্রণে একজন ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ। তিনি একাধারে মুহাদ্দিস, মুফাসসির, মুফতি, ইসলামী চিন্তাবিদ, উর্দু, আরবী, ফার্সি ও বাংলা ভাষার শায়ের (কবি), সাহিত্যিক, লেখক ও অনুবাদক। তিনি কিংবদন্তি মুসলিম মনীষী হযরত আল্লামা খলিল আহমদ সাহরনপুরি (রাহ.) এর ছাত্র এবং হাকিমুল উম্মত হযরত আল্লামা আশরাফ আলী থানভী (রাহ.) এর ‘মুরিদে খাছ’ ছিলেন। অত্যন্ত ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ও যুগশ্রেষ্ঠ এই আলেমেদ্বীন ছিলেন ঐক্যের প্রতীক এবং নেতৃত্ব ও সেবার প্রেরণা। আজ শনিবার (১৯ নভেম্বর) লোহাগাড়ার ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চুনতী হাকিমিয়া কামিল (অনার্স-মাস্টার্স) মাদ্রাসায় আল্লামা ফজলুল্লাহ ফাউন্ডেশন ও আনজুমনে তোলাবায়ে সাবেকীন (প্রাক্তন ছাত্র পরিষদ) এর সহযোগিতায় সম্প্রসারিত মসজিদে আসমাউল হুসনা’র উদ্বোধন, বুখারী ও মুসলিম শরীফের সবকদান, আল্লামা ফজলুল্লাহ (রহ.)’র জীবনীগ্রন্থসহ কয়েকটি গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন ও মাদ্রাসার প্রাক্তন ছাত্রদের মধ্যে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনকারী, কামিল সম্মিলিত মেধা তালিকায় দ্বিতীয় স্থান অধিকারীদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনের সংসদ,আইআইউসি বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান শায়খুল হাদীস প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন  এ কথা বলেন।
May be an image of 5 people, people standing and indoor
তিনি বলেন, এ মনীষীর সান্নিধ্যে এসে যে কেহই মুগ্ধ না হয়ে পারতেন না। তিনি তাঁর সময়ের চেয়ে অনেক বেশি আধুনিক ছিলেন। প্রচলিত ধ্যান-ধারণা ও জরাজীর্ণ ইতিহাস বদলে দিয়ে নিজেই রচনা করে গেছেন নতুন ইতিহাস। তিনি জ্ঞানের প্রতিটি শাখা-প্রশাখায় বিচরণ করেছেন অবাধে এবং সৃষ্টি করেছেন অনেক মূল্যবান গ্রন্থ। এমনকি নাট্যকলা ও সঙ্গীতও বাদ যায়নি তাঁর জ্ঞানপিপাসার তালিকা থেকে। নির্ভরযোগ্য হাদিসগ্রন্থ ‘শামায়েলে তিরমিযী’র বঙ্গানুবাদসহ তাঁর স্বহস্তে লেখা অনেক পান্ডুলিপি বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর রচিত ‘যুক্তির কষ্ঠি পাথরে ইসলাম’ গ্রন্থটিও নতুনভাবে প্রকাশ হতে যাচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে তিনি আরও ১৯টি গ্রন্থ রচনা করেছেন। এই মনীষীর স্বহস্তে লিখিত পান্ডুলিপি দেখে সুধী মহল বিস্ময়ে অবাক হয়ে পড়েন।
প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন  বলেন,  আল্লামা আবুল বারাকাত মুহাম্মদ ফজলুল্লাহ (১৮৯৮-১৯৭৯) ভারতের প্রসিদ্ধ দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মাজহারুল উলুম সাহারানপুর থেকে শিক্ষা সমাপ্ত করে কলিকাতা আকাড়া আলীয়া মাদরাসায় (১৯২২ থেকে ১৯৪২ইং পর্যন্ত) দীর্ঘ ২০ বছর যাবত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি হাকিমিয়া আলীয়া মাদ্রাসায় নাজেমে আ’লা (মহাপরিচালক) হিসেবে আমৃত্যূ ইলমে দ্বীনের খেদমতে আত্মনিয়োগ করেন। জ্ঞানচর্চার পাশাপাশি তৎকালীন রাজনৈতিক আবহ থেকেও তিনি নিজকে মুক্ত রাখেননি।
তিনি বলেন, প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, খাজা নাজিমুদ্দিন, চৌধুরী মোহাম্মদ আলী প্রমূখ শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সাথে তাঁর সুসম্পর্ক ছিল। তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় চুনতির শাহ সাহেব হযরত মাওলানা হাফেজ আহমদ (রাহ.) প্রবর্তিত মাহফিলে সীরতুন্নবী (সাঃ) হয়ে ওঠে দলমত নির্বিশেষে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মিলনস্থল। আলীয়া এবং কওমী ঘরানার বিদগ্ধ আলেম-ওলামাদের বিষয়ভিত্তিক ওয়াজের দাওয়াত দিয়ে মাহফিলকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছিলেন। প্রতিদিনকার মাহফিলের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পরিচালকের চেয়ারে বসে তিনি মাহফিলের সার্বিক তদারকি করতেন।
প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী এমপি বলেন, নৈসর্গিক সৌন্দর্য মন্ডিত বাংলাদেশের প্রাচীনতম দ্বীনি শিক্ষা নিকেতন ‘উম্মুল মাদারেস’ খ্যাত চুনতী হাকিমিয়া কামিল মাদ্রাসা থেকে তৈরি হয়েছে অসংখ্য মুহাদ্দিস, মুফাচ্ছির, বরেণ্য শিক্ষাবিদ ও গবেষক। পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনকারী প্রাক্তন ছাত্রদের সংখ্যা প্রায় অর্ধ শতাধিক। তিনি অত্র মাদ্রাসার প্রাক্তন ছাত্র পরিষদ ‘আনজুমনে তোলবায়ে সাবেকীন’কে সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রীতির বন্ধনের অনবদ্য প্রয়াস আখ্যায়িত করে বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ও ঐতিহ্য রক্ষায় প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা নানাভাবে যে ভূমিকা রাখতে পারে তার উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত এই আনজুমনে তোলবায়ে সাবেকীন। দীর্ঘ প্রায় সাত দশক ধরে এই সংগঠনটি মাদ্রাসার উন্নয়নে নানাভাবে ভূমিকা রেখেছে। দেশের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের জন্য ‘আনজুমন’ এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত ও মডেল। অত্র মাদ্রাসার ছাত্র হতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান দাবী করে তিনি বলেন, কৈশোরের আকাশ-কুসুম স্বপ্নগুলোর শুরু হয়েছিল এই মাদ্রাসা থেকেই। এখান থেকেই স্বপ্ন দেখেছি ভালো মানুষ হওয়ার, সুন্দর ভবিষ্যতের। এখান থেকেই স্বপ্ন দেখেছি উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে মা-বাবা, প্রতিবেশি ও দেশের মুখ উজ্জ্বল করার। আলোচনা সভার পূর্বে দেশের শীর্ষ আলেমদের উপস্থিতিতে ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী এমপি কামিল শ্রেণীর ছাত্রদের বুখারী, মুসলিম শরীফের সবক প্রদান করেন।
No photo description available.
মাদ্রাসা গভর্ণিং বডির সভাপতি ও আল্লামা ফজলুল্লাহ (রাহ.) ফাউন্ডেশন এর চেয়ারম্যান মাওলানা অধ্যাপক ড. আবুল আ’লা মুহাম্মদ হোছামুদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি ছিলেন জামেয়া দারুল মা’আরিফ আল-ইসলামিয়া, চট্টগ্রাম এর প্রতিষ্ঠাতা মহাপরিচালক আল্লামা সুলতান যাওক নদভী।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড (বেফাক) এর মহাপরিচালক মাওলানা ওবায়দুর রহমান খান নদভী, রাহবারে বায়তুশ শরফ মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল হাই নদভী, আইআইইউসি ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী দীন মোহাম্মদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের প্রফেসর ড. আ.ক.ম আব্দুল কাদের, চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোজাহেদুল ইসলাম চৌধুরী, চুনতী হাকিমিয়া কামিল (অনার্স-মাস্টার্স) মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ মাওলানা মাহমুদুল হক, সাবেক উপাধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ আজিজুল হক, ড. মাওলানা মুহাম্মদ ঈসা শাহেদী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রফেসর ড. এনামুল হক। বিদেশে অবস্থানরত আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম এর সাবেক প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. আবু বকর রফীক আহমদের লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন অধ্যাপক ড. আবুল আলা মুহাম্মদ হোছামুদ্দিন।
সম্মানিত অতিথি ছিলেন জামেয়া দারুল মা’আরিফের সহকারী মহাপরিচালক মাওলানা ফোরকান উল্লাহ খলিল, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলহাজ্ব মোহাম্মদ ইদ্রিছ, লোহাগাড়া উপজেলার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ইব্রাহিম কবির, সাতকানিয়ার পৌর মেয়র মোহাম্মদ জোবায়ের, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সদস্য এরফানুল করিম চৌধুরী, চুনতি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন জনু, আধুনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নাজিম উদ্দীন, মাদার্শা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আ.ন.ম সেলিম, অধ্যাপক মাওলানা সিরাজুল আরেফীন ছিদ্দিকী, কাজী মাওলানা নাসির উদ্দিন, শিল্পপতি আলহাজ্ব আবদুশ শুকুর, আলহাজ্ব মোসলেম উদ্দিন, টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব আহমদ হোছাইন, সাতকানিয়া সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব জসিম উদ্দিন প্রমুখ।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন চুনতী হাকিমিয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা ফারুক হোসাইন, শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন আনজুমনে তোলবায়ে সাবেকীনের সভাপতি মাওলানা মমতাজুর রহমান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মাওলানা জিয়াউল করিম। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিভিন্ন পেশায় জড়িত প্রাক্তন ছাত্রদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের ফলে পুরো অনুষ্ঠানমালা অভূতপূর্ব এক মিলনমেলায় পরিণত হয়।