গাজীপূর প্রতিনিধি: জিএমপির বাসন থানাধীন টানা কড্ডার তাকওয়া ফার্মেসী এলাকার বহুল আলোচিত চাঞ্চল্যকর ট্রাভেল এজেন্ট ব্যবসায়ী হেদায়েত লস্কর এর হত্যা মামলার আসামী গ্রেফতার করল গাজীপুর পিবিআই । মামলার ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত আসামী আনোয়ার হোসেন (৩৪) ও ফারুক আহম্মেদ (৫২)কে এসআই মিজানুর রহমান এর নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করে বাসন থানাধীন টান কড্ডা এলাকা হতে গ্রেফতার করা হয়।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ভিকটিম হেদায়েত লস্কর (৪২) একজন ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসায়ী। বাদীনির স্বামী বিভিন্ন লোকজনের মাধ্যমে ভারত থেকে বিভিন্ন প্রকার ঔষধ বাংলাদেশে এনে দিত। আসামী তারিকুজ্জামান প্রকাশ তারিফ অসুস্থ্য থাকায় বাদীনির স্বামীর মাধ্যমে ভারত থেকে ঔষধ আমদানী করত। তারিফ এর জন্য ভারত থেকে ঔষধ এনে গত ২৫ জুলাই রাত সাড়ে ১০টায় বাসন থানাধীন টান কড্ডা সাকিনস্থ তাকওয়া ফার্মেসী বরাবর গাজীপুর-টাঙ্গাইল গামী মহাসড়কের পশ্চিম পাশে ফুটপাতের উপর গেলে ঔষধের দাম নিয়ে বাদীনির স্বামীর সাথে আসামী তারিকুজ্জামান প্রকাশ তারিফ এর কথা কাটাকাটি হয়।
কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে রাত সাড়ে ১০ টায় তারিফ উত্তেজিত হয়ে বাদীনির স্বামীকে কিল ঘুষি মারার একপর্যায়ে বাদীনির স্বামী মাটিতে পড়ে গেলে আশেপাশের লোকজন বাদীনির স্বামীকে তাকওয়া ফার্মেসীতে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করা অবস্থায় বাদীনির স্বামীর শারীরিক অবস্থা আশংকা জনক হওয়ায় স্থানীয় লোকজন বাদীনি ও তার আত্মীয় স্বজনদের সংবাদ দিলে বাদীপক্ষ ঘটনাস্থলে যেয়ে বাদীনির স্বামীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।
কর্তব্যরত চিকিৎসক বাদীনির স্বামীকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মৃত ঘোষনা করেন। এই সংক্রান্তে ভিকটিমের স্ত্রী যুথি আক্তার (৩৩) বাদী হয়ে বাসন থানায় খুনীর বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করলে বাসন থানার মামলা নং-১৭ তারিখ-২৬/০৭/২০২১ ইং ধারা-৩০২ পেনাল কোড রুজু হয়।
মামলাটি বাসন থানা পুলিশ তদন্ত করে এজাহারনামীয় একমাত্র আসামীকে অত্র মামলার দায় হতে অব্যহাতির আবেদন করেন বাসন থানার চূড়ান্ত রিপোর্ট তথ্যগত ভুল নং-৩২, তারিখ-২৭/১০/২০২১ ধারা-৩০২ পেনাল কোড বিজ্ঞ আদালতে দাখিল করেন। বাদীনি পুলিশের চূড়ান্ত রিপোর্টের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে না রাজীর আবেদন করলে বিজ্ঞ আদালত
বাদীর নারাজীর আবেদন মঞ্জুর করে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ প্রদান করেন।
পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার এর সঠিক তত্ত্বাবধান ও দিক নির্দেশনায় পিবিআই গাজীপুর ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান এর সার্বিক সহযোগীতায় মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পুলিশ পরিদর্শক মোঃ মিজানুর রহমান মামলাটি তদন্ত করেন।
ধৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ আনোয়ার হোসেন এজাহারনামীয় আসামী তারিকুজ্জামানের ব্যক্তিগত গাড়ীর ড্রাইভার ছিল। আসামী তারিকুজ্জমান লিভারের সমস্যা থাকায় সে ভিকটিম হেদায়েত লস্বকরের মাধ্যমে ভারত হতে ঔষধ এনে সেবন করত। গত ২৫ জুলাই আসামী আনোয়ার হোসেন ঘটনাস্থলের নিকট খাইরুলের দোকানে চা খেতে যায়। তখন আসামী তারিকুজ্জামান ও হেদায়েত লস্করের মধ্যে তর্ক তিবর্ক শুনে এগিয়ে যায়। ঔষধের দাম নিয়ে একপর্যায়ে আসামী তারিকুজ্জামান প্রকাশ তারিফকে ভিকটিম হেদায়েত লস্কর মারতে উদ্যত হলে আসামী ভিকটিম হেদায়েত লষ্করকে এলোপাথারীভাবে মারধর করে, মারপিটের ফলে ভিকটিম হেদায়েত লষ্কর রাস্তার পাশে ড্রেনে পড়ে গেলে আসামী আনোয়ার হোসেন ভিকটিমকে ড্রেন হতে উপরে তোলে। তখন তারিফ তার সহযোগী আসামী আনোয়ার হোসেনকে নির্দেশ দেন যে ভিকটিম হেদায়েত লস্করকে লাথি মেরে ড্রেনে ফেলে দিতে । আনোয়ার হোসেন লাথি দিয়ে ভিকটিমকে ড্রেনে ফেলে দেয়। কিছুক্ষন পর আসামী আনোয়ার হোসেন পুনরায় ভিকটিম হেদায়েত লস্করকে ড্রেন হতে তুলে আনে তখন আসামী তারিফ এর শ্বশুর সহযোগী আসামী ফারুক আহম্মেদ ভিকটিম হেদায়েত লস্করকে লাথি মেরে ড্রেনে ফেলে দেয়। আসামী আনোয়ার হোসেন ভিকটিম হেদায়েত লস্করকে পুনরায় ড্রেন হতে উপরে তোলে আনে। তখন ভিকটিমের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত ছিলো এবং ভিকটিমের শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। ভিকটিমের আত্মীয় স্বজন সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে ভিকটিমকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে ভিকটিম মারা যায়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদকালে পিবিআই এর হেফাজতে সে ভিকটিম হেদায়েত লস্কর এর হত্যাকান্ডে জড়িত মর্মে স্বীকার করে। আসামীকে বিজ্ঞ আদালতের আদেশে ১ দিনের পুলিশ রিমান্ডে প্রাপ্ত হয়ে গতকাল ১৭ অক্ঠোবর বিজ্ঞ আদালত, গাজীপুরে সোপর্দ করা হলে উক্ত আসামী নিজেকে জড়িয়ে নাম উল্লেখ করে ভিকটিম হেদায়েত লস্কর এর হত্যাকান্ডের বিস্তারিত বর্ণনা করে বিজ্ঞ মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, গাজীপুরে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।
Post Views: 401




