নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত ও হেড অব দ্যা ডেলিগেশন চার্লস হুইটলি (H.E. Mr. Charles Whiteley)-এর নেতৃত্বে সুইডেন’র রাষ্ট্রদূত মিস আলেকজান্দ্রা বার্গ ভন লিন্ডে ((H.E. Ms. Alexandra Berg Von Linde), নেদারল্যান্ড’র রাষ্ট্রদূত অ্যান জেরার্ড ভ্যান লিউয়েন ((H.E. Mr. Anne Gerard Van Leeuwen), লিথুনিয়া’র রাষ্ট্রদূত (দিল্লীস্থ বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত) জুলিয়াস প্রানেভিসিয়াস (H.E. Mr. Julius Pranevicius)’র সমন্বয়ে প্রতিনিধিদল আজ রবিবার (০৫ জুন) অপরাহ্নে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারস্থ বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে চেম্বার নেতৃবৃন্দসহ অত্র অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হয়।
হেড অব দ্যা ডেলিগেশন চার্লস হুইটলি বলেন-বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়া এদেশের ব্যবসায়ী এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন’র জন্য আনন্দের বিষয়। যোগাযোগ ও পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন এবং বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের বহুমূখীকরণ, বাই-সাইকেল, ফার্মাসিউটিক্যালস ও সার্ভিস সেক্টরসহ বিভিন্ন সম্ভাবনাময় খাতে আরো বেশী মনোনিবেশ করা প্রয়োজন। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন নবায়নযোগ্য জ্বালানী খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী। তবে বাংলাদেশে ২.২ বিলিয়ন বিনিয়োগ ভিয়েতনামে ৬ বিলিয়ন বিনিয়োগের তুলনায় অনেক কম। এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে বিনিয়োগ আকর্ষণে নিজের উপযুক্ততা আরো তুলে ধরতে হবে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন চেম্বার অব কমার্স গঠন করা হলে এবং বাংলাদেশ ও ইউরোপের ব্যবসায়ীদের মধ্যে যোগাযোগের প্ল্যাটফর্ম তৈরী হলে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে অনেক পরিবর্তন আসবে। তিনি বৃহত্তর চট্টগ্রামে বন্দরসহ অবকাঠামো উন্নয়নের কারণে বিনিয়োগ হাবে পরিণত এবং এফডিআই পলিসির ক্ষেত্রে চিটাগাং চেম্বার অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে বলে মন্তব্য করেন।
চিটাগাং চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন-জিএসপি সুবিধা ইউরোপে বাংলাদেশের রপ্তানি বৃদ্ধিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ২০২৬ সালে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন’র পর জিএসপি প্লাস সুবিধার ক্ষেত্রে অবশ্যই পালনীয় শর্ত পূরণে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সহযোগিতা বাংলাদেশের জন্য জরুরী। তাই ২০২৯ সাল পর্যন্ত ইবিএ (এভরিথিং বাট আর্মস্) কর্মসূচীতে বাংলাদেশ যাতে অন্তর্ভূক্ত থাকে সে বিষয়ে প্রতিনিধিদলের সহযোগিতা কামনা করেন চেম্বার সভাপতি। তিনি আরো বলেন-ফেব্রুয়ারী মাসে ইতালি রাভেনা বন্দরের সাথে চট্টগ্রাম বন্দরের সরাসরি সমুদ্র পথে যোগাযোগ নতুন দিগন্তের সৃষ্টি করেছে। একইভাবে ইউরোপের অন্যান্য দেশের সাথে যোগাযোগ স্থাপিত হলে অর্ধেকেরও কম সময়ে এবং খরচে পণ্য আমদানি-রপ্তানি করা সম্ভব হবে।
সুইডেন রাষ্ট্রদূত মিস আলেকজান্দ্রা বার্গ ভন লিন্ডে বলেন-সুইডেন ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্কের ৫০ বছর অতিবাহিত হচ্ছে। উভয়পক্ষ পরিবেশ, স্বাস্থ্য ও জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে একসাথে কাজ করছে। বাংলাদেশে ৫০টি সুইডিশ কোম্পানী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সুইডিশ বিভিন্ন কোম্পানী চট্টগ্রাম বন্দর সম্পর্কে আগ্রহী। তিনি ডিজিটাল ইকনোমি, গ্রীণ রিভ্যুলেশন, ইজ অব ডুয়িং বিজনেস ইত্যাদি ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরো এগিয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা করেন।
নেদারল্যান্ড রাষ্ট্রদূত অ্যান জেরার্ড ভ্যান লিউয়েন বলেন-প্রাকৃতিক ভূ-বৈশিষ্ট্যের কারণে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ড ব-দ্বীপ হওয়ায় সাগর থেকে ‘ল্যান্ড রিক্লেইম’ এর ক্ষেত্রে উভয়দেশ কাজ করতে পারে। বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়নে নেদারল্যান্ডের বিশেষজ্ঞদল সহযোগিতা করছে। নেদারল্যান্ড কৃষিতে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ হওয়ায় বাংলাদেশের সাথে এই সেক্টরে একসাথে কাজ করার চমৎকার সুযোগ রয়েছে।
লিথুনিয়া রাষ্ট্রদূত জুলিয়াস প্রানেভিসিয়াস বলেন-আমরা এশিয়াতে অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি করতে চাই। সাইবার সিকিউরিটি, লেসার প্রোডাকশন, লাইফ সায়েন্স সেক্টরে আমরা নেতৃস্থানীয়। বাংলাদেশ দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ। তাই এসব সেক্টরে আমরা সহযোগিতা করতে পারি।
চেম্বার সহ-সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর বলেন-ইউরোপিয়ান যেকোন চেম্বারের সাথে চিটাগাং চেম্বারের পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে উভয়পক্ষ উপকৃত হতে পারে। এদেশে ইউরোপিয়ান টেকনোলজি এবং মেশিনারীজ এর পরিচিতি বৃদ্ধিতে কর্মসূচী গ্রহণ করা প্রয়োজন।
মতবিনিময় সভায় অন্যান্য বক্তারা বর্ষা মৌসুমে ভরা জোয়ারের সময় চট্টগ্রামে পানির প্লাবন রোধকল্পে সহায়তা করা, খাদ্য খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধি, বাংলাদেশের বেসরকারি খাতকে ইউরোপিয় সরকারি কর্মসূচীতে অন্তর্ভূক্ত করা, চট্টগ্রাম বন্দর অপারেশনে সময় সাশ্রয়ে কারিগরি সহায়তা প্রদান, যুবশক্তিকে কাজে লাগাতে বিভিন্ন স্কিল ও নলেজ শেয়ারিং কর্মসূচী গ্রহণ করা, চিটাগাং চেম্বারে একটি ইইউ অফিস স্থাপন, নার্সিং ও স্বাস্থ্য খাতে প্রশিক্ষণ চালু করা, ব্যবসায়ী ও ব্যবসা সংশ্লিষ্ট কারিগরি বিশেষজ্ঞদের দীর্ঘমেয়াদী ভিসা প্রদান ও পদ্ধতি সহজীকরণ, চট্টগ্রাম-ঢাকা এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ, ট্যাক্স হলিডেসহ অন্যান্য সুবিধা কাজে লাগিয়ে বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরে শিল্প স্থাপন, এদেশের তরুণ উদ্যোক্তাদের সাথে ইউরোপের বিশেষজ্ঞ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে সংযোগ স্থাপন এবং ম্যান মেইড ফাইভার উৎপাদনে কারিগরি সহযোগিতা প্রদানের আহবান জানান।
দি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি’র প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম’র সভাপতিত্বে চেম্বার সহ-সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর, চেম্বার পরিচালকদ্বয় অঞ্জন শেখর দাশ ও সাজির আহমেদ, চেম্বারের প্রাক্তন সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আলী আহমেদ, বিএসআরএম’র চেয়ারম্যান আলীহুসেইন আকবর আলী, চিটাগাং ক্লাব লিঃ’র প্রাক্তন চেয়ারম্যান মিয়া আবদুর রহিম, উইম্যান চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি’র সিনিয়র সহ-সভাপতি ও এফবিসিসিআই’র পরিচালক ডাঃ মুনাল মাহবুব বক্তব্য রাখেন।
এ সময় চেম্বার পরিচালকবৃন্দ মোঃ অহীদ সিরাজ চৌধুরী (স্বপন), জহিরুল ইসলাম চৌধুরী (আলমগীর), মোঃ রকিবুর রহমান (টুটুল), মোঃ শাহরিয়ার জাহান, মোঃ ইফতেখার ফয়সাল, এস. এম. তাহসিন জোনায়েদ, তানভীর মোস্তফা চৌধুরী ও মোহাম্মদ নাসিরুল আলম (ফাহিম), সিএমএ সিজিএম’র এমডি টি. সিভাকুমার ও ডেনিম এক্সপার্ট লিঃ’র এমডি মোস্তাফিজ উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।




