ঢাকা ব্যুরো: টাকা যদি পরিকল্পনা করে খরচ করা না হয় কিংবা আয় বুঝে খরচ করা না হয়, তবে একদিন রাজার ভান্ডারও ফুরোতে সময় লাগে না। বর্তমানে শ্রীলঙ্কা তো এক বড় উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে পৃথিবীবাসীর সামনে। তাই, বাজেট যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সেটা আধুনিক বিশ্বে আবারও নতুন করে উপলব্ধি করতে শুরু করেছে মানুষ। কীভাবে কোথা থেকে টাকা আসবে আর কোন খাতে কত টাকা খরচ হবে তার হিসাব আগেভাগে করা থাকলে আর ‘ভাঁড়ারে টান’ পড়বে না। তাই, তিন সদস্যের পরিবারের যেমন একটা দৈনিক, মাসিক ও বছরের বাজেট থাকে তেমনি বাজেট থাকে অফিসে, ব্যবসায়। বাজেট থাকে শহরের এবং দেশের।

সরকারের বাজেট প্রণয়নের ওপরে দেশে বিদেশে সব মহলের তীক্ষ্ণ নজর থাকে। সাধারণ মানুষের মূল আগ্রহ থাকে জাতীয় বাজেটে নতুন কী থাকছে, দাম বাড়ছে কোন কোন পণ্যের আর দাম কমবেই বা কোন পণ্যের। সাধারণ মানুষের কাছে বাজেট অঙ্কের হিসাবে কত বড় হলো সেদিকে যতটা না মনোযোগ পায়, তার চেয়ে বেশি মনোযোগ থাকে বাজারদরের ওপর। রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য এই বাজেট ঘোষণার কাল এক মোক্ষম সময় প্রতিপক্ষকে আক্রমণের। সরকারি দল বলে উন্নয়নের বাজেট, বিরোধী দল বলে গরিব মারার বাজেট। আর ব্যবসায়ীরা দেখে কোন খাতে করের চাপ কমছে আর কোথায় কোথায় সরকার বিশেষ প্রণোদনা দিচ্ছে। তা সে যা-ই হোক না, আসছে বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে পেশ করা হবে আগামী অর্থবছরের বাজেট। করোনা-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে এবারের বাজেট নিয়ে তাই আলোচনা চলছে সর্বত্র।

বাজেটের শুরু :বাজেট শব্দটি এলো কোথা থেকে? বাজেট একটি ইংরেজি শব্দ যা বাংলাদেশের সরকারি বিভিন্ন নথিপত্রে ব্যবহূত হয় বাজেট হিসেবেই। মানে বাজেটের তেমন লাগসই কোনো বাংলা শব্দ খুঁজে পাওয়া যায়নি। এই বাজেট শব্দটি এসেছে ফরাসি শব্দ ‘বোওগেট’ থেকে। যার অর্থ চামড়ার ব্যাগ। জানা যায়, ১৭২০ সালে ব্রিটেনের পার্লামেন্টে প্রথম জাতীয় বাজেট ও রাজস্বনীতি উত্থাপন করেন স্যার রবার্ট ওয়ালপোল। এর ঠিক ১৩ বছর পর ওয়ালপোল সরকারের করের বোঝা কমাতে তার রাজস্ব পরিকল্পনায় বিভিন্ন ধরনের পণ্য, যেমন—ওয়াইন, তামাক প্রভৃতির ওপর আবগারি শুল্ক ধার্য করার প্রস্তাব করেন। এতে সাধারণ জনগণ ক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে যে ‘উইগ পিয়ার উইলিয়াম দ্য বাজেট ওপেন অর অ্যান আনসার টু এ প্যাম্ফলেট’ নামে একটি পুস্তিকা লিখে ফেলেন। সেবারই প্রথম সরকারের রাজস্বনীতিতে বাজেট শব্দটি ব্যবহূত হয়েছে। কিন্তু, বাজেট আনুষ্ঠানিক রূপ পায় ১৭৬০ সালে।

বাংলাদেশের বাজেট :স্বাধীন দেশের প্রথম অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ বাংলাদেশের প্রথম বাজেট উপস্থাপন করেন। তাজউদ্দীন আহমদ ১৯৭২ সালের ৩০ জুন একই সঙ্গে ১৯৭১-৭২ ও ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেছিলেন। তাজউদ্দীন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বাজেট দিয়েছিলেন; সেই বাজেটের আকার ছিল ৭৮৬ কোটি টাকা। আর এ বছর আগামী ৯ জুন জাতীয় সংসদে ঘোষিত হবে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট। এটি হবে বাংলাদেশের ৫১তম (একটি অন্তর্বর্তীকালীন বাজেটসহ ৫২তম) পূর্ণাঙ্গ বাজেট এবং অর্থমন্ত্রী হিসেবে আ হ ম মুস্তফা কামালের চতুর্থ বাজেট। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের আকার হতে পারে ৬ লাখ ৭৫ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের (২০২১-২০২২) বাজেটের আকার ছিল ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা।

বাংলাদেশের বাজেট উপস্থাপনে তাজউদ্দীন আহমদ অনন্য এক অবস্থানে রয়েছেন। তিনিই একমাত্র পরিপূর্ণ রাজনীতিবিদ, যিনি সংসদে বাজেট উপস্থাপন করেছেন। স্বাধীনতা-পরবর্তী মোট ১৩ জন অর্থমন্ত্রী বা অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা সংসদে বাজেট উপস্থাপন করেছেন। তাজউদ্দীন আহমদ ছাড়া বাকিরা ছিলেন হয় অবসরপ্রাপ্ত আমলা অথবা অর্থনীতিবিদ বা ব্যবসায়ী। কেউই পূর্ণ রাজনীতিবিদ নন।

বাজেট উপস্থাপনের চালচিত্র :এক অর্থবছরে দুবার বাজেট উপস্থাপনের উদাহরণও আছে আমাদের। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ১৯৯৬-৯৭ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেন। এর পরে নির্বাচনের মাধ্যমে দায়িত্ব নিয়ে মূল আর্থিক কাঠামো ঠিক রেখে নতুন করে বাজেট উপস্থাপন করেন শাহ এ এম এস কিবরিয়া। আর সংসদে সমান ১২ বার বাজেট পেশ করে রেকর্ড করেছেন সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান এবং আবুল মাল আবদুল মুহিত। তবে টানা ১০ বার বাজেট দিয়ে আবুল মাল আবদুল মুহিত রেকর্ড গড়েছেন। মুহিত শেখ হাসিনার সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে টানা ১০টিসহ মোট ১২টি বাজেট পেশ করেছেন। এর আগে তিনি এরশাদ সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে ১৯৮২-৮৩ ও ১৯৮৩-১৪ এই দুই অর্থবছরের বাজেট পেশ করেছিলেন।

তাজউদ্দীন আহমদ তিনটি, এ এম এস কিবরিয়া ছয়টি, এম সাইদুজ্জামান চারটি বাজেট দেন। অর্থ-উপদেষ্টা ড. এ বি মীর্জ্জা আজিজুল ইসলাম দুটি এবং ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ একটি বাজেট পেশ করেন। এরশাদ সরকারের দুই অর্থমন্ত্রী এম এ মুনিম দুটি এবং ড. ওয়াহিদুল হক একটি বাজেট উপস্থাপন করেন। বিএনপি সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে ড. মীর্জা নুরুল হুদা একটি বাজেট দেন। খন্দকার মোশতাক সরকারের আমলে দেশের প্রথম টেকনোক্র্যাট অর্থমন্ত্রী হিসেবে ১৯৭৫-৭৬ অর্থবছরের বাজেট দেন ডক্টর এ আর মল্লিক।

চার মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের চার জন অর্থমন্ত্রী ২১টি বাজেট দিয়েছেন। বিএনপির তিন মেয়াদের শাসন আমলে তিন জন ১৬টি বাজেট উপস্থাপন করেছেন। জাতীয় পার্টির আমলে নয়টি বাজেট চার জন অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করেন। তিনটি বাজেট দিয়েছে দুটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার। বাজেট যে শুধু অর্থমন্ত্রী বা অর্থ উপদেষ্টা দিয়েছেন তা কিন্তু নয়। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাজেট উপস্থাপন করতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল অসুস্থ বোধ করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাজেটের বাকি অংশ সংসদে উপস্থাপন করেছিলেন। এছাড়া বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান সামরিক শাসক হিসেবে তিনটি বাজেট উপস্থাপন করেন।

বিভিন্ন দেশের অর্থবছর :দেশভেদে বাজেট পেশের সময় ভিন্ন। বাংলাদেশে যেমন জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে, সাধারণত জুন মাসের প্রথম বৃহস্পতিবার। এবার জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বাজেট পেশ হতে যাচ্ছে। পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, বাংলাদেশের অর্থবছর শুরু পহেলা জুলাই, শেষ ৩০ জুন। চীন, ব্রাজিল, সংযুক্ত আরব আমিরাত, স্পেনে অর্থবছর শুরু হয় পহেলা জানুয়ারি আর শেষ হয় ৩০ ডিসেম্বর। ভারত, ইংল্যান্ড, হংকং, কানাডা ও দক্ষিণ আফ্রিকায় অর্থবছর শুরু হয় পহেলা এপ্রিল, শেষ হয় ৩১ মার্চ। যুক্তরাষ্ট্র ও থাইল্যান্ডে অর্থবছর শুরু হয় পহেলা অক্টোবর, শেষ হয় ৩০ সেপ্টেম্বর।

ঢাকা ব্যুরো: টাকা যদি পরিকল্পনা করে খরচ করা না হয় কিংবা আয় বুঝে খরচ করা না হয়, তবে একদিন রাজার ভান্ডারও ফুরোতে সময় লাগে না। বর্তমানে শ্রীলঙ্কা তো এক বড় উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে পৃথিবীবাসীর সামনে। তাই, বাজেট যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সেটা আধুনিক বিশ্বে আবারও নতুন করে উপলব্ধি করতে শুরু করেছে মানুষ। কীভাবে কোথা থেকে টাকা আসবে আর কোন খাতে কত টাকা খরচ হবে তার হিসাব আগেভাগে করা থাকলে আর ‘ভাঁড়ারে টান’ পড়বে না। তাই, তিন সদস্যের পরিবারের যেমন একটা দৈনিক, মাসিক ও বছরের বাজেট থাকে তেমনি বাজেট থাকে অফিসে, ব্যবসায়। বাজেট থাকে শহরের এবং দেশের।

সরকারের বাজেট প্রণয়নের ওপরে দেশে বিদেশে সব মহলের তীক্ষ্ণ নজর থাকে। সাধারণ মানুষের মূল আগ্রহ থাকে জাতীয় বাজেটে নতুন কী থাকছে, দাম বাড়ছে কোন কোন পণ্যের আর দাম কমবেই বা কোন পণ্যের। সাধারণ মানুষের কাছে বাজেট অঙ্কের হিসাবে কত বড় হলো সেদিকে যতটা না মনোযোগ পায়, তার চেয়ে বেশি মনোযোগ থাকে বাজারদরের ওপর। রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য এই বাজেট ঘোষণার কাল এক মোক্ষম সময় প্রতিপক্ষকে আক্রমণের। সরকারি দল বলে উন্নয়নের বাজেট, বিরোধী দল বলে গরিব মারার বাজেট। আর ব্যবসায়ীরা দেখে কোন খাতে করের চাপ কমছে আর কোথায় কোথায় সরকার বিশেষ প্রণোদনা দিচ্ছে। তা সে যা-ই হোক না, আসছে বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে পেশ করা হবে আগামী অর্থবছরের বাজেট। করোনা-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে এবারের বাজেট নিয়ে তাই আলোচনা চলছে সর্বত্র।

বাজেটের শুরু :বাজেট শব্দটি এলো কোথা থেকে? বাজেট একটি ইংরেজি শব্দ যা বাংলাদেশের সরকারি বিভিন্ন নথিপত্রে ব্যবহূত হয় বাজেট হিসেবেই। মানে বাজেটের তেমন লাগসই কোনো বাংলা শব্দ খুঁজে পাওয়া যায়নি। এই বাজেট শব্দটি এসেছে ফরাসি শব্দ ‘বোওগেট’ থেকে। যার অর্থ চামড়ার ব্যাগ। জানা যায়, ১৭২০ সালে ব্রিটেনের পার্লামেন্টে প্রথম জাতীয় বাজেট ও রাজস্বনীতি উত্থাপন করেন স্যার রবার্ট ওয়ালপোল। এর ঠিক ১৩ বছর পর ওয়ালপোল সরকারের করের বোঝা কমাতে তার রাজস্ব পরিকল্পনায় বিভিন্ন ধরনের পণ্য, যেমন—ওয়াইন, তামাক প্রভৃতির ওপর আবগারি শুল্ক ধার্য করার প্রস্তাব করেন। এতে সাধারণ জনগণ ক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে যে ‘উইগ পিয়ার উইলিয়াম দ্য বাজেট ওপেন অর অ্যান আনসার টু এ প্যাম্ফলেট’ নামে একটি পুস্তিকা লিখে ফেলেন। সেবারই প্রথম সরকারের রাজস্বনীতিতে বাজেট শব্দটি ব্যবহূত হয়েছে। কিন্তু, বাজেট আনুষ্ঠানিক রূপ পায় ১৭৬০ সালে।

বাংলাদেশের বাজেট :স্বাধীন দেশের প্রথম অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ বাংলাদেশের প্রথম বাজেট উপস্থাপন করেন। তাজউদ্দীন আহমদ ১৯৭২ সালের ৩০ জুন একই সঙ্গে ১৯৭১-৭২ ও ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেছিলেন। তাজউদ্দীন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বাজেট দিয়েছিলেন; সেই বাজেটের আকার ছিল ৭৮৬ কোটি টাকা। আর এ বছর আগামী ৯ জুন জাতীয় সংসদে ঘোষিত হবে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট। এটি হবে বাংলাদেশের ৫১তম (একটি অন্তর্বর্তীকালীন বাজেটসহ ৫২তম) পূর্ণাঙ্গ বাজেট এবং অর্থমন্ত্রী হিসেবে আ হ ম মুস্তফা কামালের চতুর্থ বাজেট। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের আকার হতে পারে ৬ লাখ ৭৫ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের (২০২১-২০২২) বাজেটের আকার ছিল ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা।

বাংলাদেশের বাজেট উপস্থাপনে তাজউদ্দীন আহমদ অনন্য এক অবস্থানে রয়েছেন। তিনিই একমাত্র পরিপূর্ণ রাজনীতিবিদ, যিনি সংসদে বাজেট উপস্থাপন করেছেন। স্বাধীনতা-পরবর্তী মোট ১৩ জন অর্থমন্ত্রী বা অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা সংসদে বাজেট উপস্থাপন করেছেন। তাজউদ্দীন আহমদ ছাড়া বাকিরা ছিলেন হয় অবসরপ্রাপ্ত আমলা অথবা অর্থনীতিবিদ বা ব্যবসায়ী। কেউই পূর্ণ রাজনীতিবিদ নন।

বাজেট উপস্থাপনের চালচিত্র :এক অর্থবছরে দুবার বাজেট উপস্থাপনের উদাহরণও আছে আমাদের। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ১৯৯৬-৯৭ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেন। এর পরে নির্বাচনের মাধ্যমে দায়িত্ব নিয়ে মূল আর্থিক কাঠামো ঠিক রেখে নতুন করে বাজেট উপস্থাপন করেন শাহ এ এম এস কিবরিয়া। আর সংসদে সমান ১২ বার বাজেট পেশ করে রেকর্ড করেছেন সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান এবং আবুল মাল আবদুল মুহিত। তবে টানা ১০ বার বাজেট দিয়ে আবুল মাল আবদুল মুহিত রেকর্ড গড়েছেন। মুহিত শেখ হাসিনার সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে টানা ১০টিসহ মোট ১২টি বাজেট পেশ করেছেন। এর আগে তিনি এরশাদ সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে ১৯৮২-৮৩ ও ১৯৮৩-১৪ এই দুই অর্থবছরের বাজেট পেশ করেছিলেন।

তাজউদ্দীন আহমদ তিনটি, এ এম এস কিবরিয়া ছয়টি, এম সাইদুজ্জামান চারটি বাজেট দেন। অর্থ-উপদেষ্টা ড. এ বি মীর্জ্জা আজিজুল ইসলাম দুটি এবং ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ একটি বাজেট পেশ করেন। এরশাদ সরকারের দুই অর্থমন্ত্রী এম এ মুনিম দুটি এবং ড. ওয়াহিদুল হক একটি বাজেট উপস্থাপন করেন। বিএনপি সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে ড. মীর্জা নুরুল হুদা একটি বাজেট দেন। খন্দকার মোশতাক সরকারের আমলে দেশের প্রথম টেকনোক্র্যাট অর্থমন্ত্রী হিসেবে ১৯৭৫-৭৬ অর্থবছরের বাজেট দেন ডক্টর এ আর মল্লিক।

চার মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের চার জন অর্থমন্ত্রী ২১টি বাজেট দিয়েছেন। বিএনপির তিন মেয়াদের শাসন আমলে তিন জন ১৬টি বাজেট উপস্থাপন করেছেন। জাতীয় পার্টির আমলে নয়টি বাজেট চার জন অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করেন। তিনটি বাজেট দিয়েছে দুটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার। বাজেট যে শুধু অর্থমন্ত্রী বা অর্থ উপদেষ্টা দিয়েছেন তা কিন্তু নয়। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাজেট উপস্থাপন করতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল অসুস্থ বোধ করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাজেটের বাকি অংশ সংসদে উপস্থাপন করেছিলেন। এছাড়া বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান সামরিক শাসক হিসেবে তিনটি বাজেট উপস্থাপন করেন।

বিভিন্ন দেশের অর্থবছর :দেশভেদে বাজেট পেশের সময় ভিন্ন। বাংলাদেশে যেমন জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে, সাধারণত জুন মাসের প্রথম বৃহস্পতিবার। এবার জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বাজেট পেশ হতে যাচ্ছে। পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, বাংলাদেশের অর্থবছর শুরু পহেলা জুলাই, শেষ ৩০ জুন। চীন, ব্রাজিল, সংযুক্ত আরব আমিরাত, স্পেনে অর্থবছর শুরু হয় পহেলা জানুয়ারি আর শেষ হয় ৩০ ডিসেম্বর। ভারত, ইংল্যান্ড, হংকং, কানাডা ও দক্ষিণ আফ্রিকায় অর্থবছর শুরু হয় পহেলা এপ্রিল, শেষ হয় ৩১ মার্চ। যুক্তরাষ্ট্র ও থাইল্যান্ডে অর্থবছর শুরু হয় পহেলা অক্টোবর, শেষ হয় ৩০ সেপ্টেম্বর।