দি ক্রাইম, শেরপুর : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যে শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার নন্নি ইউনিয়নে পাচারের উদ্দ্যেশ্যে মায়ের কাছ থেকে বাচ্ছাকে ছিনিয়ে গোপনে আটকে রাখা হাতির বাচ্ছাটি আজ মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) উদ্ধার করেছে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শেরপুর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ শাহীন কবীরের নেতৃত্বে শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার ২ নং নন্নী ইউনিয়নের নিশ্চিতপুর ব্রিজের পুর্ব পাশে মেইন রাস্তার দক্ষিন পাশে এই হাতি শাবকটির সামনের দুটি পা ও পেছনের একটি পা শেকল দিয়ে বাধা অবস্থায় দেখতে পায় শেরপুর জেলা শাখা নেতৃবৃন্দ ! অনেক খোঁজাখুঁজি করেও আশেপাশে কাউকে পাওয়া যায়নি। দিনব্যাপী নানান নাটকীয়তার মধ্যে স্থানীয় প্রভাবশালীদের রক্তচক্ষু, কুটকৌশল ও বিরোধিতা উপেক্ষা করে অবশেষে হাতি শাবকটি উদ্ধারসহ ও আসামীকে আটক করেছে।
নালিতাবাড়ী উপজেলার বনকুড়া গ্রাম হইতে ৬বছর বয়সী মাদি হাতির বাচ্চাটি জব্দ করা হয়, সেই সাথে আসামী হিসেবে মোঃ আব্দুর রউফ এবং আব্দুল করিম এর নামে নালিতাবাড়ী থানায় মামলা নং ২১ তারিখ ২৫/০৪/২২ মূলে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন,২০১২ এর ২৪ ধারা মোতাবেক মামলা দায়ের করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, স্থলভাগের সর্ববৃহৎ দেহাকৃতির প্রাণী হাতি এক জলজ্যান্ত বিস্ময়। সামাজিক প্রানী হিসেবে পরিচিত নিরীহ এই স্তন্যপায়ী জীব বনের স্বাস্থ্য ও উৎপাদনশীলতার অন্যতম নিয়ামক। তাই তাকে নিয়ে মানুষের কৌতূহলের অন্ত নেই। বিশ্বের যে ১৩ টি দেশে এখনও হাতি টিকে আছে বাংলাদেশ তার মধ্যে একটি। শেরপুর, জামালপুর, ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়, সিলেট, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের বিস্তৃর্ণ এলাকার পত্রঝরা ও চিরসবুজ বনে এক শতাব্দী আগেও সচরাচর বিচরণ করতো বন্যহাতি। বর্তমানে এরা চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জোলার চিরহরিৎ বনে সীমিত হয়েছে। এক সময়ে সমগ্র ঢাকা এলাকা জুড়েই ছিল হাতির বসবাস। হাতিরঝিল, হাতিরপুল, এলিফ্যান্ট রোড ইত্যাদি নামেই তার অস্তিত্বের জানান দেয়। পরিবেশ ও বনের এ অকৃত্রিম বন্ধু আজ মারাত্নক অস্তিত্বের সংকটে।
হাতি হলো জঙ্গলের প্রাণ। একটি হাতি প্রতিদিন প্রায় ৮ মন খাবার খায়, যা সংগ্রহ করতে তাকে গড়ে ৫০ মাইল পথ হাটতে হয়। কিন্তু পেটুক হলে কি হবে খাবারের সবটা হজম করার ক্ষমতা তার নেই। খাবারের মতোই সে সপ্তাহে যা মল ত্যাগ করে প্রায় ১ টন। সেই মলে থাকে হরেক রকম ফল ফসলের বীজ। যা হজম না হলেও অঙ্কুরোদ্গম ক্ষমতা বেড়ে যাওয়ায় উপযুক্ত পরিবেশে বৃক্ষরাজীর জন্ম ত্বরান্বিত ও বিস্তারে সহায়তা করে। বাকি মল ভূমির উর্বরতা বৃদ্ধি করে; ফলে সমৃদ্ধ হয় বনাঞ্চল।
বন্য হলেও এরা দলবদ্ধ ও সামাজিক প্রাণী। দলের বয়োজ্যেষ্ঠকে নেতা মানে, নেতৃত্বের আদেশ ও সমাজের অনুশাসন এরা অমান্য করেনা। দাদা- দাদি, নানা -নানী, বাবা- মা, চাচা- চাচি, মামা-মামী, ভাই ও বোনদের নিয়ে দলবদ্ধভাবে বসবাস করতে পছন্দ করে। মানুষের মতোই সন্তান লালন-পালন করে, বিপদে আপদে একজন অপরজনের পাশে দাঁড়ায়। সেই অবাক করা প্রাণীর জীবন প্রনালী এখন সৃষ্টির শ্রেষ্টতম জীব মানুষের অনাচারে হুমকির মুখে।
মানুষের অপরিনামদর্শী ও অবিবেচনা প্রসুত কর্মকান্ডের ফলে দিন দিন সংকুচিত হচ্ছে হাতির আবাসস্থল ও বিচরণ ক্ষেত্র। হাতির আবাসস্থল ধ্বংস করে মানুষের বসতি স্থাপন, বনভূমি কৃষি জমিতে রুপান্তর, বনভূমি জবরদখল, তাদের চলাচলের রাস্তায় বিঘ্ন সৃষ্টি ইত্যাদি কারণে হাতির এখন মহা দুর্দিন। মানুষ চারণভূমি কেড়ে নিচ্ছে এমন কি যে রাস্তায় সে বংশপরম্পরায় যাতায়াত করতে অভ্যস্ত সেখানে নির্মাণ করেছে সড়ক, মহাসড়ক, রেলপথ। ফলে বাসস্থান যেমন সংকুচিত হয়েছে তেমনি বিঘ্ন ঘটেছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ও বিচরণেও।
ইদানীং বনে তীব্র খাদ্য সংকটে বাধ্য হয়ে তারা লোকালয়ে আসছে। আজ মানুষ তাকে ফল-ফসলের শত্রু ভাবছে ঠিকই কিন্তু একটু ঠাণ্ডা মাথায় ভাবলেই বুঝা যাবে সে অন্য কারো জায়গায় নয় বরং তার চিরপরিচিত পিতৃপুরুষের বসতবাটি বা চারণভূমিতেই আজ নিদারুনভাবে অবাঞ্চিত। ফলে শুরু হয়েছে হাতি ও মানুষের দ্বন্দ্ব। কতিপয় অশুভ বুদ্ধির মানুষ নানানভাবে তাদেরকে মেরে ফেলতে উঠে পড়ে লেগেছে।
Post Views: 295



