নিজস্ব প্রতিবেদক: বন্দর নগরীর বীর্জাখালের মুখে বাঁধ থাকার কারণে পানি নামতে না পারায় প্রতিনিয়ত ৫০ হাজার মানুষ দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন। অনাবৃষ্টিতেও অস্বাভাবিক হারে পানিতে ডুবে থাকায় মহানগরীর ৬নং পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। এই ওয়ার্ডের জনসাধরণ এখন পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপনের পাশাপাশি বেড়েছে তাদের চরম দুর্ভোগ দুর্দশাও।
স্থানীয়দের দাবি, বীর্জাখালের মুখে বাঁধ থাকার কারণে এখানে পানি নামতে পারে না। আগে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হোক। একদিকে, করোনার কারণে মানুষ এমনিতেই আর্থিক কষ্টে আছে। মরার উপর খাঁড়ার ঘা এর মত এই এলাকার বাসিন্দাদের জন্য অকালের জলাবদ্ধতা নাগরীক জীবনকে অতিষ্ট করে তুলেছে। শ্রমজীবী মানুষ যথাসময়ে কাজে যেতে পারে না। এমনকি সময়মত মসজিদে পর্যন্ত যেতে পারে না। এই পরিস্থিতিতে আত্মীয়স্বজনও আসতে চায় না। খাজা রোডের নালা দিয়ে বহদ্দারহাট থেকে পানি এই ওয়ার্ডে প্রবেশ করে। কিন্তু তা নিচের দিকে না নেমে এখানে থমকে আছে।
সরেজমিনে নগরীর ৬ নম্বর পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ডের ইলিয়াছ ব্রাদার্সের বাড়ির পুকুর পাড়ের মসজিদ থেকে জোহরের নামাজ পড়ে বের হওয়া একাধিক মুসল্লি বলেন, খাজা রোডের আশপাশের অর্ধলক্ষাধিক বাসিন্দার এই দুর্ভোগ এখন ললাটের লিখন হয়ে গেছে।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, ৬নং পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ডের জীবন মিস্ত্রি বাড়ি, ডাইলের বাপের বাড়ি, অর আলীর বাড়ি, পেটারি পাড়া, হাবিলদার বাড়ি, মাইজপাড়া এবং আশপাশের প্রায় ৫০ হাজার মানুষের বসবাস। তবে অনাবৃষ্টিতেও এই খরার সময়েও তারা পানিবন্দী। তাও দুর্গন্ধযুক্ত নোংরা পানি। সড়ক, বসতঘর, পুকুর সর্বত্র পানি আর পানি। স্থায়ীভাবে পানি জমে থাকার কারণে অনেকের ঘরের নিচতলায় রান্না হয় না দীর্ঘদিন ধরে। বাথরুম ব্যবহার করতে পারে না। শিশুরা স্কুলে যেতে গেলে কাপড় নষ্ট হয়ে যায়। তাছাড়া পুকুর আর সড়ক নোংরা পানিতে একাকার। একটু অসতর্ক হলেই পানিতে ডুবে যাওয়ার আশঙ্কার কারণে অনেক পিতা-মাতা তাদের শিশুদের স্কুলে পাঠাতে ভয় পান। বদ্ধ পানিতে মশার উৎপাত এতই বেড়ে গেছে যে, ঘরের মধ্যে শান্তিতে বসে পড়তেও পারে না।
সরেজমিনে আরো দেখা গেছে, ডাইলের বাপের বাড়ি এবং জীবন মিস্ত্রির বাড়ি এবং নুর নগর হাউজিং সোসাইটির মাঝে ছিল বিশাল ধানি জমি। কিন্তু বর্তমানে দেখে বুঝার উপায় নেই যে, একসময় এখানে ধান এবং অন্যান্য ফসলাদি চাষ হত। আবর্জনার পানিতে পুরো জমি এখন ডোবায় পরিণত হয়েছে। এই পানিতে মাছ চাষ করছে স্থানীয় প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তি। একারণে জমির প্রকৃত মালিকরাও সেখানে যেতে পারছে না। অনেক জমির মালিক নিরুপায় হয়ে কম দামে জমি বিক্রি করে চলে যাচ্ছেন।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মাছ চাষ সিন্ডিকেটে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি উভয়দলের লোক সম্পৃক্ত আছে। যে কারণে ভয়ে কেউ কথা বলে না।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এলাকায় অকাল জলাবদ্ধতার জন্য এই মাছের প্রজেক্টও অনেকখানি দায়ী। প্রজেক্টে প্রয়োজনীয় পানি ধরে রাখতে তারা বিভিন্ন পয়েন্টে বাঁধ দিয়েছে। এসব বাঁধের কারণেও পানি নামতে পারে না।
এদিকে এহেন পরিস্থিতিতে ৬ নম্বর পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আশরাফুল আলম বলেন, ডুবে যাওয়া সড়ক চলাচল উপযোগী করার জন্য উঁচু করা হবে। এ লক্ষ্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে।
মূলত বীর্জা খালে মেগা প্রকল্পের কাজ করার জন্য বাঁধ দিয়েছে। ওই খাল দিয়ে পানি চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। একারণে তার ওয়ার্ডের একফোঁটা পানিও বীর্জা খাল দিয়ে নিষ্কাশন হতে পারছে না। অথচ এই খালটি হচ্ছে এই এলাকার পানি নিষ্কাশনের অন্যতম পথ।
মাছের প্রজেক্ট প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে এই প্রজেক্টের বাঁধ তিনি বেশ কয়েকবার কেটে দিয়েছেন। পরবর্তীতে কেউ সেখানে আবারো বাঁধ দিয়ে দেয়। তবে বীর্জা খাল দিয়ে পানি নিষ্কাশন বন্ধ থাকার কারণে এখন মাছের প্রজেক্টের বাঁধ কেটেও খুব বেশি লাভ হচ্ছে না। তাই এখন ওই বাঁধ কাটার উপর খুব বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়নি উল্লেখ করে বলেন, বীর্জা খালের বাঁধ কেটে দিলে মাছের প্রজেক্টের বাঁধ তিনি দায়িত্ব নিয়ে অপসারণ করবেন।
৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ আবু সৈয়দ বলেন, তার মেয়ে দাখিল পরীক্ষার্থী। কিন্তু মশার কারণে ঘরে বসে পড়তে পারে না। এলাকার অনেকেই মশাবাহিত ও পানিবাহিত রোগে ভুগছে উল্লেখ করে বলেন, প্রচন্ড খরায় যেখানে দেশের বিভিন্ন এলাকার পুকুরের পানি শুকিয়ে গেছে, সেখানে তাদের এলাকার পুকুরসমূহ ময়লা পানিতে ডুবে গেছে। এলাকার মানুষ এখন আর পুকুরের পানি ব্যবহার করতে পারে না। ওয়াসার পানি ব্যবহার করাও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। কারণ ওয়াসার পানির লাইন ময়লা পানির নিচে। কোথাও কোন ছিদ্র হলে ওই পানি আর নিরাপদ থাকবে না। এসব সমস্যার কারণে বেশির ভাগ ঘরে ভাড়াটিয়া নেই।
স্থানীয় আরেক বাসিন্দা বলেন, বীর্জাখালের মুখে বাঁধ থাকার কারণে পানি নামতে পারে না। আগে সেদিকে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হোক। একদিকে, করোনার কারণে মানুষ এমনিতেই আর্থিক কষ্টে আছে। মরার উপর খাঁড়ার ঘা এর মত এই এলাকার বাসিন্দাদের জন্য অকালের জলাবদ্ধতা মানুষের জীবনকে অতিষ্ট করে তুলেছে।



