বিশেষ প্রতিবেদক: যে শিক্ষা শিখে জাতি উন্নত হবে সেই শিক্ষার শুরুতেই দুর্নীতি দিয়ে শুরু হলে প্রজন্ম কি শিখবে ? এমনটি প্রশ্ন সচেতন মহলের। ‘চউক ফৌজদারহাট পূর্নবাসন এলাকার সমাজ কল্যাণ সংস্থা’ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত প্রভাতী মাধ্যমিক শিক্ষা নিকেতন’র নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন এলাকাবাসীসহ সমাজ কল্যাণ সংস্থার সদস্যরা।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় ১১০০ জনের মত শিক্ষার্থী আছে বলে জানা যায়। উক্ত শিক্ষার্থীর অভিভাবকদেরও পাত্তা দিচ্ছে না। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি। ক্ষমতার অপব্যবহার করে যা ইচ্ছা তাই করে আসছে স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক।
এই অনিয়ম দুর্নীতি থেকে প্রতিকার পেতে সরকারের বিভিন্ন মহলের দৃষ্টি আর্কষণ করে কোন লাভ বা প্রতিকার না পেয়ে হতশায় এলাকাবাসীসহ সমাজ কল্যাণ সংস্থা সদস্যরা।
স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি হওয়ার পর প্রথমেই বার নাম্বারের সিরিয়ালে থাকা সহকারী শিক্ষক তাসলিমা সুলতানাকে প্রধান শিক্ষক করলেন সভাপতি এ এইচ এম আবুল খায়ের।
বিধি অনুযায়ী ১২ বছরের অভিজ্ঞা সম্পন্ন শিক্ষকই উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হতে পারে। সে ক্ষেত্রে তাসলিমা সুলতানার অভিজ্ঞতা মাত্র ৫ (পাঁচ) বছর।
তালিকা অনুযায়ী স্কুল পরিচালনা কমিটি উক্ত স্কুলের সহকারী শিক্ষক, পারভীন বানো, ১৯ বছরের অভিজ্ঞা; গোলজারুন নেছা, ১৮ বছরের অভিজ্ঞা; সেলিনা পারভীন, ১৮ বছরের অভিজ্ঞ উদয়ন বিশ্বাস, ১৬ বছরের অভিজ্ঞ ঝুলন কুমার গুপ্ত, ২৯ বছরের অভিজ্ঞ রুবিনা ইয়াসমিন, ১৬ বছরের অভিজ্ঞা; নাছিমা আক্তার, ১২ বছরের অভিজ্ঞা; উম্মে আয়মন, ১১ বছরের অভিজ্ঞা; শিরীন আক্তার, ১১ বছরের অভিজ্ঞা; মো. কাহ নেওয়াজ, ১০ বছরের অভিজ্ঞা; পপি সাহা, ১০ বছরের অভিজ্ঞা; অনিম রায়, ১১ বছরের অভিজ্ঞা; আর তাসলিমা সুলতানার অভিজ্ঞা হলো মাত্র ৭ বছর। সবচেয়ে কম অভিজ্ঞা সম্পন্ন শিক্ষক হলো তাসলিমা সুলতানা।
স্কুলে চাকুরীরত শিক্ষকদের তালিকা অনুযায়ী তাসলিমা সুলতানার সিরিয়াল বারতম। ১২তম সহকারী শিক্ষক হয়ে তাসলিমা সুলতানা কিভাবে প্রধান শিক্ষক হয় তা বোধগম্য নয় বলে সচেতন মহলের অভিমত। সচেতন মহলের আরো অভিমত তাহলে তাসলিমা সুলতানার সাথে স্কুল কমিটির সভাপতি আবুল খায়েরের কি সর্ম্পক?
এ এইচ এম আবুল খায়েরের বাড়ী চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তী থানায় বলে জানা যায়। তিনি চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে রূাপালী ইন্সুরেন্স কোম্পানীতে চাকরী করেন। বর্তমান প্রধান শিক্ষক তাসলিমা সুলতানার বাড়ী চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বলে জানা যায়। আবুল খায়ের ও তাসলিমা চট্টগ্রাম শহরে পাশাপাশি থাকেন। তাদের সাথে পারিবারিকভাবে খুব ভাল সর্ম্পক বলে এলাকাবাসী সুত্রে জানা যায়। এই পারিবারিক ভাল সর্ম্পক বজায় রাখতে গিয়েই খুব কম অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হওয়ার পরও তাসলিমা সুলতানাকে প্রধান শিক্ষক করেছে স্কুল কমিটির সভাপতি আবুল খায়ের।
কেন কি কারণে তাসলিমা সুলতানাকে আইন-কানুন অমান্য করে প্রধান শিক্ষক পদে বসিয়েছে আবুল খায়ের তা সচেতন মহলের ভাবনায় আসছে না বলে সরকারের বিভিন্ন মহলে অভিযোগকারীরা জানান।
বিধি মোতাবেক একজন প্রধান শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে ১২ বছরের অভিজ্ঞা থাকার কথা সেই ক্ষেত্রে তাসলিমা সুলতানার অভিজ্ঞা মাত্র ৫ বছর। এই বিষয়ে স্কুল পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি এ এইচ এম আবুল খায়ের কে ০১৮১৯৩১৯৫৯২ ফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আমরা কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক তাসলিমা সুলতানাকে নিয়োগ দিয়েছি। প্রধান শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে ১২ বছরের অভিজ্ঞা সম্পন্ন শিক্ষককে নিয়োগ দেওয়ার বিধান আছে। সে ক্ষেত্রে ৫ বছরের অভিজ্ঞা সম্পন্ন শিক্ষককে কিভাবে নিয়োগ দিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের এটা নন-এমপিওভূক্ত স্কুল। আমরা যেভাবে চাই সেই ভাবে হবে। শুধু মাত্র শিক্ষকেরা ঠিকভাবে বেতন পেলেতো হলো।
তবে সরকারী বিধি মোতাবেক প্রধান শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে অবশ্যই ১২ বছরের অভিজ্ঞা থাকতে হবে। কেন কি কারণে তিনি তাসলিমা সুলতানাকে নিয়োগ দিয়েছেন তা বোধগম্য নয়। এখানে আবুল খায়েরের কথায় অনেক রহস্য লুকিয়ে আছে।
প্রধান শিক্ষক তাসলিমা সুলতানা একবার প্রধান শিক্ষক পদ থেকে পদত্যাগ করেছিল। সেই পদত্যাগ পত্রটি স্কুল পরিচালনা কমিটি গ্রহণও করেছিল। কিন্তু কিছু দিন পর তিনি আবার পুনঃরায় নিয়োগ ছাড়াই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককের আসনে বসে স্কুলের দায়িত্ব পালন করছে। এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি নানা রকমের কথা বলতে থাকেন। আসল কথার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তিনি এড়িয়ে যেতে থাকেন।
চাকরী হারোনোর ভয়ে বিদ্যালয়ের কোন শিক্ষক সভাপতি কিংবা প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কথা বলতে রাজি নয়। তবে একাধিক সুত্রে জানা গেছে, আবুল খায়ের এবং তাসলিমা সুলতানা দু’জনেই মামলাবাজ। কোন কিছু হলেই তারা আসল ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য মামলায় চলে যান।
প্রসঙ্গত, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, চট্টগ্রামের বিদ্যালয় পরিদর্শক প্রফেসর মো. আবু তাহের স্বাক্ষরিত ৩০-০৫-২০১৯ সালে একটি কমিটি অনুমোদিত হয়। উক্ত অনুমোদিত কমিটিতে এ এইচ এম আবুল খায়ের সভাপতি; প্রধান শিক্ষক, সদস্য সচিব; হাবিবুর রহমান বাবুল অভিভাবক প্রতিনিধি; আব্দুছ ছাত্তার, অভিভাবক প্রতিনিধি; নাছিমা আক্তার, অভিভাবক প্রতিনিধি; গোলজারুন নেছা, শিক্ষক প্রতিনিধি; উদয়ন বিশ্বাস, শিক্ষক প্রতিনিধিসহ ৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি ২ বছরের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক ড. বিপ্লব গাঙ্গুলী উক্ত বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করার জন্য সমাজ সমাজ সেবা অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক হাসান মাসুদকে একটি চিঠি দেন। কিন্তু হাসান মাসুদ চলতি মাসের গত ৬ এপ্রিল উল্লেখিত তদন্ত কায সমাজ সেবা অধিদপ্তরের কোনভাবে সম্পকযুক্ত নহে বিধায় স্মারক নং ৪১.২২.১৫০০. ০৮১. ১৬. ০০২. ১৮.৭১ মূলে সংযুক্ত কাগজ পত্রসহ শিক্ষা বোর্ড এর চেয়ারম্যান বরাবরে ফেরৎ পাঠানো হয়।
চউক ফৌজদারহাট পুর্নবাসন এলাকা সমাজ কল্যাণ সংস্থা (রেজিঃ নং চট্টঃ ১৯৭৯/৯৭) বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম সমাজ কল্যাণ সংস্থার উপ-পরিচালকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি দি ক্রাইমকে বলেন, সমাজ কল্যাণ থেকে অনুমোদিত এই সংস্থাটির বিরুদ্ধে নানা অয়িমের অভিযোগ আছে। কমিটিতে থাকার জন্য সভাপতি আবুল খায়ের কোর্টে একটি রিট পিটিশন করেছেন। কোর্টের রিট পিটিশন নিম্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কোন কিছু বলা যাচ্ছে না।
এই বিষয়ে জানতে এডহক কমিটির সদস্য সচিব মোসাদ্দেক হোসেন সিরাজের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি দি ক্রাইমকে জানান, এডহক কমিটি গঠন করায় এই দুর্নীতিবাজরা কোর্টে রিটপিটিশন করেন। দুর্নীতি না করলে তিনি এমনটি করবেন কেন? [সংশোধিত] – (কিস্তি-১)




