দি ক্রাইম ডেস্ক: আনোয়ারা রেজিস্ট্রার অফিসে দলিল সম্পাদনে অতিরিক্ত টাকা আদায় ও নানা হয়রানি এক রকম নিয়মে পরিণত হয়েছে। স্থানীয়দের মতে সাব–রেজিস্ট্রার অফিস যেন অনিয়মের হাট!
ওপেন সিক্রেট এসব অনিয়মের প্রতিবাদে মাঠে নেমেছে খোদ আনোয়ারা উপজেলা দলিল লেখক সমিতি। গত এক সপ্তাহ ধরে সব ধরনের দলিল সম্পাদন কাজ বন্ধ রেখে টানা কর্মবিরতি পালন করে যাচ্ছেন তারা। ভুক্তভোগী ও স্থানীয়দের দাবি সাব–রেজিস্ট্রার অফিসের অনিয়ম, দুর্নীতি ও হয়রানির কারণে সাধারণ ভূমি দাতা– গ্রহীতারা অনেকটা জিম্মি হয়ে পড়েছে। সংশ্লিষ্টরা এ ঘটনার বিভাগীয় তদন্তপূর্ব দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তি মূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা রেজিস্ট্রার ও জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েছে। এ নিয়ে সাব–রেজিষ্ট্রার ও দলিল লেখকরা মুখোমুখি অবস্থানে অনড় রয়েছেন বলে জানা গেছে। অন্যদিকে অনৈতিক টাকা আদায় ও নানা হয়রানির কারণে দাতা গ্রহীতাদের মাঝে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তবে আনোয়ারা উপজেলা সাব–রেজিস্ট্রার জুবায়ের হোসেন তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ‘মিথ্যা’ ও ‘ভিত্তিহীন’ বলে জানিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট অফিস, দলিল লেখক সমিতি ও ভুক্তভোগীদের দেওয়া তথ্য মতে, প্রতিটি দলিলে একটি নির্দিষ্ট হারে সরকারের নির্ধারিত ফি এর বাইরে টাকা দিতে হয় জমির দলিল গ্রহীতাদের। এ ছাড়া নানা ধরনের হয়রানিরও অভিযোগ রয়েছে। এসবে অতিষ্ঠ হয়ে দলিল লেখক সমিতির ডাকে গত ১ সপ্তাহ ধরে কলমবিরতি পালন করেছেন দলিল লেখকরা। এদিকে দলিল লেখকদের কর্মবিরতির কারণে দাতা–গ্রহীতারা পড়েছেন বিপাকে। তাদের ভোগান্তি চরমে উঠেছে। সচেতন মহল ও ভুক্তভোগীরা অতি দ্রুত এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য দাবি জানিয়েছে।
দলিল লেখক সমিতির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সাব রেজিস্ট্রি অফিসে অবৈধ টাকা ছাড়া কোনো দলিল স্বাক্ষর করেন না সাব রেজিস্ট্রার। কেউ প্রতিবাদ করলে তার ফাইল ফেলে রাখা হয় এবং নানা অজুহাতে হয়রানি করা হয়। প্রতিবছর আমাদের লাইসেন্স নবায়নের জন্য সাব রেজিস্ট্রারের সুপারিশ লাগার কারণে আমরা অনেকটা জিম্মি হয়ে পড়েছি।
আনোয়ারা দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে জুবায়ের হোসেন সাব–রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগদান করার পর থেকে আমরা নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছি। বিভিন্ন দলিলে সরকার নির্ধারিত রেজিস্ট্রেশন ফি এর বাইরে অতিরিক্ত টাকা আদায় ছাড়া দলিল সম্পাদন হচ্ছে না। তাই আমরা অতিরিক্ত টাকা আদায়ের প্রতিবাদে গত এক সপ্তাহ ধরে দলিল সম্পাদন বন্ধ রেখেছি।
সাব–রেজিস্ট্রার জুবায়ের হোসেন তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ ‘মিথ্যা’ ও ‘ভিত্তিহীন’ দাবি করে বলেন, সরকারি নিয়ম মেনে আমি অফিসের দলিল রেজিস্ট্রেশন কাজ সম্পন্ন করে থাকি। অফিসে লোকজন কম থাকায় ঝাড়ুদার বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করে থাকেন বলে তিনি জানান। দলিল লেখকদের কর্মবিরতির বিষয়ে তিনি বলেন, দলিল লেখকরা চাইলে কর্মবিরতি পালন করতে পারেন কারণ তারা স্বাধীন। তবে দলিল লেখকদের বিরুদ্ধেও নানা অভিযোগে আছে বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম জেলা রেজিস্ট্রার খন্দকার জামিলুর রহমান বলেন, আনোয়ারা সাব–রেজিস্ট্রার অফিসের বিরুদ্ধে আমার কাছে লিখিত কোনো অভিযোগ নেই। আর দলিল লেখকদের কর্মবিরতির বিষয়টিও আমার জানা নেই। তবে অনিয়মের অভিযোগ পেলে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে বলে জানান তিনি।




