বিজন কুমার বিশ্বাস, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ কক্সবাজার টেকনাফ রুটে মানবপাচার ভয়াবহ রুপ নিয়েছে। নিঃস্ব হচ্ছে ভুক্তভুগী পরিবার গুলো, মানবপাচারকারী চক্রের ফাঁদে পড়ে জীবন দিতে হয়েছে অনেক ভুক্তভোগীর। কক্সবাজারের টেকনাফ কেন্দ্রিক মানবপাচার ঠেকাতে একের পর এক ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত রেখেছে বিজিবি, কোস্টগার্ড, র্যাব সহ অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। কখনো গহীন পাহাড়ে আবার কখনো সাগর উপকূলে এই অভিযান অব্যাহত রাখা হয়েছে।
এসব অভিযানে গত ১ মাসে ১৩টি অভিযানে ৩৪৭ জন ভূক্তভোগীকে উদ্ধার এবং ৪৭ জন পাচারকারীকে আটক করা হয়েছে। প্রায় একমাসের চেষ্টায় চক্রের অন্যতম নাটের গুরুকে গ্রেফতারে সমর্থ হয়েছে যৌথ বাহিনী। চিহ্নিত হয়েছে এই চক্রে জড়িত ভিনদেশীরাও। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে টেকনাফের সাগর উপকূল মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন অভিযান চালিয়ে পাচারের আগমূহুর্তে ২৯ জনকে উদ্ধার করেছে বিজিবি। এসময় আটক করা হয়েছে চক্রের ৩ সদস্যকে।
বিজিবির টেকনাফস্থ ২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো: আশিকুর রহমান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, মঙ্গলবার ভোরে রাজাছড়ার গহীন পাহাড়ে সশস্ত্র পাচারকারীদের গোপন আস্তানা গুড়িয়ে দেওয়ার পর জিম্মিশালা থেকে ৬ জনকে উদ্ধার করে অস্ত্র ও গুলি সহ একজনকে আটক করা হয়। কিন্তু অভিযানে পালিয়ে যায় পাচারকারি চক্রের ৮ সদস্য।
এই অভিযানে সূত্র ধরে বিজিবি সমুদ্র উপকূলের নজরধারি বাড়ায়।
বিজিবি সুত্রে জানা যায়, অভিযান চলাকালে পালিয়ে যাওয়া চক্রের সদস্যরা কিছু ভুক্তভোগীকে সমুদ্রপথে পাচারের চেষ্টা করবে। সন্ধ্যায় মেরিন ড্রাইভ সৈকতের কৌশলগত বেশকিছু পয়েন্টে বিজিবি’র বিশেষ টহল দলের সদস্যরা নিবিড় নজরদারি শুরু করে। রাত গভীর হলে সমুদ্র উপকূলে থেকে সন্দেহজনক গতিবিধি লক্ষ্য করা যায়। মানব পাচারকারী চক্র গোপনে ২৯ জন ভুক্তভোগীকে একটি নৌযানে গভীর সাগর দিয়ে পাচারের জন্য প্রস্তুতকালে ২৯ জনকে উদ্ধার করে। ঘটনাস্থল থেকে মানব পাচারের দায়ে চক্রটির ৩ জনকে আটক করা হয়।
আটকরা হলেন, টেকনাফ সদর ইউনিয়নের মহেশখালীয়াপাড়ার মৃত মোজাহার মিয়ার ছেলে মো: সলিম (৩৫), মৃজিবুর রহমানের ছেলে নুরুল আবছার (১৯), কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে করিমুল্লাহর ছেলে মনসুর আলম (২২)। অভিযানে সময় পালিয়ে যাওয়া ৯ থেকে ১০ জনের মধ্যে ৩ জনকে শনাক্ত করার তথ্য জানিয়েছে বিজিবি। এর হলো, মহেশখালীয়া পাড়ার মাহমুদুল হক (৩১), সৈয়দুল ইসলাম (৩৭), আজিজুল হক (৩০)।
অভিযানে ১ টি চাকু, ১টি মোটর সাইকেল, ১টি ইঞ্জিন চালিত সাম্পান উদ্ধার করা হয়েছে।
বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন, মঙ্গলবার দিনটি টেকনাফ সীমান্তে মানব পাচারকারী ও সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রগুলোর জন্য একটি চরম দুঃসংবাদ বহন করে এনেছে। আমরা ভোরে পাহাড়ের দুর্গম চূড়া থেকে জিম্মি উদ্ধার করেছি এবং সন্ধ্যায় সমুদ্র উপকূলে মানব পাচার বানচাল করেছি। সর্বশেষ দুইটি সফল মানব পাচার বিরোধী অভিযানের মাধ্যমে বিজিবি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে, টেকনাফ সীমান্তের পাহাড় থেকে সমুদ্রের জলসীমা পর্যন্ত কোনো অপরাধীর জন্য এক ইঞ্চি জায়গাও নিরাপদ নয়। মানবতা বিরোধী এমন জঘন্য অপরাধ আমরা কোনোভাবেই বরদাশত করব না। আমাদের এই ধারাবাহিক ও কঠোর নজরদারি এবং অভিযান অব্যাহত থাকবে।
উদ্ধারকৃত ২৯ জন ভুক্তভোগীকে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক প্রক্রিয়া শেষে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে। আটক ৩ মানব পাচারকারীর বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে মামলা রুজু করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানা যায়।
এর আগে মঙ্গলবার ভোরে টেকনাফের গহীন পাহাড়ে মানবপাচারকারিদের জিম্মিশালা থেকে ৬ জনকে উদ্ধার করেছে বিজিবি। এসময় অস্ত্র ও গুলি সহ পাচারকারি চক্রের ৮ সদস্য পালিয়ে গেলেও একজনকে আটক করা গেছে।