দি ক্রাইম ডেস্ক: পদ্মার তীরে দাঁড়িয়ে মাটির সঙ্গে মিশে যাওয়া ভিটেমাটির শেষ চিহ্ন খুঁজছিলেন মোসলেম শেখ (৬৫)। তার চোখে পানি। মুখে কেবল একটাই কথা ‘এইখানে আমার বাড়ি আছিল…’। এই বাড়ি, এই জমি যা একসময় ছিল তার গর্ব, সেই সব এখন শুধুই স্মৃতি। এক মাস আগে পদ্মার ভয়াল ভাঙনে ২০ শতাংশ জমিসহ তাঁর বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

শুধু মোসলেম শেখ নন, শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়নের আহম্মদ মাঝিকান্দি, মনসুর মোল্যা কান্দি ও আলীম উদ্দিন বেপারী কান্দি এই তিনটি গ্রামই আজ আর পদ্মার মানচিত্রে নেই। বিগত দুই বছরে নদীর করাল গ্রাসে হারিয়ে গেছে ৭০০ পরিবারের বসতবাড়ি, ২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক এবং সাড়ে ৪ হাজার বিঘা ফসলি জমি।

২০১০ সালের পর, চর জেগে উঠলে বসতি গড়ে তোলেন স্থানীয় মানুষ। গড়ে ওঠে ঘরবাড়ি, বিদ্যালয়, বাজার, ক্লিনিক। সবই ছিল পদ্মার মাঝেই এক নতুন স্বপ্নের বাস্তবায়ন। কিন্তু ২০২৩ সালে সেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায়।

ভাঙনে প্রথমে বিলীন হয় পাইনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এরপর ২০২৪ সালের জুলাই থেকে আবারও শুরু হয় ধ্বংসযজ্ঞ। ২৮ আগস্ট পদ্মার গর্ভে হারিয়ে যায় রিজিয়া আমিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কমিউনিটি ক্লিনিক।

গ্রাম তিনটির ৭০০ পরিবার এখন ছিন্নমূল। কেউ আশ্রয় নিয়েছেন বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) অধিগ্রহণকৃত জমিতে, কেউ আবার ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন নাওডোবার আশেপাশে।

কিন্তু আশ্রয় মানেই নিরাপত্তা নয়। বিবিএ’র জমিতে আশ্রয় নেয়া পরিবারগুলোকে জমি ছাড়ার নোটিশ ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। হাসেম মৃধা (৬৭) একসময় ছিলেন কৃষক। আজ তিনি আশ্রিত। বললেন, ৭ বিঘা ফসলি জমি আর ৩ বিঘা জমিতে বাড়ি আছিল। কিছুই নাই এখন। শুধু বউ আর সন্তান নিয়া সরকারি জমিতে থাকি। সামনের দিন কেমনে কাটুম, কিচ্ছু জানি না।

জানা গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাটি ছিল পদ্মা সেতুর ৩৬ নম্বর থেকে ৪৪ নম্বর পিয়ারের সংলগ্ন ভাটিতে। স্থানীয়রা বহুবার মানববন্ধন, আবেদন, এমনকি রাজনৈতিক নেতাদের কাছে ধরনা দিয়েছেন। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বা স্থানীয় প্রশাসন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি।

উপজেলা প্রশাসন থেকে এখন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত ৪০টি পরিবারকে দেওয়া হয়েছে মাত্র ২ বান্ডিল টিন ও ৬ হাজার টাকা করে নগদ সহায়তা। আর কিছু পরিবার পেয়েছে অল্প কিছু খাদ্য সহায়তা। শুধু বসতবাড়ি নয়, হারিয়ে গেছে শিক্ষা ও চিকিৎসার প্রধান অবলম্বনগুলোও।

রিজিয়া আমিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ইমরান আহমেদ জানালেন, চোখের সামনে বিদ্যালয়টা নদীতে তলাই গেল। আমরা তো কিছুই করতে পারিনি। এখন দক্ষিণ পাড়ে একটা বাসায় স্কুল চালাই, কিন্তু ছাত্র পাই না। কারণ ঐ চরের ৭০০ পরিবার ভাঙনের মুখে বিভিন্ন স্থানে সরে গেছে।

পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য হাপন মৃধার বাড়ি আহম্মদ মাঝিকান্দি গ্রামে। এবছর ভাঙনে তার বসত বাড়ি ও ফসলি জমি বিলীন হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ভাঙন ঠেকানোর জন্য স্থানীয় প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতাসহ বিভিন্ন স্থানে আমরা গিয়েছি। কেউ আমাদের পাশে দাঁড়ায়নি। বাপ-দাদার ভিটা হারিয়ে আমরা এখন নি;স্ব। এই মুহুর্তে গৃহহীন মানুষগুলোর পুর্নবাসন প্রয়োজন।

জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাবেরী রায় বলেন, এবছর নাওডোবা এলাকায় পদ্মার দুই তীরেই ভাঙন ছিল। দক্ষিন তীরে পদ্মা সেতুর নানা অবকাঠামো থাকার কারণে ভাঙন ঠেকানোর গুরত্ব বেশি পেয়েছে। তাই চরের দিকে আমরা নজর দিতে পারিনি। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থদের কিছু সহায়তা করা হয়েছে। তাদের পুর্নবানের জন্য খাস জমির সন্ধান করা হচ্ছে।

দি ক্রাইম ডেস্ক: পদ্মার তীরে দাঁড়িয়ে মাটির সঙ্গে মিশে যাওয়া ভিটেমাটির শেষ চিহ্ন খুঁজছিলেন মোসলেম শেখ (৬৫)। তার চোখে পানি। মুখে কেবল একটাই কথা ‘এইখানে আমার বাড়ি আছিল…’। এই বাড়ি, এই জমি যা একসময় ছিল তার গর্ব, সেই সব এখন শুধুই স্মৃতি। এক মাস আগে পদ্মার ভয়াল ভাঙনে ২০ শতাংশ জমিসহ তাঁর বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

শুধু মোসলেম শেখ নন, শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়নের আহম্মদ মাঝিকান্দি, মনসুর মোল্যা কান্দি ও আলীম উদ্দিন বেপারী কান্দি এই তিনটি গ্রামই আজ আর পদ্মার মানচিত্রে নেই। বিগত দুই বছরে নদীর করাল গ্রাসে হারিয়ে গেছে ৭০০ পরিবারের বসতবাড়ি, ২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক এবং সাড়ে ৪ হাজার বিঘা ফসলি জমি।

২০১০ সালের পর, চর জেগে উঠলে বসতি গড়ে তোলেন স্থানীয় মানুষ। গড়ে ওঠে ঘরবাড়ি, বিদ্যালয়, বাজার, ক্লিনিক। সবই ছিল পদ্মার মাঝেই এক নতুন স্বপ্নের বাস্তবায়ন। কিন্তু ২০২৩ সালে সেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায়।

ভাঙনে প্রথমে বিলীন হয় পাইনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এরপর ২০২৪ সালের জুলাই থেকে আবারও শুরু হয় ধ্বংসযজ্ঞ। ২৮ আগস্ট পদ্মার গর্ভে হারিয়ে যায় রিজিয়া আমিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কমিউনিটি ক্লিনিক।

গ্রাম তিনটির ৭০০ পরিবার এখন ছিন্নমূল। কেউ আশ্রয় নিয়েছেন বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) অধিগ্রহণকৃত জমিতে, কেউ আবার ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন নাওডোবার আশেপাশে।

কিন্তু আশ্রয় মানেই নিরাপত্তা নয়। বিবিএ’র জমিতে আশ্রয় নেয়া পরিবারগুলোকে জমি ছাড়ার নোটিশ ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। হাসেম মৃধা (৬৭) একসময় ছিলেন কৃষক। আজ তিনি আশ্রিত। বললেন, ৭ বিঘা ফসলি জমি আর ৩ বিঘা জমিতে বাড়ি আছিল। কিছুই নাই এখন। শুধু বউ আর সন্তান নিয়া সরকারি জমিতে থাকি। সামনের দিন কেমনে কাটুম, কিচ্ছু জানি না।

জানা গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাটি ছিল পদ্মা সেতুর ৩৬ নম্বর থেকে ৪৪ নম্বর পিয়ারের সংলগ্ন ভাটিতে। স্থানীয়রা বহুবার মানববন্ধন, আবেদন, এমনকি রাজনৈতিক নেতাদের কাছে ধরনা দিয়েছেন। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বা স্থানীয় প্রশাসন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি।

উপজেলা প্রশাসন থেকে এখন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত ৪০টি পরিবারকে দেওয়া হয়েছে মাত্র ২ বান্ডিল টিন ও ৬ হাজার টাকা করে নগদ সহায়তা। আর কিছু পরিবার পেয়েছে অল্প কিছু খাদ্য সহায়তা। শুধু বসতবাড়ি নয়, হারিয়ে গেছে শিক্ষা ও চিকিৎসার প্রধান অবলম্বনগুলোও।

রিজিয়া আমিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ইমরান আহমেদ জানালেন, চোখের সামনে বিদ্যালয়টা নদীতে তলাই গেল। আমরা তো কিছুই করতে পারিনি। এখন দক্ষিণ পাড়ে একটা বাসায় স্কুল চালাই, কিন্তু ছাত্র পাই না। কারণ ঐ চরের ৭০০ পরিবার ভাঙনের মুখে বিভিন্ন স্থানে সরে গেছে।

পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য হাপন মৃধার বাড়ি আহম্মদ মাঝিকান্দি গ্রামে। এবছর ভাঙনে তার বসত বাড়ি ও ফসলি জমি বিলীন হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ভাঙন ঠেকানোর জন্য স্থানীয় প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতাসহ বিভিন্ন স্থানে আমরা গিয়েছি। কেউ আমাদের পাশে দাঁড়ায়নি। বাপ-দাদার ভিটা হারিয়ে আমরা এখন নি;স্ব। এই মুহুর্তে গৃহহীন মানুষগুলোর পুর্নবাসন প্রয়োজন।

জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাবেরী রায় বলেন, এবছর নাওডোবা এলাকায় পদ্মার দুই তীরেই ভাঙন ছিল। দক্ষিন তীরে পদ্মা সেতুর নানা অবকাঠামো থাকার কারণে ভাঙন ঠেকানোর গুরত্ব বেশি পেয়েছে। তাই চরের দিকে আমরা নজর দিতে পারিনি। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থদের কিছু সহায়তা করা হয়েছে। তাদের পুর্নবানের জন্য খাস জমির সন্ধান করা হচ্ছে।