ঢাকা অফিস: একজন অপরাধী সে যত বড়ই হোক না কে তাকে আইনের আওয়াত আনার দায়িত্ব আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর। আজ বৃহস্পতিবার (০৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মিরপুর পল্লবীতে চাঁদাবাজির অভিযোগে স্থানীয় জনতার হাতে গণধোলাইয়ের শিকার হয়েছেন পল্লবী থানা ছাত্রদলের আহ্বায়ক চাপ্তানি সোহেল ও তার সহোদর আমদানি রনি ওরফে “আমদানি রনি”সহ চাপ্তানি বাহিনীর কয়েকজন সদস্য। ঘটনাটি ঘটে সোমবার গভীর রাতে প্রথমে মিরপুর-১১ নম্বর বড় মসজিদের ঢালের পাশে পরে মিল্লাত ক্যাম্প এলাকায়।
এলাকাবাসীর দাবি, সোহেল ও তার বাহিনী তিন লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে ব্যর্থ হলে ভুক্তভোগীর ওপর হামলা চালায়। কিন্তু মুহূর্তেই খবর ছড়িয়ে পড়লে ক্যাম্পের সাধারণ মানুষ এগিয়ে এসে হামলাকারীদের ধরে গণধোলাই দেন।
ভুক্তভোগী রাজেস সাংবাদিকদের বলেন, “চাপ্তানি সোহেল দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙ্গিয়ে টাকা দাবি করে আসছে। কখনো পুলিশ বক্স নির্মাণ, কখনো পোস্টার-ব্যানার লাগানো, কখনো বিএনপি নেতা আমিনুল হকের নাম ব্যবহার করে। টাকা না দিলে ভয়ভীতি দেখিয়ে বলে, এলাকায় ব্যবসা করতে হলে মাসে পাঁচ লাখ টাকা দিতে হবে।
তিনি আরও জানান, সোমবার রাতে সোহেল তাকে ফোনে ডেকে নিয়ে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করে। তিনি অস্বীকৃতি জানালে চাপ্তানি বাহিনী তার ওপর হামলা চালায়। এ সময় এলাকাবাসী ছুটে এসে সোহেল ও তার বাহিনীকে গণধোলাই দেয়।
ভুক্তভোগীর স্ত্রী দিপা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা কষ্ট করে খাই, তাদের চাঁদা কেন দেবো? বিএনপির নেতা আমিনুল হক কি এমন ক্ষমতা দিয়েছেন যে সে এলাকায় দখলবাজি আর চাঁদাবাজি শুরু করেছে? ক’দিন আগেও স্বর্ণের দোকানে স্বর্ণ বিক্রি করতে আসা এক দম্পতিকে আটক করে নির্যাতন করেছিল। অভিযোগের শেষ নেই তাদের বিরুদ্ধে।”
এলাকাবাসী জানান, চাপ্তানি বাহিনীর মূল শক্তি হলো তার সহোদর আমদানি রনি। আওয়ামী লীগ আমলে তিনি ছিলেন এমপি ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা পালিত সন্ত্রাসী সুটার। এখন ভাইয়ের রাজনৈতিক পদবি ব্যবহার করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে মারধর, স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের হয়রানি, জোরপূর্বক টাকা আদায় ও মাদক সিন্ডিকেটে জড়িত থাকার একাধিক অভিযোগ রয়েছে। তার বাহিনীর অনেক সদস্য মাদক ব্যবসায় জড়িত। রাজনৈতিক মহলে তীব্র সমালোচনা উঠেছে। তারা বলছেন, “পল্লবীতে কি ছাত্রদলের এতই সংকট যে জন্ম থেকেই মাদক সংশ্লিষ্ট এলাকায় বেড়ে উঠা ব্যক্তিকে থানা ছাত্রদলের আহ্বায়ক বানাতে হলো? ছাত্র রাজনীতি কি এখন চাঁদাবাজ আর মাদক সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি?”
গণধোলাইয়ের পর চাপ্তানি সোহেল ও তার বাহিনীর সদস্যরা ইসলামি হাসপাতালে চিকিৎসা নেয় এবং পরে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়। একই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চাপ্তান বাহিনীর সদস্যরা ঘটনা ধামাচাপা দিতে উল্টো প্রচারণা চালিয়ে দাবি করে, তারা নাকি মাদকবিরোধী অভিযানে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন।
এলাকাবাসীর এ দাবিকে ‘সর্বৈব মিথ্যা’ উল্লেখ করে বলছে, “মাদক নিয়ন্ত্রণ করবে প্রশাসন, সোহেল বাহিনী না। গভীর রাতে সে কেন যুবক-যুবতীদের ডেকে নিল?”
পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ বিষয়ে বলেন, “ভুক্তভোগীরা এখনো কোনো অভিযোগ করেননি। অভিযোগ এলে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
স্থানীয়দের আশঙ্কা, চাপ্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে এই বাহিনী পল্লবীতে ভয়ংকর তাণ্ডব চালাবে।




