খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি: খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলায় তিন দিন ধরে গ্রাম পুলিশ নিখোঁজ ব্যক্তির লাশ উদ্ধার পুলিশ। ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বিএসএফ’র আবারো ১৩ জনকে খাগড়াছড়ি সীমান্ত দিয়ে পুশইন করা ব্যক্তিরা মানবেতন জীবনে থাকতে হচ্ছে।
মাটিরাঙ্গা উপজেলার তানাক্কাপাড়া সীমান্ত দিয়ে নতুন করে আবারও নারী-শিশুসহ ১৩জনকে পুশইন করা হয়েছে। জেলার মাটিরাঙ্গার তাইন্দংয়ের তানাক্কাপাড়া দিয়ে আবারও কূটনৈতিক সৌজন্যতা চরম লঙ্ঘন করে ১৩ জন ব্যক্তিকে পুশ-ইন করেছে ভারত।
গত বৃহস্পতিবার(১৯ জুন) ভোরে তাদেরকে পুশইন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী(বিএসএফ)। বৃহস্পতিবার সকালে তাদের হেফাজতে নিয়ে স্থানীয় ডিপি পাড়া আচালং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মানবেতর ভাবে আশ্রয় দেয়া হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেন খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার।
এদিকে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় চার দিনে সন্ধান মিলেছে বিএসএফএর গুলিতে মো: হানিফ মিয়া(৪০) নামের এক গ্রাম পুলিশের লাশ। হানিফ উপজেলার তবলছড়ি ইউপির ৯নং ওয়ার্ড বং পাড়া এলাকার মৃত আবুল বশরের ছেলে। ১ছেলে ও ১মেয়ের জনক হানিফ। বৃহস্পতিবার(১৯ জুন) সন্ধার পর থেকে নিখোঁজ রয়েছে বলে গত শনিবার(২১ জুন) থানায় নিখোজ ডায়রী করেছেন তার স্ত্রী পারভীন আক্তার।
গত শুক্রবার দুপুরের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকের বিভিন্ন আইডি থেকে ভারতীয় সিমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফএর গুলিতে হানিফ নামে তবলছড়ির গ্রাম পুলিশ নিহতের ৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ভাইরাল হলে হানিফের স্বজনরা হানিফের লাশ বলে সনাক্ত করে।
এ ব্যাপারে বিজিবির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
নিহত হানিফের স্ত্রী পারভীন আক্তার জানান, ১৯ জুন বৃহস্পতিবার সন্ধা ৭টার দিকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে একই ওয়ার্ডর পুরাতন তবলছড়ির বেলাল হোসেন ওরফে চোরা বেলাল ও হেলু নামে দুই ব্যক্তি হানিফকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়।
গত শুক্রবার(২০ জুন) সকাল পর্যন্ত হানিফ বাড়ি ফিরে না আসায় তার খোজে চোরা বেলালের বাসায় গেলে বেলাল জানায়, তার গায়ে জ্বরের কারণে সে বাড়ি থেকে বাহির হয়নি। হানিফসহ কয়েক জন রাতে ভারতে গেছে বলে হানিফের স্ত্রী পারভীনকে জানায় বেলাল।
মাটিরাঙ্গা থানা অফিসার ইনচার্জ হাসিবুল হক(তদন্ত) জানান, নিখোজের স্ত্রী পরিভীন আক্তার গত শনিবার ২১ জুন মাটিরাঙ্গা থানায় একটি নিখোজ ডায়রি করেছেন। সে মোতাবেক হানিফকে উদ্ধারে পুলিশ তৎপরতা রয়েছেন বলে জানান তিনি।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনজুর আলম জানান, পুশইন হওয়া ব্যক্তিরা ভারতের মহারাষ্ট্রের থানে জেলার ওয়াশী গ্রামের বাসিন্দা। তার সেখান ইটভাটা ও নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করে। বর্তমানে পুশইন হওয়া ব্যক্তিরা স্থানীয় একটি স্কুলে অবস্থান করছেন এবং তারা বর্ডার গার্ড (বিজিবি) তত্ত্বাবধানে রয়েছেন।
জানা গেছে, চলতি বছরের ৭ মে প্রথমবার মাটিরাঙ্গা ও পানছড়ি উপজেলার তিনটি পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশিকে পুশইন করা শুরু করে ভারত। খাগড়াছড়ি সীমান্ত দিয়ে এখন পর্যন্ত ১৪৫ জন বাংলাদেশিকে পুশইন করেছে বিএসএফ।
আরো জানা যায়, গেল রাতে মাটিরাঙ্গার তাইন্দং ইউনিয়নের তানাক্কাপাড়া এলাকার সীমান্ত দিয়ে ১৩ জনকে জোর পূর্বক বাংলাদেশে পুশ ইন করেন ভারতের বিএসএফ। খবর পেয়ে সকালে যামিনী পাড়া বিজিবি জোন ও পুলিশ তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেয়।
প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, ভারতের মহারাষ্ট্র থেকে তাদের আটকের পর বাংলাদেশে পুশ ইন করেছে বিএসএফ। বর্তমানে সবাই স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবস্থান করছে। এর আগে গেল মাসে ৪ দফায় খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা, রামগড় ও পানছড়ি দিয়ে ১’শ ১৮জনকে পুশ ইন করে ভারত। সবশেষ তাইন্দং সীমান্তে পুশ ইন নিয়ে যা দাঁড়াল ১শ’ ৩১জনে।




