পরিবেশ অধিদপ্তর নিচ্ছেনা কোন ব্যবস্থা
নিজস্ব প্রতিবেদক: আনোয়ারার বেলচুড়ায় কর্ণফুলী টানেলের পাশে আড়াই’শ বছরের পুরানো দিচ্ছা পুকুর ভরাট করে ফেলা হচ্ছে। অবশিষ্ট যা আছে তাও মুছে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে কেউ এগিয়ে আসছেনা প্রতিবাদও করছেনা। নির্মান করা হয়েছে নানা স্থাপনা। ভরাট জমিতে করা হচ্ছে চাষাবাদ। দ্রুত মুছে দেয়া হচ্ছে পুকুরের নিশানাও। কেউ বাঁধা দিতে চাইলে দেয়া হচ্ছে মামলার হুমকি ধমকিও। প্রবাসী মোঃ ওসমান ও এয়ার মোহাম্মদ নামের দুই প্রভাবশালী ব্যক্তি মিলেমিশে কোটি টাকা দামের পুকুর-জমি দখলে নিতে প্রতিযোগিতা ও মরিয়া হয়ে উঠছে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক, পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসন পালন করছে নিরবতা অভিযোগ স্থানীয়দের। পুকুরটির বর্তমান অবস্থান নিয়ে চলতি মাসের পহেলা মে স্থানীয় একটি পত্রিকায় স্বচিত্র সংবাদও প্রকাশ করা হয়।
সুত্র জানান, পুকুর রক্ষার জন্য রিজুয়ানুল হকের পরিবারের পক্ষ থেকে একটি অভিযোগ (নালিশ) দেয়া হয় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও পরিবেশ অধিদপ্তরে। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘটনাস্থল মুহাম্মদপুর দিচ্ছা পুকুর পরিদর্শনে আসেন পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি টিম। এবং নানাজন থেকে সাক্ষ্যও নিয়েছেন তারা। দখলদার ওসমানের পক্ষের লোকজনকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ভরাট কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়। কার কথা কে শুনে। এরপর থেকে মালিকদের নানাভাবে হুমকি দেয়া হচ্ছে। পুকুরের অংশিদার জাফর চৌধুরীকে তার মালিকানা থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। ক্ষতিপুরণের টাকাও উত্তোলন করতে দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি। তবে শত বছরের এই পুকুরটি ভরাট করা হলেও স্থানীয় প্রশাসন পরিবেশ অধিদপ্তর কার্যকর কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা বলে অভিযোগ করা হয়।
সুত্র জানায়, ২০০৬সালে খাস জমির নামে লিজ নিতে আবেদনের নামে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক থেকে উচ্ছেদ নোটিশ জারীর নামে পুকুর ও পুকুর পাড়ের জমি বাড়ির মালিককে উচ্ছেদ করার ষড়যন্ত্র করা হয়। একই ধরনের ষড়যন্ত্র আবার শুরু হয় বলে অভিযোগ করা হয় বাড়ি জমির মালিকদের পক্ষ থেকে।
সুত্র জানান, বেলচুড়া মৌজার ২৫৬ ও ২৫৭দাগের জমি নিয়ে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে পটিয়া সহকারী জজ আদালতে অপর-৩০/৯৭ মামলা বিচারাধীন আছে। নতুনভাবে আরও একটি অপর ১২৫/২৩ ইং মামলা দায়ের করা হয় বলে জানা গেছে।
ওসমানের মামা জমির কেয়ার টেকার আবদুল মোনাফ বলেছেন, আমরা জমি পুকুর, পুকুর পাড়ের কিছু অংশ জাহাঙ্গীর আলম নামের এক ব্যক্তি থেকে সাফ কবলামুলে কিনে নিয়েছি। জমির সংস্কার ও ভাড়াঘর তৈরী করা হচ্ছে। জমি সংস্কারের নামে কেন শত বছরের এই পুকুর ভরাট করা হচ্ছে জানতে চাইলে মোনাফ কোন সদুত্তর না দিয়ে বলেন, এয়ার মোহাম্মদ নামের এক ব্যক্তি আমাদেরকে পুকুর ভরাট করে দখলে নিতে উৎসাহিত করেন, বলেছেন তিনি। এর বেশি কিছু বলতে রাজি হননি তিনি। ওসমান পুকুর জমির কতো শতাংশের মালিক কেয়ার টেকার মোনাফ তাও বলতে পারেননি। তবে পুকুরের আগের অবস্থা ফিরিয়ে আনার কোন পরিকল্পনা তাদের নেই বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন মোনাফ।
সুত্র জানান, সরকারী আইন লংগন করে আনোয়ারার বেলচুড়া মৌজায় মুহাম্মদপুর গ্রামে (বেলচুড়া) প্রায় আড়াই’শ বছরের অধিক পুরানো দিচ্ছা পুকুর জোরপূর্বক ভরাট করে ফেলা হচ্ছে। নতুনভাবে পুকুরটি ভরাটে ও দখলে মেতে উঠেছে ওসমান নামের এক ব্যক্তি। রিজুয়ানুল হকের পরিবারও পুকুর ও পুকুরপাড়ের কিছু জমি দখলে নিয়েছেন। এয়ার মুহাম্মদ পুকুর ভরাট করা অব্যাহত রেখে চাষাবাদ করছে। কেউ কেউ অবৈধভাবে নামজারীও করেছেন। দখলদার ওসমানের পক্ষ থেকেও একই অভিযোগ করা হয়েছে। আদালতে মামলার বিবষয়টি চলমান আছে লিখিতভাবে জানানোর পরও আনোয়ারা ভুমি অফিসের অসাধূ একটি চক্র এই নামজারীর সাথে জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে সরকারী আদেশ ও আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে নির্মান করা হচ্ছে ভাড়াঘর ও বসতবাড়ি। এক্ষেত্রে পুকুর ও পুকুর পাড়ের অন্যান্য মালিকদের কোন পাত্তাই দেয়া হচ্ছেনা। সেখানে আছে খাস জমিও। উক্ত জমি নিয়ে পটিয়া সহকারী জজ আদালতে অপর-১২৫/২৩ ও অপর ৩০/৯৭ মামলা চলমান আছে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সুত্র থেকে জানা গেছে, আনোয়ারা উপজেলার বৈরাগ মুহাম্মদপুর (বেলচুড়া) এলাকায় প্রায় আড়াই’শ বছরের পুরানো এই পুকুরের (দিচ্ছাপুকুর) অবস্থান। পুকুরের অন্যান্য ওয়ারিশদের দেখানো হচ্ছে বৃদ্ধাঙ্গাগুলি ও ভয়ভীতি। পুকুরটি প্রথমে ভরাট করা শুরু করেন এয়ার মুহাম্মদ ও শেখ আহমদ নামের দু’ব্যক্তি। পরে উক্ত দাগের সম্পত্তি কিনে নেয়ার নামে পুকুর পাড় ও পুকুর ভরাট করা শুরু করেন ওসমান নামের এক প্রবাসী। অন্যান্য ওয়ারিশদের বাঁধা সত্বেও তা আমলে নেয়া হচ্ছেনা। শত বছরের পুরানো এই পুকুরটি জোরপূর্বক ভরাট করে ফেলা হচ্ছে। দেয়া হচ্ছে সন্ত্রাসীদের ভয়ভীতিও। এনিয়ে ওয়ারিশদের মধ্যে উদ্বেগ ও উৎকন্ঠ দেখা দিয়েছে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক, পরিবেশ অধিদপ্তর এর কাছে দায়ের করা অভিযোগও আমলে নেয়া হচ্ছেনা। একইভাবে স্থানীয় প্রশাসনের কাছেও বিষয়টি অভিযোগে তুলে ধরা হয়।
সুত্র জানায়, বেলচুড়া মৌজার বিএস ২৫৬ ও ২৫৭ দাগের শত বছরের এই পুকুরের কিছু অংশ ওসমান নামের এক ব্যক্তি কিনে নেয়। তার বাড়ি কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলার টইটং এলাকায়। উক্ত সম্পত্তির মুল মালিক হন বছির আহমদ ও ওসমান গনি নামের দুই ভাই। কয়েকবার হাত বদল হওয়ার পর ওসমান সর্বশেষ সম্পত্তির কিছু অংশ কিনে নেন জাহাঙ্গীর আলম নামের এক ব্যক্তি থেকে। তিনি মালিকানা অর্জন করার নামে পুকুর পাড় ও পুকুর ভরাট করা শুরু করেন। নির্মাণ করেন ভাড়াঘর। তার আগে পুকুরের বেশ কিছু অংশ ভরাট করেন শেখ আহমদ এর ওয়ারিশগণ ও এয়ার মুহাম্মদ। সর্বশেষ শত বছরের এই পুকুরটি ভরাট হতে দেখে মরহুম রিজুয়ানুল হকের পরিবার এর লোকজন এগিয়ে আসেন। অভিযোগ দেয়া হয় পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সরকারী বিভিন্ন দপ্তরে। পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ওসমানের লোকজনকে পুকুর ভরাট থেকে বিরত থাকতে বলেন। কিন্তু ওসমান এর পক্ষের লোকজন উল্টো সন্ত্রাসী দিয়ে পুকুরের আসল রুপ পরিবর্তন করে ওয়ারিশদের ভয়ভীতি দেখায় বলে অভিযোগ উঠে। বর্তমানে দখলদারদের হাত থেকে আড়াই’শ বছরের পুরানো এই পুকুরটি রক্ষা করার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর স্থানীয় প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর তরিৎ হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।
নির্ভরযোগ্য একটি সুত্র জানায়, স্থানীয় ইকবাল নামের এক যুবক পুকুরটি ভরাট হতে দেখে এগিয়ে আসেন। তিনি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সরকারী বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এই অভিযোগ পাওয়ার পর পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে একটি তদন্ত দল এসে সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। কিছু লোকজন থেকে সাক্ষ্যও গ্রহণ করা হয়। এরপর তদন্তের ফলাফল আর অগ্রগতি রহস্যজনকভাবে থেমে গেছে বলে অভিযোগে জানিয়েছেন পুকুর মলিকরা।




