মিজবাউল হক, চকরিয়া : কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ছিটমহলখ্যাত পাহাড়ি জনপদের ইউনিয়ন বমুবিলছড়িতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চরম শিক্ষক সংকট চলছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের নিরবিচ্ছিন্ন পাঠদান কার্যক্রম। এই অবস্থার কারণে সন্তানদের লেখাপড়া নিয়ে চরম দু:চিন্তায় ভুগছেন স্থানীয় অভিভাবক মহল।
স্থানীয় একাধিক অভিভাবক ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধেের শিক্ষক স্বল্পতার কারণে বমুবিলছড়ি ইউনিয়নের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনায় মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষক সংকটের কবলে পড়ে বেশিরভাগ বিদ্যালয়ে পাঠদানের ক্ষেত্রে কর্মরত অল্প শিক্ষকরা প্রতিনিয়ত হিমশিম খাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন অভিভাবক মহল।
এ অবস্থায় সম্প্রতি সময়ে সরকারি ভাবে ৩য় ধাপের নিয়োগ দেওয়া শিক্ষকদের পিছিয়ে পড়া জনপদ বমুবিলছড়ি ইউনিয়নের প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পোস্টিং দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এলাকার সচেতন অভিভাবক মহল।
অভিভাবকরা জানিয়েছেন, সরকারি ভাবে প্রতিবার শিক্ষক বদলির ক্ষেত্রে নানামুখী অনিয়মের কারণে সুবিধা বঞ্চিত এলাকায় নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়না। আবার অনেকে বদলী হলেও উপজেলা সদর থেকে দূরের জনপদ হওয়ায় বমুবিলছড়ি ইউনিয়নে কেউ আসতে চায় না। এমন পরিস্থিতিতে পিছিয়ে পড়া সুবিধা বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর শিক্ষার কাঙ্খিত সুফল থেকে যুগের পর যুগ ধরে বঞ্চিত হচ্ছে। এই অবস্থায় এলাকাবাসি ও অভিভাবক মহল পাহাড়ি জনপদের বমুবিলছড়ি ইউনিয়নে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে জরুরী ভিত্তিতে পর্যাপ্ত শিক্ষক পোস্টিং দিতে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, বমুবিলছড়ি ইউনিয়নে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে চারটি। এসব বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকসহ অনুমোদিত শিক্ষক পদ আছে ২৬টি। তদস্থলে বর্তমান সেখানে কর্মরত রয়েছেন মোট ১১ জন শিক্ষক। তারমধ্যে শুধুমাত্র প্রধান শিক্ষক আছে একটি বিদ্যালয়ে। অপর তিনটি বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকরা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। এভাবে কোনোমতে চলছে বমুবিলছড়ি ইউনিয়নের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষাক্রম। চারটি বিদ্যালয়ে বর্তমানে প্রধান শিক্ষকসহ বর্তমানে ১৫ জন শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। চকরিয়া উপজেলা শিক্ষা অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, বমু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকের অনুমোদিত পদ ৮ টি, কর্মরত শিক্ষক আছেন ২ জন, ৬ জন শিক্ষকের পদ শূণ্য রয়েছে।
একইভাবে বিলছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনুমোদিত শিক্ষকের পদ ৮ টির বিপরীতে কর্মরত আছেন শিক্ষক ৫ জন, শূণ্য রয়েছে তিনজন শিক্ষকের পদ। ইউনিয়নের নাজমা ইয়াছমিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনুমোদিত শিক্ষক পদ ৫ টি, কর্মরত রয়েছেন তিনজন শিক্ষক, শূণ্যপদ রয়েছে দুইজন শিক্ষকের। হাকিম আব্দুল গণি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনুমোদিত শিক্ষকের ৫টি পদের বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন একজন শিক্ষক, শূণ্য রয়েছে চারজন শিক্ষকের পদ।
এব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মহিউদ্দিন মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, বমুবিলছড়ি ইউনিয়নের চারটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট রয়েছে এটা সত্য। কর্তৃপক্ষ সেখানে শিক্ষকদের পোস্টিং দিলেও তাঁরা নানাধরণের অজুহাত দেখিয়ে অন্য এলাকায় চলে যায়। তিনি বলেন, শিক্ষক সংকটের বিষয়টি প্রতিমাসেই জেলা শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়ে প্রতিবেদন সহকারে জমা দেওয়া হচ্ছে। আশাকরি নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের সেখানে পোস্টিং দেওয়ার জন্য জেলা শিক্ষা অফিসার স্যারকে জানানো হবে।
কক্সবাজার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহীন মিয়া বলেন, পাহাড়ি জনপদ বমুবিলছড়ি ইউনিয়নে অনেক শিক্ষক পদ শূন্য হয়েছে বিষয়টি নজরে এসেছে। সামনে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের পোস্টিং হবে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে সেখানে শিক্ষক সংকট লাগবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
