ক্রাইম প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের যন্ত্রপাতি কেনার নামে টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় সাবেক সিভিল সার্জন ডা. সরফরাজ খান চৌধুরী ও তিন চিকিৎসকসহ সাতজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ৯ কোটি ১৫ লাখ ৩০ হাজার ৪২৫ টাকা আত্মসাতের এই মামলায় গত ২৪ জানুয়ারি তদন্তকারী কর্মকর্তার প্রধান কার্যালয়ে চার্জশিট অনুমোদনের জন্য জমা দিলে তা অনুমোদিত হয়।
দুদক চট্টগ্রামের এক কর্মকর্তা বিষয়টি গনমাধ্যমকে নিশ্চিত করে বলেছেন, প্রধান অফিসে সাত আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তা শিগগিরই আদালতে জমা দেওয়া হবে। সিভিল সার্জন সরফরাজ কাদের ছাড়াও মামলায় অন্য আসামিরা হলেন, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক আবদুর রব, মঈন উদ্দিন মজুমদার ও বিজন কুমার নাথ এবং ঢাকার সেগুনবাগিচার বেঙ্গল সায়েন্টেফিক অ্যান্ড সার্জিক্যাল কোম্পানীর স্বত্বাধিকারী জাহের উদ্দিন সরকার, ঢাকার মিরপুরের মেসার্স আহম্মদ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মুন্সী ফারুক হোসেন ও ঢাকার বনানীর এএসএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফতাব আহমেদ। ডা. সরফরাজ খান চৌধুরী চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জনের পাশাপাশি ওই সময় তিনি চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
এরআগে ২০১৯ সালের ২৫ নভেম্বর দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. সিরাজুল হক বাদী হয়ে সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১-এ মামলাটি করেন। ৯ কোটি ১৫ লাখ ৩০ হাজার ৪২৫ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয় মামলায়। তবে মামলার সব আসামি বর্তমানে জামিনে রয়েছেন।
মামলা দায়েরের পর দুদকের উপপরিচালক লুৎফুল কবির চন্দন জানিয়েছিলেন, ‘২০১৪-১৫ সালে তৎকালীন সিভিল সার্জন ও জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সরফরাজ খান চৌধুরীর বিরুদ্ধে ১২টি ভারী যন্ত্রপাতি ক্রয় ৯ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। সব যন্ত্রপাতির বাজারমূল্যের সঙ্গে দেখানো ক্রয়মূল্যের বিস্তর তফাত পায় দুদক। এ ঘটনায় চট্টগ্রামের সাবেক সিভিল সার্জন ডা. সরফরাজ খান, তিন চিকিৎসক ও চার ঠিকাদারের বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করা হয়। ২০১৭ সালে তিন জেলায় দায়িত্ব পালনের সময় তার বিরুদ্ধে ৯ কোটি ৭২ লাখ ৫৫ হাজার ৪০২ টাকার অডিট আপত্তি তোলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বিষয়টি তদন্ত করতে ২০১৬ সালের ১০ এপ্রিল জেনারেল হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ একটি কমিটি গঠন করেছিল। ওই বছরের ৭ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন প্রকাশ করে তদন্ত কমিটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দুই কোটি ৮০ লাখ টাকার এমআরআই মেশিন কেনা হয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকায়়। একইভাবে ৯৮ লাখ টাকা দামের চারটি কালার ড্রপলার কেনা হয়েছে দুই কোটি ৬০ লাখ টাকা দিয়ে।
জানা যায়, রক্ত পরিসঞ্চালনের জন্য জার্মানির একটি ব্লাড ওয়ার্মার মেশিন কেনা হয় ৯ লাখ ৩২ হাজার টাকায়। বাজারে এ ধরনের মেশিনের মূল্য ১৫ হাজার টাকার বেশি নয়। কান পরীক্ষার জন্য অটোস্কোপ মেশিনের বাজারে দাম পড়ে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু হাসপাতালে অটোস্কোপ মেশিন সরবরাহ করা হয় তিন লাখ ৭০ হাজার টাকায়।



