নূরুল ইসলাম, লোহাগড়া প্রতিনিধি: লোহাগড়া থানার কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যের মর্মান্তিকভাবে কব্জি বিচ্ছিন্নের ঘটনার মূল আসামী কুখ্যাত সন্ত্রাসী কবির র্যাবের অভিযানে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় সহযোগীসহ লোহাগড়ার পাহাড়ি এলাকা থেকে র্যাবের অভিযানে গ্রেফতারসহ তার হেফাজত থেকে অস্ত্র, গুলি ও মাদক উদ্ধার করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৯ মে) লোহাগাড়া থানাধীন বড় হাতিয়ার গহীন পাহাড়ি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মোঃ কবির আহমদ (৪৩) ও তার সহযোগী মোঃ কফিল উদ্দিন (৩০)কে গ্রেফতার করে।
অভিযান চলাকালে গ্রেফতারকৃত কবির তার নিকট থাকা অস্ত্র দিয়ে র্যাব সদস্যদেরকে লক্ষ করে গুলি ছুড়লে জনৈক র্যাব সদস্য আহত হয়। র্যাব পাল্টা গুলি চালালে পরবর্তীতে ঘটনাস্থলে কবির গুলিবিদ্ধ হয়। অভিযানে জব্দ করা হয় পুলিশ সদস্যদেরকে জখমে ব্যবহৃত ১টি দা, ১টি ওয়ান শুটার গান, ৩ রাউন্ড গুলির খোসা, ৩ রাউন্ড তাজা গুলি, ২ টি হাসুয়া, ১ টি ছুরি, ১৮০ পিস ইয়াবা, ২ টি মোবাইল ও ২ টি সীম কার্ড।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা বর্ণিত ঘটনায় তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে তথ্য প্রদান করেন।
ঘঠনা বিবরণে জানা গেছে, গত ১৫ মে সকালে লোহাগড়া থানার একটি মামলার এজাহার নামীয় আসামী কবির আহমদ’কে গ্রেফতারের উদ্দেশ্যে অভিযান চালায় পুলিশের একটি আভিযানিক দল। পুলিশ এর উপস্থিতি টের পেয়ে কবির অস্ত্রসহ ইউনিফর্ম পরিহিত পুলিশ সদস্যদের উপর চড়াও হয়। প্রথমে সে তার বাসা সনাক্তকারী ব্যক্তিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। পরবর্তীতে পুলিশ সদস্য জনি তাকে বাধা দিলে কবির তার হাতে থাকা ধারালো অস্ত্র দিয়ে জনি খানকে সজোরে আঘাত করে বাম হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন করে দেয় এবং ঘটনাস্থলে থাকা অন্য পুলিশ সদস্য শাহাদত হোসেনকে শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি আঘাত করে দ্রুত ঘটনাস্থল হতে পলায়ন করে। উপস্থিত অন্যান্য পুলিশ সদস্য ও স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় আহত পুলিশ সদস্যদেরকে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়।
তন্মধ্যে পুলিশ সদস্য জনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে তার অবস্থার অবনতি হলে মূমুর্ষ অবস্থায় উন্নত চিকিৎসার জন্য র্যাবের হেলিকপ্টার যোগে ঢাকায় প্রেরণ করা হয় এবং অতঃপর ঢাকার মোহাম্মদপুরে আল মানার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে গত ১৬ মে ডাঃ সাজেদুল রেজা ফারুকী দীর্ঘ ৯ ঘন্টা ৪০ মিনিট সফল অস্ত্রপচারের মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন কব্জিটি জোড়া লাগাতে সক্ষম হন। বর্ণিত ঘটনায় লোহাগড়া থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানায়, ঘটনার পর কবির তার সহযোগী কফিলকে নিয়ে বান্দরবান এর দক্ষিণ হাংগর এলাকার একটি দূর্গম পাহাড়ে আত্মগোপন করে। অতঃপর সেখানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি আঁচ করতে পেরে গ্রেফতারকৃত কবির তার সহযোগীসহ দ্রুত অবস্থান পরিবর্তন করে পুনরায় লোহাগাড়া থানাধীন বড় হাতিয়ার গহীন পাহাড়ি এলাকায় অবস্থান নেয়। সর্বশেষ গত ১৯ মে র্যাব এর অভিযানে তারা গ্রেফতার হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, গ্রেফতারকৃত কবির স্থানীয় এলাকার একজন চিহ্নিত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী। সে দীর্ঘদিন যাবত এলাকায় জমি দখল, মারামারিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রম করে আসছে। কেউ তার সন্ত্রাসী কার্যকলাপে বাধা দিলে তার উপর সশস্ত্র হামলা চালিয়ে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করত।
গ্রেফতারকৃত আরও জানায় যে, তার কাছে থাকা অবৈধ অস্ত্রটি এক অস্ত্র ব্যবসায়ীর নিকট হতে ক্রয় করে। তার নামে বিভিন্ন থানায় হত্যাচেষ্টা ও মারামারির মামলাসহ ৬টি মামলা রয়েছে।
গ্রেফতারকৃত কফিল একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। বিভিন্ন সময় সে পাশ্ববর্তী দেশ হতে মাদক নিয়ে এসে চট্টগ্রাম ও তার পাশর্^বর্তী এলাকায় মাদক সরবরাহের সিন্ডিকেট পরিচালনা করত। সে গ্রেফতারকৃত কবির এর বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডের সহযোগী ও প্রশ্রয়দাতা। সে এলাকায় বিভিন্ন মাদক ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সাথে জড়িত।
গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয়ের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।



