ঢাকা অফিস: বাংলাদেশের প্রশাসনিক ও আইনগত কাঠামোতে সংস্কার চলছে; তবে বাস্তব পরিবর্তন আনতে সময়, ধারাবাহিক প্রচেষ্টা এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অপরিহার্য। আজ বুধবার(১০ ডিসেম্বর) সাভারের ব্র্যাক সিডিএম-এ অনুষ্ঠিত ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থ ইন্টারন্যাশনালের দ্বিবার্ষিক সাধারণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, “আমরা প্রশাসন ও আইনি কাঠামো দু’টোকেই পরিবর্তনের আওতায় আনছি। কিন্তু যে দেশ পরিবেশ সূচকে ১৮০ দেশের মধ্যে ১৭৯তম স্থানে থাকে, সেটি এক বছরে ৫০তম স্থানে পৌঁছে যেতে পারে না-এটি রাতারাতি সম্ভব নয়।”
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ যদি ৫ থেকে ৭ বছর ধারাবাহিকভাবে কাজ করে এবং অবস্থান ৭৩-এর কাছাকাছি যায়, তবে পরবর্তী নির্বাচিত সরকার সেই ভিত্তির ওপর কার্যক্রম এগিয়ে নিতে পারবে।
উপদেষ্টা বলেন, বর্তমান সরকার একটি প্রায় ভেঙে পড়া ব্যবস্থা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছে। “প্রথম কাজ ছিল এটিকে ন্যূনতমভাবে কার্যকর করা এবং তারপর পরিবর্তনের সূচনা। আমরা যাত্রা শুরু করেছি; লক্ষ্য অনেক দূরে। তবে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং এগুলো রাজনৈতিক সরকারের অধীনে অব্যাহত থাকতে হবে,” উল্লেখ করেন তিনি।
জবাবদিহির প্রসঙ্গে তিনি রাজনৈতিক সহিংসতার শিকারদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার গুরুত্ব তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, একটি অর্থবহ নির্বাচন এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। “নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই হবে। আমরা বিশ্বাস করি সমাজের সব স্তরের মানুষ এতে অংশ নেবে,” বলেন তিনি।
সাম্প্রতিক আইনগত অগ্রগতির বিষয়ে তিনি জানান, বন সংরক্ষণে দুটি যুগান্তকারী আইন ইতোমধ্যে পাস হয়েছে। এসব আইন প্রাকৃতিক বনে নতুন করে হস্তক্ষেপ নিষিদ্ধ করেছে এবং বননির্ভর জনগোষ্ঠীকে স্বীকৃতি দিয়েছে। “শিগগিরই জলাভূমি সংরক্ষণ আইনও পাস হবে,” আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বর্তমান পরিবেশ বাস্তবতার দিকে ইঙ্গিত করে উপদেষ্টা বলেন, সভাস্থল সাভারকে ইতোমধ্যে পরিবেশগতভাবে অক্ষয়িত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। “বাংলাদেশ বহু বছর ধরে বায়ুদূষণে বৈশ্বিক সূচকে শীর্ষে রয়েছে। এটি এক বছরে বদলানো সম্ভব নয়, তবে সংশোধনমূলক পদক্ষেপ শুরু হয়েছে,” মন্তব্য করেন তিনি। এ ধরনের অবনমিত অঞ্চলগুলো চিহ্নিত করে পুনর্বাসনের কার্যক্রম নেওয়া হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
তিনি আরও বলেন, এলাকায় দূষণকারী ইটভাটা ও অন্যান্য ইউনিট আইনি ও প্রশাসনিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে স্থানান্তর করা হচ্ছে। “শ্রমিকেরা কর্মহীন হবেন না; তারা নতুন নির্ধারিত স্থানে কৃষি–সম্পৃক্ত কাজে যুক্ত হবেন,” আশ্বস্ত করেন উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, নগর পরিবেশের উন্নতি এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশ আর পরিবেশ সূচকের একেবারে নিম্নস্থানে নেই। “সরকার ও নাগরিকদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়েছে, তথ্যপ্রাপ্তি সহজ হয়েছে এবং মত প্রকাশ ও অংশগ্রহণের ক্ষেত্র প্রসারিত হয়েছে,” বলেন তিনি।
১১ দিনব্যাপী এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ৬২ দেশের ৮৫ জন প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন।




