বনানী (ঢাকা) প্রতিনিধিঃ রাজধানীর বনানী থানাধীন বেলতলা এলাকায় সম্প্রতি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে পদহীন নেতা খুরুম ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী কাওসারের নাম। স্থানীয়দের অভিযোগ—আওয়ামী লীগের প্রভাব হারানোর পর এখন খুরুম নিজেকে বিএনপি নেতা পরিচয় দিয়ে বেলতলায় আধিপত্য বিস্তার করছে, আর তার ছত্রছায়ায় আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠছে কাওসার নামের এক ব্যক্তি, যিনি একসময় স্থানীয় আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ ছিলেন।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, কাওসার ছিলেন বেলতলার “কারেন্ট–পানি–গ্যাস বিল কালেকশন”-এর দায়িত্বে। তিনি নিয়মিতভাবে মোটা অংকের অর্থ সংগ্রহ করে তা স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে পৌঁছে দিতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। একই সঙ্গে তিনি নিজেও বিলের টাকার একটি বড় অংশ আত্মসাৎ করতেন বলে স্থানীয়রা জানান। কাওসারের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে—তিনি একজন মাদকাসক্ত, যিনি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় এলাকায় নানা সময় সাধারণ মানুষকে ভয় দেখানো ও নির্যাতন করতেন।
গত ৫ তারিখে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর কাওসার এলাকা থেকে গা-ঢাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই খুরুম মিয়া নিজেকে বিএনপির নেতা পরিচয় দিয়ে আবারও মাঠে নামেন এবং পুরো বেলতলাকে নিজের নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা শুরু করেন। স্থানীয়রা বলেন, বিএনপির প্রকৃত কর্মীরা তখনও সংগঠিত হতে পারেনি, সেই সুযোগে খুরুম তার প্রভাব বিস্তার করেন।
সমস্যা দেখা দেয় বিল তোলার সময়। খুরুম নতুন হওয়ায় এলাকার বিল আদায় ও হিসাব-নিকাশের ব্যাপারে অজ্ঞ ছিলেন। কে কার কত টাকা দেয়, কার কী বাকি—এসব বিষয়ে তিনি স্পষ্ট ধারণা না পাওয়ায় স্থানীয়রা স্বেচ্ছায় বিল দিতে অনীহা প্রকাশ করেন। তখনই খুরুম কাওসারকে পুনরায় দায়িত্বে ফিরিয়ে আনেন, যাতে আগের মতো বিল তোলা ও লেনদেনের কাজ চালিয়ে যেতে পারে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, খুরুম ও কাওসারের মধ্যে একটি চুক্তি হয়েছে—কাওসার প্রতি মাসে বিলের মোটা অংকের টাকা খুরুমকে দেবে, বিনিময়ে খুরুম তাকে সম্পূর্ণ আশ্রয়-প্রশ্রয় দেবে। এর ফলে কেউ কাওসারের বিরুদ্ধে মুখ খুললে বা প্রতিবাদ করলে তাকে ভয় দেখানো হয় বা চুপ করিয়ে দেওয়া হয়।
বেলতলার বহু তৃণমূল বিএনপি কর্মী এ ঘটনায় গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা অভিযোগ করছেন, দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে যারা স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন, তারা আজ উপেক্ষিত। অথচ আওয়ামী লীগ আমলের বিতর্কিত ব্যক্তিরাই আজ দলে জায়গা পাচ্ছেন খুরুমের ছত্রছায়ায়। একাধিক ত্যাগী নেতা বলেন, “বিএনপির অভাব নেই—তবুও কেন পুরনো আওয়ামী লীগ কর্মীদের পুনর্বাসন করতে হবে?”
তারা আরও অভিযোগ করেন, কিছু সিনিয়র নেতা অর্থনৈতিক সুবিধা নিয়ে এসব অনিয়মের দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে রেখেছেন। “যারা ১৭ বছর ধরে নির্যাতন সহ্য করেছে, তারা আজ মুখ খুলতে ভয় পায়—কারণ খুরুমের ভয়ঙ্কর প্রভাবের কারণে কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে দমন করা হয়,” বলেন এক তৃণমূল কর্মী।
এ বিষয়ে বনানী থানা বিএনপি’র সিনিয়র সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান মিজান বলেন, আমরা জানি বেলতলায় কারা আওয়ামী লীগ করতো। আমরা সবাইকেই চিনি। তবে আমরা অনেককে সাধারণ ক্ষমা করে দিয়েছি। তিনি আরও বলেন, হাসিনা পালানোর আগে বস্তির সবাই-ই তো আওয়ামী লীগ করতো। সবাইকে জোর করে মিছিলে নিয়ে যাওয়া হতো।
স্থানীয়দের প্রশ্ন?
এলাকার সাধারণ মানুষের প্রশ্ন—এই অনিয়ম, দখলদারিত্ব ও দুর্নীতি কি কেউ দেখছে না? নাকি সবাই টাকা খেয়ে চোখ বন্ধ করে রেখেছে?
তদন্তের দাবি:
স্থানীয়দের একটাই দাবি—বেলতলার বাস্তব চিত্র উদঘাটনে প্রশাসন ও দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। তারা চান, নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে খুরুম ও কাওসারের অনিয়ম ও প্রভাব খতিয়ে দেখা হোক এবং প্রকৃত ত্যাগী কর্মীদের পাশে দাঁড়ানো হোক।




