নিজস্ব প্রতিবেদক: আসন্ন ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের প্রাক্কালে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মোঃ রহমাতুল মুনিম দি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি’র সদস্য ও অত্র অঞ্চলের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সাথে আজ রবিবার (২০ মার্চ) সকালে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারস্থ বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে এক প্রাক-বাজেট মতবিনিময় সভায় মিলিত হন।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মোঃ রহমাতুল মুনিম বলেন, শিল্পোদ্যোক্তারা জিডিপিসহ দেশের উন্নয়নে বিশাল ভূমিকা রাখেন। আগামী বাজেটে অন্তর্ভূক্তির লক্ষ্যে এই অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের প্রস্তাবনাসমূহ সম্পর্কে জানার উদ্দেশ্যে এই মতবিনিময়ের আয়োজন। কোন কোন খাতকে অগ্রিম প্রদেয় করদায় চূড়ান্ত হতে অব্যাহতি দেয়া যায় তা বিবেচনা করা হবে। দেশীয় লবণ শিল্প রক্ষায় শিল্প খাতে আমদানিকৃত লবণ বাজারে বিক্রি হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যেসব কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান রিটার্ণ দাখিল করছে না তাদের তালিকা প্রণয়ন করা হচ্ছে। বৃহৎ কোম্পানীসমূহের অনলাইন ব্যবসাকে করের আওতায় আনা হচ্ছে। এসএমই খাতের উন্নয়নের স্বার্থে সক্ষমতা অর্জিত হলে দেশে উৎপাদন হয় এমন পণ্য আমদানি করা হবে না। সরকার জনকল্যাণ, সেবা প্রদান ইত্যাদি উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড সম্পাদন করে থাকে। দেশীয় শিল্পের সুরক্ষা, কর ব্যবস্থাকে কিভাবে আরো সহজ করা যায়, করের বোঝা কমানো যায় এবং সহজ পরিবেশ তৈরি করা যায় সেই লক্ষ্যে এনবিআর কাজ করছে এবং অটোমেশনে এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
সভায় স্বাগতঃ বক্তব্যে চিটাগাং চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, বৃহত্তর চট্টগ্রামে বাস্তবায়নাধীন মেগা প্রকল্পসমূহ যথাসময়ে সম্পন্ন করার জন্য আগামী বাজেটে বিশেষ বরাদ্দের দাবী জানান।
তিনি বলেন, গত দুই বছর করোনা মহামারীর কারণে সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে সরকার প্রদত্ত লক্ষাধিক কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজসহ বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে বর্তমানে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে যা আগামী বাজেটে আরো ত্বরান্বিত হবে। তিনি ব্যক্তিগত করমুক্ত আয়সীমা বৃদ্ধি, কর্পোরেট করহার কমানো, সারচার্জবিহীন নীট সম্পদের পরিমাণ ৩ কোটি টাকার পরিবর্তে ৫ কোটি নির্ধারণ, ইপিজেডে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানের ৫ বছরের কর অবকাশ সুবিধার প্রত্যয়ন পত্র এককালীন ইস্যু করা, লৌহ ও লৌহজাত পণ্যের ক্ষেত্রে উৎসে কর ২% থেকে কমিয়ে ১% নির্ধারণ, চূড়ান্ত করদায় বাতিল করে কর সমন্বয়ের ব্যবস্থা করা, স্ক্র্যাপ আমদানির করহার টন প্রতি ৫০০ টাকা থেকে কমিয়ে ১০০ টাকা করা, এলপি গ্যাস বিক্রয় পর্যায়ে ৭% ভ্যাটের পরিবর্তে প্রতি কেজি ২ টাকা হারে ট্যারিফ ভ্যাট প্রবর্তন, সিনথেটিক দিয়ে তৈরি জুতা রপ্তানিতে নিয়োজিত ইন্ডাষ্ট্রিদের শুল্ক মুক্তভাবে খুচরা যন্ত্রাংশ, আর্দ্রতা নিরোধক, ইন্ডাস্ট্রিয়াল র্যাক আমদানি অনুমোদন, প্রচ্ছন্ন রপ্তানির সংজ্ঞা স্পষ্টীকরণ এবং এক্ষেত্রে ডলারে লোকাল এলসি খোলার ব্যবস্থা করা, ২% প্রতিবন্ধী নিয়োগ করলে ৩% কর ছাড়, এলপিজি কনভার্সন কার্যক্রম চালানোর জন্য ক্যাপিটাল মেশিনারীজ আমদানিতে সিএনজির ন্যায় সুবিধা প্রদান এবং শিপ রিসাইক্লিং এ গ্রীণ ইয়ার্ড তৈরিতে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি শতভাগ শুল্কমুক্ত রাখার প্রস্তাব করেন। এছাড়া ভ্যাটের ক্ষেত্রে ৪ মাস পর্যন্ত সমন্বয়ের মেয়াদ বৃদ্ধি, মূসক ২.৩ এ লিমিটেড কোম্পানী হলে উৎসে ভ্যাট থেকে অব্যাহতি, মেডিকেল ডিভাইস এন্ড সার্জিক্যাল ইনস্টলমেন্ট উৎপাদনে উপকরণ আমদানিতে শুল্ক ১৫% থেকে কমিয়ে ৫% করার সুপারিশ করেন এবং বিদ্যমান ক্লিনিক ও হাসপাতালসমূহে মানসম্মত ডায়ালাইসিস সেন্টার চালু করতে বিশেষ বরাদ্দের অনুরোধ জানান চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম।
চেম্বার সহ-সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে আমদানির পরিমাণ ৬০ বিলিয়ন ডলার এবং জিডিপি ৩৫০ বিলিয়ন ডলার। সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে আগামী ১০ বছরে জিডিপি হতে হবে ১ ট্রিলিয়ন ডলার। তিনি এক্ষেত্রে দেশে আমদানি পণ্যের বিকল্প পণ্য উৎপাদনে গুরুত্বারোপ করার পাশাপাশি দেশে প্রতি বছর কোন ধরণের পণ্য কি পরিমাণ আমদানি হয় তার জন্য তথ্য-উপাত্ত প্রকাশের লক্ষ্যে এনবিআর কর্তৃক একটি ওয়েব পোর্টাল চালু করার অনুরোধ জানান।
অন্যান্য বক্তারা বলেন, ইজ অব ডুয়িং বিজনেস এ উন্নতি করা, ছোট আরএমজি কারখানা রক্ষায় উদ্যোগ গ্রহণ, নারী উদ্যোক্তাদের আয়কর সীমা ও ব্যাংক ঋণ বৃদ্ধি করা, দেশীয় ও আমদানিকৃত সিগারেটের দামে প্রতি শলাকা ন্যূনতম ১/-টাকা পার্থক্য রাখা, করহার না বাড়িয়ে আওতা বৃদ্ধি করা, সকল স্থল বন্দরে একই পণ্যের সমমূল্যে শুল্কায়ন নিশ্চিত করা, রাজস্ব আইন পরিবর্তনের কমিশন গঠন, কর আইনজীবীদেরকে ভ্যাট চর্চার সুযোগ প্রদান, ১২০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট ক্রেতাদের সহায়তায় ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান, রড, সিমেন্ট ইত্যাদি নির্মাণ সামগ্রীর দাম স্থিতিশীল রাখা, চূড়ান্ত দায়ের বিধান বাতিল করে কর সমন্বয়ের ব্যবস্থা করা, ভ্যাট সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি সময়সীমা নির্ধারণ, রাঙ্গামাটিতে মূসক ৬.৩ এর মাধ্যমে আসবাবপত্র বিপণনের সুযোগ প্রদান, থেগামুখ স্থল বন্দর চালু করা পর্যটন শিল্পের প্রসারে বিশেষ বরাদ্দ প্রদান, সিনথেটিক দিয়ে তৈরি জুতা রপ্তানিতে ইপিজেড ও ইপিজেডের বাইরে ৫ বছর কর অবকাশ সুবিধা প্রদান, সোল রপ্তানির জন্য আলাদা এইচএস কোড নির্ধারণ, বিষমুক্ত শুটকি উৎপাদনে কর অবকাশ সুবিধা, ভ্যাটের হার কমিয়ে সর্বস্তরে চালু করা, চট্টগ্রাম কাস্টমস এর জনবল বৃদ্ধি, বন্দরে প্রত্যেক গেইটে স্ক্যানার স্থাপন ইত্যাদি দাবী উত্থাপন করেন।
এ সময় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও অন্যান্য সরকারি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, চট্টগ্রামের কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়কর বিভাগের কমিশনারবৃন্দ, চেম্বার পরিচালকবৃন্দ মোঃ অহীদ সিরাজ চৌধুরী (স্বপন), জহিরুল ইসলাম চৌধুরী (আলমগীর), অঞ্জন শেখর দাশ, বেনাজির চৌধুরী নিশান, ইঞ্জিনিয়ার ইফতেখার হোসেন ও মোহাম্মদ আদনানুল ইসলাম এবং বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী নেতৃবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় চেম্বার প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম’র সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন রাজস্ব বোর্ডের সদস্যবৃন্দ মোঃ মাসুদ সাদিক, জাকিয়া সুলতানা ও সামস উদ্দিন আহমেদ, চেম্বার সহ-সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর, পরিচালকদ্বয় এ. কে. এম. আক্তার হোসেন ও হাসনাত মোঃ আবু ওবাইদা, চেম্বারের প্রাক্তন সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আলী আহমেদ, প্রাক্তন পরিচালকদ্বয় মাহফুজুল হক শাহ ও আফসার হাসান চৌধুরী (জসিম), বিএসআরএম’র চেয়ারম্যান আলীহুসেইন আকবর আলী, জিপিএইচ ইস্পাত চেয়ারম্যান মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফেকচারার্স এসোসিয়েশন’র প্রতিনিধি ও কনফিডেন্স সিমেন্ট’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির উদ্দিন আহমেদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি’র সভাপতি আলহাজ্ব আজিজুল হক, কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি’র সভাপতি মোঃ আবু মোরশেদ চৌধুরী, রাঙ্গামাটি চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি’র সভাপতি মোঃ আবদুল ওয়াদুদ, বিজিএমইএ’র ১ম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, রিহ্যাব-চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের চেয়ারম্যান আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশন’র ১ম সহ-সভাপতি আলতাফ হোসেন চৌধুরী (বাচ্চু), উইম্যান চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র সিনিয়র সহ-সভাপতি আবিদা মোস্তফা, বিজিএপিএমইএ’র ১ম সহ-সভাপতি মোঃ বেলাল, লুব-রেফ’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ ইউসুফ, তামাক চাষী, ব্যবসায়ী ও শ্রমিক ঐক্য পরিষদ’র প্রতিনিধি ও আবুল খায়ের গ্রুপের জিএম (একাউন্টস এন্ড ফাইন্যান্স) আবদুল আউয়াল মোহন, চিটাগাং ট্যাক্সেস বার এসোসিয়েশন’র সভাপতি বাবু নিতাই চন্দ্র দাশ, চট্টগ্রাম জেলা দোকান মালিক সমিতির মহানগর সভাপতি সালামত আলী, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি সালেহ আহমেদ সুলেমান এবং আন্তঃজিলা মালামাল পরিবহন সংস্থা ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী জাফর আহমেদ প্রমুখ।



