দি ক্রাইম ডেস্ক: পর্যটন নগরী কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে অব্যবস্থাপনার বিষয়ে পর্যটকদের অভিযোগের অন্ত নেই। সেই তালিকায় রয়েছে, সৈকতের ভেঙে পড়া আলোক ব্যবস্থা। সৈকতে রাতে আলোর জন্য লাগানো ৯০ ভাগ ফ্লাড বাতি বিকল হয়ে গেছে। বিগত বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি ও বালিয়াড়ির ভাঙনে এসব বাতি বিকল হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রায় তিন মাস ধরে বাতিগুলো বিকল অবস্থায় থাকলেও বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে সন্ধ্যা নামলেই অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে সৈকতের বিশাল একটা অংশ।
সৈকতে নিয়োজিত বিচকর্মীদের সুপারভাইজার মাহবুব আলম জানান, সৈকতের ডায়াবেটিক পয়েন্ট কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত স্থানে ১১৪টি ফ্লাড বাতি স্থাপন করা হয়। রাতের বেলায় বালিয়াড়িসহ পুরো সৈকত এলাকাকে আলোকিত করে বাতিগুলো। এতে ছিনতাইসহ নানা অপরাধ রোধ এবং নিরাপদে যাতায়াত ও রাতের সৈকতের সৌন্দর্য অবলোকন করতে পারেন পর্যটকরা। সম্প্রতি বর্ষা মৌসুম ঝড়–বৃষ্টি ও সৈকতের ভাঙনে খুঁটি বিলীন হয়ে প্রায় ৯০ ভাগ ফ্লাড বাতি বিকল হয়ে যায়। পর্যটক ও সৈকত এলাকায় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বিকল বাতিগুলোর সংস্কার বা পুনঃস্থাপন না করায় গত তিনমাসের বেশি সময় ধরে অন্ধকারে রয়েছে সৈকত এলাকা। সন্ধ্যা নামলেই ভূতুড়ে পরিবেশ নেমে আসে সৈকতজুড়ে। এতে বেপরোয়া হয়ে উঠে সৈকত এলাকায় দাপিয়ে বেড়ানো ছিনতাইকারী, ইভ টিজার ও হিজড়দাদের দলসহ বিভিন্ন অপরাধীরা। তারা অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে অপরাধ ঘটানোর চেষ্টা করে।
গতকাল রাতে সরেজমিনে দেখা গেছে, সৈকতের মূল পয়েন্টে লাবণী থেকে সুগন্ধা পর্যন্ত মাত্র দুটি বাতি ছাড়া সব বাতি বিকল অবস্থায় রয়েছে। অন্ধকারের মধ্যে চলাচল করছে পর্যটকরা। ঘুটঘুটে অন্ধকারে কারো অবয়ব দেখার সুযোগ নাই।
সৈকতে অবস্থান করা ফটিকছড়ি থেকে বেড়াতে আসা নাজনীন বেগম বলেন, সূর্য ডোবার পর হুট করে অন্ধকার হয়ে পড়ে। কিন্তু অন্য স্থানে বাতি জ্বললেও এই স্থানে বাতি জ্বলছে না। এতে সৈকতে অবস্থান করতে গিয়ে ভয় কাজ করছে। কখন না জানি কোনো ছিনতাইকারী বা অপরাধীর পাল্লায় পড়ি।
নরসিংদী থেকে আসা আরেক পর্যটক নাজমুল খান বলেন, সৈকতে রাতের সৌন্দর্যও কম নয়। বাতির আলোতে সমুদ্রের ঢেউ অপরূপ লাগে। কিন্তু আলো না থাকায় সে সৌন্দর্য দেখা যাচ্ছে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দায়িত্বরত কয়েকজন বিচকর্মী ও লাইফগার্ড কর্মী বলেন, বাতি না থাকায় ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বহু পর্যটক নিরাপত্তার ভয়ে বা অন্ধকারের কারণে সৈকত থেকে উঠে যায়। কিটকট ব্যবসায়ীরা জানান, দিনের পর মধ্যরাত অবধি বহু পর্যটক কিটকটে বসে রাতের সমুদ্র ও বালিয়াড়ির সৌন্দর্য অবলোকন করে। কিন্তু বাতি বন্ধ থাকায় অন্ধকার পয়েন্টগুলোতে পর্যটকরা থাকছে না। এতে ব্যবসায় মন্দা যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে ট্যুরিস্ট পুলিশ কঙবাজার অঞ্চলের প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, প্রায় সব বাতি বিকল হয়ে গেছে। এতে সন্ধ্যার পর সৈকত এলাকা অন্ধকারে ছেয়ে যায়। এই পরিবেশ অপরাধ সংগঠনের জন্য অত্যন্ত উপযুক্ত। তিনি বলেন, এর মধ্যে ট্যুরিস্ট পুলিশের কার্যালয়ের সম্মুখ অংশের কিছু বাতি জরুরি ভিত্তিতে সচল রাখা হয়। বাকিগুলো সচল করার জন্য বহু আগেই জেলা প্রশাসনের কাছে সুপারিশ করেছি আমরা। কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি। সম্প্রতি নবাগত জেলা প্রশাসককে জানালে তিনি কয়েকটি বাতি সচল করে দেয়ার উদ্যোগ নেন। বাকিগুলো শিগগিরই ব্যবস্থা করবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাহিদুল ইসলাম বলেন, বিকল বাতিগুলো সচল করতে জেলা প্রশাসন থেকে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নতুন করে টেকসই বাতি প্রতিস্থাপনের জন্য প্রক্রিয়া চলছে। অতি শিগগিরই সব বাতি প্রতিস্থাপন হয়ে যাবে।




