দি ক্রাইম ডেস্ক: জেল থেকে বেরিয়ে হঠাৎ দাড়ি ভর্তি মুখ এবং বাচনভঙ্গিতে পীর আউলিয়ার ভাব দেখা গেলেও, একই মুখ দিয়ে মিথ্যা বলা ছাড়েনি বাবর। সম্প্রতি এস আলম ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মিটিং এবং ভারত থেকে অস্ত্র এনে নির্বাচন বানচালের নতুন চটকদার গুজব রটাচ্ছে বাবর ও জাহাঙ্গীর গং। জাতিকে বিভ্রান্ত করে এবং অস্ত্রের আতঙ্ক সৃষ্টি করে, বাবর চাইছে বিএনপির চলমান চাঁদাবাজি, খুন ও সন্ত্রাসবাদকে সুকৌশলে আওয়ামী লীগের উপর চাপিয়ে দিতে ৷
বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল সিইউএফএল ঘাট থেকে আটক করা হয় ১০ ট্রাকভর্তি অস্ত্রের চালান। এটি ছিলো দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ অস্ত্র ও গোলাবারুদের চালান। উদ্ধার করা আগ্নেয়াস্ত্রগুলোর মধ্যে ছিল চীনের তৈরি একে-৪৭ রাইফেল, সেমি অটোমেটিক রাইফেল, রকেট লঞ্চার, রকেট শেল, পিস্তল, হ্যান্ড গ্রেনেড, বিপুল পরিমাণ গুলি ও বিস্ফোরক দ্রব্য। ১ হাজার ৭৯০টি বিভিন্ন ধরণের অস্ত্রের সাথে ছিলো সাড়ে ১১ লাখ গুলি, সাড়ে ৬ হাজার ম্যাগাজিন, ২৭ হাজার গ্রেনেড এবং ১৫০টি রকেট লঞ্চার।
ইউরিয়া সার কারখানা লিমিটেডের জেটিতে চোরাচালানিদের অস্ত্র খালাসের সময় কর্ণফুলী ওসি নিজে উপস্থিত ছিলো বলে সেসময়ের পত্রিকা মারফত জানা গেছে। চীন থেকে অস্ত্র এনে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মদদ দিচ্ছিলো তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত সরকার।
ভারতের আসাম ট্রিবিউন পত্রিকায় বলা হয়, ভুটানে পরিচালিত অপারেশন অল ক্লিয়ার উলফার অস্ত্রভাণ্ডারকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয়। সেই অভিযানের পর থেকেই উলফা অস্ত্র সংগ্রহের জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের ভাষ্য মতে, উলফার তৎকালীন কমান্ডার-ইন-চিফ পরেশ বড়ুয়া এসব অস্ত্র বাংলাদেশে আনার পেছনে মূল ভূমিকা পালন করেছেন। তার লক্ষ্য ছিল আসামে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন জোরদার করা।
বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন মতে, ‘১০ ট্রাক অস্ত্র ও গোলাবারুদ আটক করার ওই ঘটনায় কর্ণফুলী থানা পুলিশ বাদী হয়ে অস্ত্র ও চোরাচালান আইনে দু’টি মামলা করেন।
ঘটনা তদন্তের পর তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তা দায়সারা গোছের একটি অভিযোগপত্র দাখিল করার পর বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এই মামলার অধিকতর তদন্ত শুরু হয়। অস্ত্রের বিশাল একটি চালান আটকের ঘটনায় সম্পৃক্ততার দায়ে চট্টগ্রামের একটি আদালত ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে বিএনপির নেতৃত্বে জোট সরকারের শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিএনপি নেতা লুৎফুজ্জামান বাবর এবং দু’টি গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ১৪জনকে ফাঁসির আদেশ দেয়।’
বর্তমান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন ২০০৪ সালে অস্ত্র আটকের ঘটনার সময় কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার ছিলেন? সে সময় তিনি বাবরের এই অস্ত্রের চালান আটককর্তা পুলিশ অফিসারদের ‘র’ দাবি করে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেছিলেন, “যারা অকুস্থলে গিয়ে অস্ত্র ধরেছে, সম্ভবত ভারতীয় ইন্টেলিজেন্স তাদের আলাদাভাবে ফিট করেছে”। আর অন্যদিকে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবর তার স্বভাবসুলভ মিথ্যাচার করে বলেছিলেন,’চট্টগ্রামে আটককৃত ১০ ট্রাক অস্ত্র ও গোলাবারুদ দেশের অভ্যন্তরে ব্যবহার এবং নাশকতার জন্য আনা হয়েছে।’
বিবিসি বাংলার বরাতে জানা যায়, আওয়ামী লীগের কথা সরাসরি উল্লেখ না করে বাবর সে সময় বলেছিলেন, “ ৩০ এপ্রিলের মধ্যে তারা যেহেতু এ সরকারের পতন ঘটাবে বলেছে তাতে এ বিষয়টি উড়িয়ে দেয়া যায় না।” এই অবৈধ অস্ত্রের রহস্য উদঘাটনে শেখ হাসিনা তখন আন্তজার্তিক তদন্তের আহ্বান করেছিলেন।
বিবিসি বাংলার বরাতে আরো জানা যায়, ‘বিরোধী দলের পক্ষ থেকে যখন আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি তোলা হয় তখন বিএনপির তৎকালীন মহাসচিব ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রী আব্দুল মান্নান ভুঁইয়া বিবিসি বাংলাকে বলেন, অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক তদন্ত করা হবে। প্রকৃতপক্ষে, মান্নান ভুঁইয়ার সে বক্তব্য ছিল অনেকটা কথার কথা। সরকার কখনোই আন্তর্জাতিক তদন্তের বিষয়টি চিন্তা করেনি এবং সেটি হয়নি।’
বিএনপি চিরকালই সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের আতুরঘর, অস্ত্রের মহড়া দিয়েই তারা দেশের মাটিতে তাদের রাজনৈতিক বিচরণ নিশ্চিত করে আসছে বহুকাল ধরে। বিএনপির সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় ফাঁসির আসামী জঙ্গী বাবরের মিথ্যাচার ও আওয়ামী লীগের উপর দায় চাপানোও নতুন কিছু নয়৷ জাতিকে আজ আর বোকা বানাতে চাইলেই বাবর তার জঙ্গী সম্পৃক্ততার ইতিহাস মুছে দিতে পারবে না। আজ যদি বাংলাদেশে অস্ত্রের চালান আসেও তাহলে এই চালানের হোতা ফাঁসির আসামী এই বাবর গংই, বিএনপির আজকের হিংস্রতার সাথে অস্ত্রের যোগসাজশ একদমই বেমানান নয়। সুতরাং, আওয়ামী লীগ নয় বরং বাংলাদেশকে উত্তপ্ত করতে অস্ত্রের চালান আনছে বাবরের নেতৃত্বে বিএনপিই।