প্রদীপ দাশ, কক্সবাজার প্রতিনিধি : কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে খুনের ঘটনা সামপ্রতিক সময়ে কিছুটা কমলেও অপহরণ, মাদক পাচার ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর দৌরাত্ম্য বেড়েছে উদ্বেগজনকহারে। এতে ক্যাম্পের সাধারণ রোহিঙ্গারা যেমন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে, তেমনি প্রভাব পড়ছে স্থানীয় জন জীবনেও।
চলতি বছরের মার্চে উখিয়ার তানজিমারখোলা ক্যাম্প-২০-এর হেড মাঝি মোহাম্মদ নুরকে মসজিদ থেকে ফেরার পথে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। গত ১১ জুন উখিয়ার ২ নম্বর ক্যাম্পে স্ত্রীকে গলাকেটে হত্যার অভিযোগে আটক হন রোহিঙ্গা এনজিওকর্মী ছৈয়দ আলম।
গত ১৬ জুন টেকনাফের নয়াপাড়া রেজিস্টার্ড ক্যাম্পে কথা কাটাকাটির জেরে রোহিঙ্গা তরুণ মো. আলমগীরকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এসব হত্যাকাণ্ড ক্যাম্প জুড়ে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। তবে মার্চ মাসে রোহিঙ্গা সশস্ত্র সংগঠন আরসার প্রধান আতাউল্লাহ জুনুনীসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তারের পর থেকে হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা কিছুটা কমে এসেছে। কিন্তু খুন কমলেও অপরাধের মাত্রা আশংকাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
সংশ্লিষ্ট পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত ক্যাম্পগুলোতে অন্তত ২৫০টি মামলা রুজু হয়েছে। এর মধ্যে ১৮টি হত্যা মামলা, ১৫০টি মাদক মামলা, ৫০টি অপহরণ মামলা এবং ১২টি ধর্ষণের মামলা রয়েছে। ২০১৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মোট ২৮৭টি মামলা হয়েছে।
সূত্র বলছে, ইদানীং হত্যা, অপহরণ, অস্ত্র ও ইয়াবা চোরাচালান, চাঁদাবাজি এবং গুজব ছড়ানোর মতো অপরাধ বাড়ায় নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
জেলা পুলিশের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে উখিয়া-টেকনাফের ক্যাম্পগুলোতে অন্তত ১০টি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে। আগে এ সংখ্যা ছিল ১৪। তাদের মধ্যে কুখ্যাত আবদুল হাকিম বাহিনী সবচেয়ে বেশি তৎপর।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ক্যাম্প কেন্দ্রিক অপরাধ দমনে যৌথভাবে কাজ করছে বিভিন্ন সংস্থা। মাদক নিয়ন্ত্রণে ইতিমধ্যে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) ও আরআরআরসি কার্যালয় জানায়, উখিয়া-টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। তবে নতুন করে গত দেড় বছরে আবার দেড় লাখ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করায় বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ার ফলে বাংলাদেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক চাপ বহুগুণে বেড়ে গেছে।
কক্সবাজারের বিভিন্ন থানা এলাকা পরিদর্শনে দেখা গেছে,রোহিঙ্গা শরণার্থীরা নিরীহ মানুষের জায়গা দখলসহ কৌশলে দেশের ভোটার তালিকায় নাম উঠিয়ে এ দেশীয় নাগরীকও হচ্ছে। এছাড়াও কক্সবাজার সীবিচ এলাকা ও আবাসিক হোটেলগুলোতে অসামাজিক কার্যকলাপে তারা লিপ্ত রয়েছে। স্থানীয় টুরিস্ট পুলিশ ও সংশ্লিষ্ঠ থানা কিংবা জেলা প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোন আইনি পদক্ষেপ না নেওয়ায় রোহিঙ্গারা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।