মিজবাউল হক, চকরিয়া: ২০২২-২৩ অর্থবছরে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার দরবেশ কাটা গ্রামের কৃষক আজম নুরের নামে একটি কম্বাইন হারভেস্টার বরাদ্দ দেখানো হয়েছে। কাগজে-কলমে তাকে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে ২১ লাখ ৬৩ হাজার টাকা (৭০ শতাংশ)। কিন্তু আজম নুর টাকা দিয়েও যন্ত্র পাননি।
তিনি বলেন, ‘ঋণ নিয়ে ৯ লাখ টাকা দিয়েছি। মেশিন দেখিয়ে নিয়ে গেছে। এখনো মেশিন পাইনি, টাকাও ফেরত দেয়নি। এভাবে পুরো চকরিয়া উপজেলাতে প্রায় ১শ’ র বেশি কম্বাইন হারভেস্টার দেওয়া হয়েছে কাগজে কলমে তবে বেশির ভাগই বর্তমানে তার কোন হদিস নেই। তৎকালীন কর্তব্যরত উপজেলা কৃষি অফিসার এস এম নাসিম হোসেন এবং উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রাজীব দে সহ জেলা অফিসের শীর্ষ কর্মকর্তা দীর্ঘ বছর ধরে কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয় এবং বিতরণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম দূর্নীতি করে বিপুল টাকা আত্মসাৎ করেছে। দূর্নীতি দমন কমিশন দুদকের তদন্তে উঠে এসেছে এমন ভয়াবহ তথ্য।
দুদক প্রধান কার্যালয়ের এক সহকারী পরিচালক বলেন,উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে চকরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসে গিয়ে এ বিষয়ে তদন্ত করা হয়েছে। বেশ কয়েকজন প্রান্তিক কৃষকের বক্তব্য এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংরক্ষণ করা হয়েছে। উর্ধ্বতনকর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে এখনো কোন সিদ্ধান্ত দেয়নি। এটা নিয়ে আরো তদন্ত চলছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চকরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসের এক কর্মচারী বাণিজ্যিকীকরণ ও আধুনিকায়নের মাধ্যমে কৃষিকে লাভজনক করে তোলার উদ্দেশ্যে ‘সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ’ প্রকল্প হাতে নিয়েছিল বিগত সরকার। এই প্রকল্পে উন্নয়ন সহায়তার (ভর্তুকি) মাধ্যমে কৃষকদের ১২ ধরনের ৫১ হাজার ৩০০টি কৃষিযন্ত্র দেওয়ার কথা। কৃষিযন্ত্র কেনার জন্য হাওর ও উপকূলীয় এলাকার কৃষকদের ৭০ শতাংশ এবং অন্য সব এলাকার কৃষকদের ৫০ শতাংশ ভর্তুকি দেওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু বিগত আওয়ামীগ সরকারের আমলে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলায় বিপুল পরিমান কৃষি যন্ত্রপাতী ক্রয় এবং বিতরণ সংক্রান্ত কাজে ব্যাপক লুটপাট করেছে অন্তত কোটি টাকা হাতিয়েছে সাবেক কর্মকর্তা এবং কিছু রাজনৈতিক নেতারা।
সাবেক কৃষি অফিসার এস এম নাসিম হোসেন এবং রাজীব দে। এই কাজে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করে ভাগ নিয়েছেন কক্সবাজার উপ পরিচালকরা। কয়েক মাস আগে ঢাকা থেকে দুদক সে বিষয়ে তদন্তে এসেছিল তারা বেশ কয়েকজন কৃষকের সাথে কথা বলেছে বেশ কিছু কাগজ পত্রও নিয়ে গেছে। তার পরপরই কৃষি অফিসার এস এম নাসিম হোসেনকে উখিয়া উপজেলায় বদলী করা হয়েছে।
জানা গেছে, এই প্রকল্পে দুর্নীতির দায়ে ঢাকা থেকে সাবেক প্রকল্প পরিচালক (পিডি) তারিক মাহমুদুল ইসলামসহ আট কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বিভিন্ন সংস্থার তদন্তে বেরিয়ে আসছে কৃষককে ভর্তুকি দেওয়ার নামে অর্থ লোপাটের অনেক তথ্য।
মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, অনিয়মের অপরাধে বরখাস্ত হতে পারেন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট আরও অন্তত ৫০ কর্মকর্তা। এমন পরিস্থিতিতে শেষ অর্থবছরে প্রকল্পের তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। আগের দায় না নিতে এখন তড়িঘড়ি করে কাজ গোছাতে চাইছেন বর্তমান প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ সফিউজ্জামান।
এ নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কয়েক মাস হলো প্রকল্প পরিচালক হয়েছি। কোনো কাজ করতে পারিনি। এ সময়ে ভর্তুকিতে একটি যন্ত্রও সরবরাহ করিনি। আগের অনিয়ম আর দুর্নীতির জবাব দিতে দিতেই ক্লান্ত। শেষ সময়ে প্রকল্পের বাকি কাজ করাও সম্ভব নয়, তাই চলতি অর্থবছরে বরাদ্দের ৪২১ কোটি টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে।
চকরিয়া উপজেলার সাবেক কৃষি কর্মকর্তা ও বর্তমান উখিয়া উপজেলায় দায়িত্বপ্রাপ্ত এস এম নাসিম হোসেন বলেন, আমার জানা মতে দুদকের কোন তদন্ত আমাদের অফিসে আসেনি। এটা অন্য অফিসে এসেছিল। আর এগুলো শুধু আমার একার বিষয় না সারাদেশে হচ্ছে।
চকরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার শাহনাজ ফেরদৌসি বলেন, আমার দায়িত্বকালীন সময়ে দুদকের তদন্ত টিম আসেনি। আগে এসে থাকলে আমি জানি না, তবে আমিও শুনেছি কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয় এবং বিতরণ নিয়ে দুদক তদন্ত করছে।
দূর্নীতি দমন কমিশন দুদক কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শাখাওয়াত হোসেন বলেন, যতটুকু জানি এটা ঢাকা অফিস থেকে টিম সরাসরি এসেছিল।
কক্সবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক বিমল প্রমানিক বলেন, কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয় বিষয়ে দুদকের তদন্ত সারা দেশের বিভিন্ন অফিসে হচ্ছে। এটা শুধু চকরিয়া বলে কথা নয়।




