সাক্ষাৎকার———

সুকান্ত বিকাশ ধর : ইচ্ছে ছিল লেখাপড়া শেষ করে ভালো চাকুরি করবে। দুঃখ ঘুছাবে বৃদ্ধ মা-বাবার। ইচ্ছে অনুযায়ী বিবিএ সম্পন্ন করে চাকুরি নেন এনজিওতে। পরিবারের চাপে করেন বিয়ে। বিয়ের আগে মা-বাবা নিয়ে কোনো রকমের সংসার চললেও বিয়ের পর খরচ বেড়ে যাওয়ায় ছেড়ে দেন চাকুরি। সংসারের ব্যয় মেটাতে প্রথমে ভাড়ায় সিএনজি চালিত অটোরিকশা ক্রয় করে পেশা হিসেবে বেছে নিয়ে নিজেকে আবিষ্কার করেন অটোরিক্সা চালক হিসেবে। এভাবে চলছিল বছর পাঁচেক। পরে কিস্তির মাধ্যমে নিজেই ক্রয় করেন একটি অটোরিকশা। এখনও কিস্তির টাকা বাকি রয়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। কিন্তু বিধি বাম।

সম্প্রতি উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন অটোরিকশাটি চুরি হয়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েন ওই শিক্ষিত যুবক। থানা প্রশাসনকে এ ব্যাপারে অভিযোগ দেয়ার পরও কোন বিহিত না হওয়ায় সম্পূর্ণ বেকার হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন নিজেসহ পুরো পরিবার। বলছিলাম- চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার কাঞ্চনা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মীর পাড়ার বাসিন্দা আবুল হোসেনের ছেলে আমির হোসেনের (২৩) কথা। সম্প্রতি এ প্রতিবেদককে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আমির হোসেন শোনালেন তার সাথে ঘটে যাওয়া এ করুন কাহিনী।

আমির হোসেন বলেন, ২০১৭ সালে চট্টগ্রামের সাউদার্ণ ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএ সম্পন্ন করার পর চাকুরী নেন বেসরকারি সংস্থা এনজিওতে। ২০১৮ সালের শেষের দিকে বেতন কম হওয়ায় ওই চাকুরি ছেড়ে দিয়ে ভাড়া নিয়ে শুরু করেন অটোরিকশা চালনা। ২০১৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল এভাবেই চলছিল জীবিকা নির্বাহ। ২০২৩ সালের শেষের দিকে সাড়ে ৫ লাখ টাকা আসল ও ১ লাখ ২০ হাজার টাকা লাভসহ মোট সাড়ে ৬ লাখ টাকা দিয়ে কিস্তির মাধ্যমে নিজেই একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ক্রয় করি। কিস্তির টাকা এখনও ১লাখ ৭০ হাজার বাকি। ২৩ মে রাতে অটোরিকশাটি চুরি করে নিয়ে যায় চোরের দল। বর্তমানে উপার্জনের একমাত্র মাধ্যমটি হারিয়ে তিনি এখন নিঃস্ব।

আমির হোসেন আরও বলেন, অন্যান্য দিনের মতো ২৩ মে রাত সাড়ে ১১ টার দিকে আমির হোসেন সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালিয়ে বাড়িতে ফিরেন। এরপর তার বাড়ির সামনের একটি গ্যারেজে সিএনজিচালিত অটোরিকশাটি রেখে গ্যারেজের দরজা তালাবদ্ধ করে বাড়িতে চলে যান তিনি। পরদিন ২৪ মে সকালে সিএনজিচালিত অটোরিকশাটি নিয়ে উপার্জনের জন্য বের হওয়ার উদ্দেশ্যে গ্যারেজে গিয়ে তিনি দেখতে পান দরজার তালা ভাঙা। পরে তিনি গ্যারেজের ভেতরে প্রবেশ করে দেখেন তার গাড়িটি সেখানে নেই। তখনই তিনি বুঝতে পারেন চোরেরদল গ্যারেজের তালা ভেঙে তার গাড়িটি চুরি করে নিয়ে গেছে। সম্ভাব্য অনেক স্থানে খুঁজেও অটোরিকশাটি পাওয়া যায়নি। একইদিন (২৪মে) নিজে (আমির হোসেন) অজ্ঞাতনামা চোরদের বিবাদী করে সাতকানিয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। থানায় অভিযোগ দায়েরের ৬ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও অটোরিকশাটি খুঁজে পায়নি পুলিশ। এমন পরিস্থিতিতে ৫ সদস্যের পরিবারের ভরণপোষণের কথা চিন্তা করে চোখে ঘোর অন্ধকার দেখছেন তিনি।

অটোরিকশা চালক আমির হোসেন বলেন, ২০০৯ সালে বাঁশখালী উপজেলার নাটমুড়া পুকুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করার পর ২০১১ সালে সাতকানিয়ার আল হেলাল আদর্শ ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরে বিবিএ শেষ করে এনজিও সংস্থার চাকুরির টাকায় কুলাতে না পেরে বেছে নেন অটোরিকশা চালনা। পরিবারে মা, বাবা, স্ত্রী ও ৬ বছর বয়সী একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। অটোরিকশা চালিয়ে যে টাকা উপার্জন করি সেগুলো দিয়ে আমার সংসার চলত। গাড়িটি চুরি হওয়ার পর থেকে উপার্জন সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। এখন বেকারত্বের ভার কাঁদে নিয়ে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছি। অনেক সময় অর্ধাহারে-অনাহারে পার করছে পুরো পরিবার। প্রশাসনের নিকট বিনীত অনুরোধ, আমার গাড়িটি যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে উদ্ধার করা হয়। যাতে আমি এ কষ্টের জীবন থেকে মুক্ত হতে পারি।

কাঞ্চনা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য সৈয়দ মোস্তফা কামাল হিরু বলেন, আমির হোসেন একজন শিক্ষিত যুবক। সে বিবিএ পাস করে পরিবারের ভরণপোষণের জন্য ট্যাক্সি চালাচ্ছে। সম্প্রতি তার ট্যাক্সিটি চুরি হয়ে যাওয়ায় সে খুবই অর্থ কষ্টে রয়েছে। এ দুঃসময়ে স্থানীয় প্রশাসনের উচিত আমিরের মতো যুবকের পাশে দাঁড়ানো।

সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহেদুল ইসলাম বলেন, আমরা প্রায় সময় রাতে কাঞ্চনা ইউনিয়নের দিকে টহলে যায়। সেখানকার সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকরা রাতে বাড়ির বাইরে ও রাস্তার পাশে তাদের গাড়িগুলো ফেলে রেখে ঘুমিয়ে যায়। আমরা বিভিন্ন সময় তাদেরকে সতর্ক করেছি৷ সম্প্রতি আমির হোসেন নামের এক চালকের গাড়ি চুরি হয়ে যাওয়ার বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। গাড়িটি উদ্ধারে ওই এলাকার সিসিটিভি ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। আশা করছি শীঘ্রই তার গাড়িটি উদ্ধার করতে সক্ষম হব।