দি ক্রাইম নিউজ ডেস্ক: ‘ওকালতনামা জটিলতা’ কাটিয়ে সুপ্রিম কোর্টের ১১ আইনজীবী আজ বৃহস্পতিবার(০২ জানুয়ারী)সকালে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রক্ষ্মচারীর জামিন শুনানি করেছেন। তবে দ্বিতীয় বারের মতো তার জামিন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। শিগগিরই আদেশের নকল তুলে উচ্চ আদালতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন চিন্ময়ের আইনজীবীরা। তাদের আশা, সেখানে তারা ন্যায়বিচার পাবেন।
এদিকে, চিন্ময়ের আগের আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ চট্টগ্রামের আইনজীবীদের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় তুললেও এবার চট্টগ্রামের আইনজীবী ও জেলা বারের সভাপতি-সম্পাদকের কর্মকাণ্ডে ‘সন্তোষ’ প্রকাশ করেছেন চিন্ময়ের আইনজীবীরা। ‘সবাই ভালো ব্যবহার করেছেন’ উল্লেখ করে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের আইনজীবীদের প্রতি কৃতজ্ঞতাও।
চিন্ময়ের আইনজীবী সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অপূর্ব কুমার ভট্টাচার্য বলেন, ‘চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দু’জনেই উপস্থিত থেকে শুনানিতে আমাদের যথেষ্ট সহযোগিতা করেছেন। এজন্য আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। সবাই খুব ভালো ব্যবহার করেছেন। বিজ্ঞ আদালতও আমাদের সাথে ভালো ব্যবহার করেছেন এবং ভালোভাবেই উপসংহারে নিয়ে এসেছেন।’
যেভাবে কাটলো ‘ওকালতনামা জটিলতা’
চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গত ২৫ নভেম্বর রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রাম আদালতে তাঁর জামিনের আবেদন খারিজ হয়। আদেশের রিভিশন চেয়ে জামিন শুনানির আবেদন করলে ২৭ নভেম্বর দিন ধার্য করেন আদালত। কিন্তু জামিনকাণ্ড নিয়ে ওইদিন আদালত প্রাঙ্গণে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে এবং সাইফুল ইসলাম আলিফ নামে একজন আইনজীবী খুন হয়। পরে ৩ নভেম্বর শুনানির দিন ধার্য করা হয়। সে দিন চিন্ময়ের কোনো আইনজীবী উপস্থিত না থাকায় আদালত ২ জানুয়ারি পরবর্তী দিন ধার্য রাখেন।
গত ১১ ডিসেম্বর চিন্ময় কৃষ্ণের পক্ষে শুনানি করতে ঢাকা থেকে এসেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এবং বাংলাদেশ মাইনরিটি ওয়াচের সভাপতি রবীন্দ্র ঘোষ। প্রথমদিন তিনি তিন আবেদন নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু আসামিপক্ষে ওকালতনামা কিংবা লিখিত কোনো আবেদন না থাকায় সব আবেদন নাকচ করে দেন আদালত। দ্বিতীয় দিন তিনি উচ্চ আদালতের ওকালতনামা জমা দিলেও আদালত জানান, চট্টগ্রাম বারের আইনজীবীর ওকালতনামা দিয়েই মামলায় লড়তে হবে। তিনবার সময়ে দিলেও স্থানীয় কোনো আইনজীবী সেদিন ওকালতনামা দেননি। ফলে, ‘ওকালতনামা জটিলতায়’ শুনানি ফের চলতি বছরের ২ জানুয়ারি নির্ধারণ করেন আদালত।
আদালত সূত্র ও আইনজীবীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রামের আদালতে মামলা শুনানি করতে হলে ওই আইনজীবীকে স্থানীয় বারের সদস্য হতে হবে। যদি চট্টগ্রামের বাইরের আইনজীবী হন, তবে মামলা পরিচালনার জন্য আসামির ওকালতনামাধারী আইনজীবীর সশরীরে উপস্থিতিতে মৌখিক অনুমতি অথবা লিখিত অনুমতি থাকতে হবে। এছাড়া স্থানীয় বারের অন্য যে কোনো আইনজীবীর ওকালতনামা দিয়েও তিনি মামলার শুনানি করতে পারবেন।
যে ১১ আইনজীবী ছিলেন চিন্ময়ের পক্ষে
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর পক্ষে এসে শুনানি করতে ‘ব্যর্থ’ হওয়া সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ বর্তমানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অবস্থান করছেন। হৃদরোগ জনিত সমস্যা নিয়ে তিনি কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। হাসপাতালে থাকায় কবে তিনি দেশে ফিরবেন-তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই রবীন্দ্র ঘোষের ‘নির্দেশে’ চিন্ময়ের পক্ষে বৃহস্পতিবার ১১ জন আইনজীবী এসেছিলেন সুপ্রিম কোর্ট থেকে।
এদিন সকাল সাড়ে ১০টায় তারা আদালতে প্রবেশ করেন। সকাল সাড়ে ১১টায় জামিন শুনানি শুরু হয়। শুনানির সময় আদালত দু’পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনেন। চিম্ময়ের পক্ষের আইনজীবীরা তাঁকে সম্পূর্ণ নির্দোষ বলে দাবি করেন। প্রায় ৪০ মিনিট উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে আদালত চিন্ময়ের জামিন নামঞ্জুরের আদেশ দেন।
আদালত সূত্র জানিয়েছে, আইনজীবী ঐক্য পরিষদের পক্ষে এই আইনজীবী দলের নেতৃত্ব দেন ‘সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট’ এর নেতা অ্যাডভোকেট অপূর্ব কুমার ভট্টাচার্য। তিনি ছাড়াও আছেন, অ্যাডভোকেট অনুপ কুমার সাহা, শংকর চন্দ্র দাস, মিন্টু চন্দ্র দাস, সব্যসাচী মন্ডল, দিপ্তি হালদার, সুমন কুমার রায়, হিন্দোল নন্দী, প্রভাশ তন্ত্রী, শেখর চন্দ্র দাস ও রবিন্দ্র নাথ রবিন।
অ্যাডোভোকেট অপূর্ব কুমার ভট্টাচার্য বলেন, ‘উচ্চ আদালতে আমরা জামিন চাইবো। কয়েকদিনের মধ্যেই আমরা কাগজপত্র হাতে পেয়ে যাবো। হয়তো দুই থেকে তিনদিন সময় লাগতে পারে। এরপরই আমরা উচ্চ আদালতে মুভ করবো।’ ‘আমাদের আর্গুমেন্ট ছিল, যে সব ধারায় মামলা দেওয়া হয়েছে ধারাগুলো ওনার জন্য খাটে না। কারণ ধারাগুলোর মধ্যে ১২৪(ক) এবং ১৫৩(ক) হলো রাষ্ট্রদ্রোহিতার ধারা। সেক্ষেত্রে এই মামলা দায়ের করতে হলে ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ১৯৬ ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রের পূর্বানুমতি দরকার। এজাহার দায়েরের পূর্বেই এই অনুমতি থাকতে হবে। মামলাটি যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় হয়নি। উনি যেখানে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে পতাকা নাড়িয়ে নাড়িয়ে সমাবেশ শুরু করে সেখানে কিভাবে তিনি পতাকা অবমাননা করবেন? মামলাটি অত্যন্ত হয়রানিমূলক। এটা কোনোক্রমেই এস্টাবলিশ হবে না। এটার চার্জই গঠন হবে না। সুতরাং এক্ষেত্রে তার জামিন পেতে অসুবিধা নেই- এ বিষয়গুলো আমরা আদালতের নজরে এনেছি।’
উচ্চ আদালতে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের পক্ষে আইনি লড়াই লড়তে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন খ্যাতনামা আইনজীবী জেডআই খান পান্না।




