নগর প্রতিবেদক: সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ এর ৮ দফা দাবির আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক সাবেক জ্বালানী উপদেষ্টা মাহমুদুর রহমান ও ইনকিলাব মঞ্চ নামক একটি গ্রুপের সংবাদ সম্মেলনের পর পিনাকী ভট্টাচার্য ফেস দ্যা পিপলস ও অন্যান্য কিছু উগ্রবাদী পেইজ/গ্রুপ এবং তথাকতিত উচ্চ পর্যায়ের নেতা দাবিদার কিছু হিন্দু বিদ্বেষী নেতার ইসকন বিরোধী উস্কানীমূলক বক্তব্যের জেরে সারাদেশে ইসকন ও হিন্দু বিরোধী স্লোগান, পোষ্ট, বক্তব্য ছড়ানো শুরু হয় ফেইসবুক ফেইজে।
এরই জের ধরে হাজারী গলি মোল্লা স্টোরের মালিক ওসমান মোল্লা ইসকন ও হিন্দুদের নিয়ে চরম বাজে মন্তব্য করে। এতে ক্ষিপ্ত হয় স্থানীয় হিন্দুরা। তারা ওসমান মিয়ার দোকানে গিয়ে বাকবিতন্ডা শুরু করে। এক পর্যায়ে উত্তেজনা ও হাতাহাতি শুরু হয়। খবর পেয়ে স্থানীয় প্রশাসন দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। ওসমান মিয়া তার দোষ স্বীকার করেন। তারপর প্রশাসন তাকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দিতে চায়।
এসময় হিন্দুরা প্রতিবাদ করে বলেন, খুলনার উৎসব মন্ডল, পটিয়ার পার্থ বিশ্বাস ও ফরিদপুর হৃদয় পাল সহ কোন হিন্দুকে তো ছাড়েননি, তাহলে ওসমানকে কেন ছাড়বেন? এই কথার জেরে পুলিশের সাথে উত্তেজনা বাড়ে এবং ধাক্কাধাক্কি হয়। একপর্যায়ে পাশের স্বর্ণের কারিগরদের দোকানের ভেতর ধস্তাধস্তির সময় উপরে রাখা কারিগরদের কাজ করার এসিডের বোতল ছিটকে নিচে পরে তা অনেকের গায়ে লাগে।
বনিক সমিতির সহায়তায় রাত ৮ টার দিকে সব শান্ত হয়ে গিয়েছিলো। প্রশাসন ও স্থানীয় হিন্দু-মুসলিমরা মিলে সমস্যার সমাধান করে পরিবেশ শান্ত সুন্দর করে ফেলেছিলো। কিন্তু ফেস দ্যা পিপলস ও অন্যান্য উগ্রবাদী পেইজে মিথ্যে তথ্য দিয়ে ছড়িয়ে উস্কানী বাড়াতে থাকে।
এরপর হঠাৎ রাত ১০:২০ এর দিকে সেনাবাহিনীর বেশ কয়েকটি গাড়ি এসে ভরে যায় হাজারী গলি ও সিনেমা প্যালেস এরিয়া। এরপরই শুরু হয় হিন্দুদের গণ গ্রেফতার ও অমানবিক নির্যাতন। নির্যাতনের প্রমাণ নষ্ট করতে সিসি ক্যামেরা ভাঙ্গার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। বহু হিন্দু আহত ও গ্রেফতারের পর ১৪৪ ধারা জারি করে কিছুটা শান্ত হয়।
দুই ঘন্টা বিরতির পর রাত ৩ টা’র পর থেকে সেনাবাহিনী আবার এলোপাথারি গুলি ছুড়তে শুরু করে। সেনা বাহিনী বিভিন্ন স্বর্ণের গহনা তৈরীর কারখানা এবং বাসায় ঢুকে গিয়ে গণহারে পিটায় এবং কারিগরদের কাজের সোনা লুট করে। সেনাবাহিনীর গণহারে লাটিচার্জে ৫ জনের প্রাণ হানি ঘটেছে আহত হয়েছে অজস্র।
রাতে আনুমানিক ২০০ জন কে তুলে নিয়ে যায় সেনাবাহিনী। তারা ক্যাম্পে নিয়ে তাদের উপর অমানবিক নির্যাতন চালায়। তাদের পিটুনিতে কয়েক জন রাস্তায় পড়ে থাকলেও সেনাবাহিনী তাদেরকে তাৎক্ষণিক ভাবে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার কোন সুযোগ দেয়নি এবং কাউকে নিতেও দেয়নি।
এখন পর্যন্ত ৮০ জনকে গ্রেফতার দেখানো হলেও নিখোঁজ এখনো ১২০ জনের মতো। এই হলো গতকাল বাংলাদেশের হিন্দুদের উপর আক্রমনের পরিস্থিতি ছিল খুবই ভয়াবহ। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি থমথমে।
অন্যদিকে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের ব্যানারে জামালখানস্থ প্রেস ক্লাব এলাকায় আজ বুধবার (০৬ নভেম্বর) বিকাল ৩ টায় জামাত-শিবিরের কর্মীরা ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন ।
এবিষয়ে একাধিক হিন্দু নেতারা চট্টগ্রামের হাজারী লেইনসহ ভিবিন্ন হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় একই কায়দায় পুনরায় হামলার আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, হাজারী লেইনের ঘটনাটা ছিল আইন শৃংখলা বাহিনী ও সাম্প্রদায়িক উগ্রবাদী গোষ্ঠির পরিকল্পিতভাবে নিধনযজ্ঞ।
বাংলাদেশে চলমান সাম্প্রদায়িক সহিংসতার প্রতিবাদে সনাতন জাগরণ মঞ্চ এর উত্তাপিত ৮দফা দাবিতে ঘোষিত কর্মসুচি বানচাল করতে এই বিচার বহির্ভূত নির্যাতনে হত্যা যজ্ঞের অংশ।




