মো. কামাল উদ্দিন, বিশেষ প্রতিবেদক: ইস্কনের সনাতনী সমাবেশে জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা গত ২৫ অক্টোবর শুক্রবার লালদিঘি ময়দানে ইস্কন আয়োজিত সনাতনী সমাবেশকে কেন্দ্র করে জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা দায়ের হওয়ার কারণে আজ বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) বিকাল ৩টায় সনাতনী সমাজ নগরীর চেরাগী পাহাড় মোড়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।
অভিযোগে বলা হয়, নিউ মার্কেট মোড়ে বিজয় ভাস্কর্যের উপর বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার স্থানে ইস্কনের পতাকা উত্তোলন করা হয়, যা জাতীয় পতাকার অবমাননার শামিল।
ফিরোজ খান নামে এক ব্যক্তি কোতোয়ালি থানায় এই মামলাটি দায়ের করেন। মামলা নম্বর ০২, তারিখ ৩১/১০/২০২৪। মামলায় ১৯ জনের সুনির্দিষ্ট নাম ও ঠিকানা উল্লেখসহ আরও ১৫-২০ জন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
অভিযোগে দণ্ডবিধির ১২৪-ক, ১৫৩-ক, ১০৯ ও ৩৪ ধারায় রাষ্ট্রদ্রোহ, জাতিগত ও ধর্মীয় উত্তেজনা সৃষ্টি এবং রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অপরাধের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
কোতোয়ালি থানার ওসি (তদন্ত) সৈয়দ ওমর জানান, এই অভিযোগের বিষয়টি দেশের স্বাধীনতা, অখণ্ডতা এবং শান্তির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা দেশের আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করতে পারে। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে এবং সরকারও ঘটনাটি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। পুলিশ প্রশাসন এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে তিনি জানান।
তিরিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতার একমাত্র নিদর্শন জাতীয় পতাকা, সেই পতাকাকে সামনে রেখে আমাদের জাতীয় অনুপ্রেরণা, এই দেশ একটি অসাম্প্রদায়ীক রাষ্ট্র, এখনে সকল ধর্মের মানুষের বসবাস, আমরা সংঘাত বিশ্বাস করিনা, কিন্ত আমাদের জাতীয় পতাকা কে অসম্মান করে গত ২৫ অক্টোবর শুক্রবার লালদিঘির ময়দানে হিন্দু সাম্প্রদায়ের ধর্মিয় সংগঠন “ইস্কন” কতৃক আয়োজিত জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই জনসভায় সারাদেশ থেকে প্রতিবাদি মুখর সনাতনী হিন্দুগণ যোগদান করেছিলেন, তাতে চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ সাহেব এর নেতৃত্ব সকল পুলিশ প্রশাসন নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রত্যক্ষভাবে কাজ করেছেন।
বিশেষ করে কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ ফজলুল কাদের চৌধুরী সক্রিয় সহযোগিতায় জনসভা সম্পুর্ণ করেছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, তাদের জনসভার আগত একটি অতিউৎসাহী গ্রুপ ধর্মিয় ও রাষ্ট্রিয় সংঘাত সৃষ্টি করার কুমানসে চট্টগ্রাম নিউ মার্কেট চত্বরে বিজয় নিদর্শনের উপর আগে থেকে উড়ানো থাকা আমাদের জাতীয় পতাকার উপরে তাদের দলীয় বা ধর্মিয় সংগঠনের (ইসকন) পতাকা উত্তোলন করে আমাদের জাতীয় পতাকার প্রতি অসম্মান করেছেন, তাতে আমাদের প্রশ্ন হলো এইটা কিসের ইংগিত? একটি স্বাধীন দেশের জাতীয় পতাকার উপর এইভাবে ইসকন পতাকা উত্তোলন করে আমাদের মধ্যে পরিকল্পিত ভাবে সাম্প্রদায়িক মনোভাবের পরিচয় দিয়ে ধর্মিয় সংঘাত সৃষ্টি করার ষড়যন্ত্র বলে মনে করেন।
এই পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে কোতোয়ালি থানার পুলিশকে বর্তমান সরকার তথা বাংলাদেশের স্বাধীনতা প্রিয় মানুষের কাছে বিতর্কিত বিমূর্ত পুলিশ হিসেবে উপস্থাপন করার বড় ধরনের ষড়যন্ত্র বলে মনে করা হচ্ছে। সম্ভবত একশ্রণীর সংঘাত সৃষ্টিকারিরা পরিকল্পিত ভাবে সাম্প্রদায়িক মনোভাবের পরিচয় দিয়ে এই অনৈতিক কাজ করেছন।
সুত্রে আরো জানা গেছে, কথিত একটি চিহ্নিত গোষ্টি সনাতনীদের আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার কুমানসে এ চক্রান্ত। সনাতনীদের ধর্মীয় গুরু চিম্ময়ী গোস্বামীসহ অন্যন্য গোস্বামীদের কেন এবং কি কারণে মামলাতে আসামী করা হলো তা সংশ্লিষ্ঠ প্রশাসনের খতিয়ে দেখা উচিত। মামলাটিতে ১৯ জনকে সুনির্দিষ্ট আসামি এবং অজ্ঞাত পরিচয়ের আরও ১৫-২০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ ফজলুল কাদের চৌধুরী এই বিষয়ে মন্তব্য করে বলেন, “মামলা দায়ের হলেও তদন্ত না করে এবং প্রকৃত সত্য উদঘাটন না হওয়া পর্যন্ত কাউকে অন্যায়ভাবে হয়রানি করা হবে না।”




