বিজন কুমার বিশ্বাস, কক্সবাজার প্রতিনিধিঃ কক্সবাজারের ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক ধারাবাহিক উন্নয়নের ছোয়াতে অত্যাধুনিক রূপ পেয়েছে, হয়েছে দৃষ্টিনন্দন। মুগ্ধ করছে পার্কে ঘুরতে আসা দুরদুরান্তর পর্যটকের। খাঁচায় খাঁচায় শোভা পাচ্ছে নানান প্রজাতির প্রাণীকূল দর্শনার্থীরা মুগ্ধ হচ্ছেন বাঘ-সিংহ-হাতি-হরিণ-জেব্রা, বানর, ভল্লুক, কুমির, জলহস্তি, বন্যকুকুর, অজগর, কচ্ছপ, শিয়াল, অশংখ্য প্রতাজির পাখি দেখে আনন্দিত হচ্ছে পার্কে ঘুরতে আসা দুর দুরান্তরের দর্শনার্থী।
চকরিযা ষ্টান্ড থেকে ১০কিলোমিটার দক্ষিনে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক লাগোয়া রাস্তা সংলগ্ন সাফারি পার্কের মনমুগ্ধকর প্রবেশের মূল গেট।আছে বাস-মাইক্রো ও মোটরসাইকেলের পার্কিং ও পিকনিক ষ্পট।পার্কের সামনেই সবুজের আবরণ ভরা সাজানো ফুল বাগানের মধ্যে সাদা উড়ন্ত পায়রা হাতে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালের। পার্কের দক্ষিণে তৈরী করা হয়েছে পিকনিক স্পট, শিশু বিনোদন কেন্দ্র।দক্ষিণে পাহাড়ের তলদেশে প্রকৃতির সৌন্দর্যে ভরা চলমান আছে কৃত্রিম লেক।মহাসড়কের সাথেই দৃষ্টিনন্দন প্রবেশ ফটক, ফটকের দুপাশে রযেছে বিশাল আকৃতির দুটি হাতি মুর্তি। পার্কে ঢোকার দুই লেনের প্রশস্ত করা সড়কের ফুটপাতে বসানো হয়েছে টাইলস।আছে পর্যটক টিকিট ঘর, আরো আছে পর্যটকদের প্রয়োজনীয় মালামাল রাখার লকার রুম হয়েছে। সাথে তৈরি হয়েছে মহিলা বাথরুম, ব্রেস্টফিডিং কর্নার ও দর্শনার্থী অয়েটিং রুম।ডরমেটরি ও ব্যারাক সংস্কার হয়ে নতুন মাত্রা পেয়েছে । আধুনিক মানের ওয়াশরুমে দারুন খুশি আগত দর্শণার্থীরা।পার্কের মাঝখানের শতফুট উঁচু ওয়াচ টাওয়ারে আগত পর্যটকরা মনভরে পার্কের পুরাচিত্রটা দেখছে ১৯৯৯ সালের শেষ দিকে যাত্রা শুরু হয় ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের।আজকের এই সাফারি পার্ক এর আগে ১৯৮০ সালে এটি ছিল হরিণ প্রজননকেন্দ্র। ভেতর-বাইরে ৯০০ হেক্টর আয়তনে পার্কে বিপুল পরিমাণ মাদার ট্রিসহ (গর্জন) সহ অনেত প্রজাতির বনজ ও ফলজ গাছ।
শুরু থেকেই সবুজের আবরণে দৃষ্টিনন্দন সাফারি পার্কটি প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটকের বিনোদনের অনন্য পর্যটন হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। শিক্ষার্থীরা এই পার্ক এসে প্রকৃতিবিষয়ক জ্ঞান আহরণ করতে পারছে। সপ্তাহে মঙ্গলবার ছাড়া বাকি ৬দিন দর্শনার্থীদের উচ্ছ্বাসে, পশু-পাখির কোলাহলে মুখরিত থাকে পুরো পার্ক।গাছ ও দেয়ালে দেয়ালে বানরের লাফালাফি নজর কাড়ে সবার।এসব দৃশ্য মোবাইল ফোন ক্যামেরায় বন্দি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন দর্শনার্থীরা।দিনদিন মায়া হরিনের সংখাও বাড়ছে। দর্শনার্থীরা খুব কাছ থেকে হরিনের দল দেখে মুগ্ধ হচ্ছে।
প্রাপ্তবয়স্করা ৫০ টাকা, অপ্রাপ্ত বয়স্কদের ৫ বছরের বড় শিশু-কিশোররা ৩০ টাকায় ও শিক্ষার্থী (শর্তসাপেক্ষে) ১০০ জনে ৫০০ টাকা ও ২০০ জন ৮০০ টাকার টিকিটে পার্ক দর্শন করতে পারছেন।হাঁটতে অক্ষম দর্শণার্থী চাইলে নির্ধারিত ফি দিয়ে কর্তৃপক্ষের নিজস্ব মিনিবাসে পার্ক ঘুরে দেখতে পারেন। প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক এই সাফারি পার্কে বেড়াতে আসেন বলে জানিয়েছে পার্কে দ্বায়িত্বে থাকা রেন্জ কর্মকর্তা ।
প্রাণী হলেও পরিচর্যাকারিরা যে নামে ডাকেন তা উচ্চারণ করলেই সাড়া দেয় বাঘ-সিংহ। বেষ্টনীতে খেলাধুলা আর হুংকার ছেড়েই সময় পার করা এসব প্রাণী যা দেখে আনন্দ পান দর্শণার্থীরা।
পার্কের সংশ্লিষ্ঠদের তথ্যমতে, পার্কে দেড় ডজন বেষ্টনীতে সংরক্ষিত প্রাণীকূলে কঠোর নিরাপত্তায় পালিত হচ্ছে হাতি, বাঘ, সিংহ, জলহস্তি, গয়াল, আফ্রিকান জেব্রা, ওয়াইল্ডবিস্ট, ভাল্লুক, বন্য শূকর, হনুমান, ময়ূর, স্বাদু ও নোনা পানির কুমির, সাপ, বনগরুসহ দেশি-বিদেশি নানা প্রজাতির পশু-পাখি।পার্কজুড়ে আরও আছে চিত্রা, মায়া, সম্বর ও প্যারা হরিণ। আছে জানা-অজানা বিচিত্র ধরনের কয়েকশ ধরনের পাখি।উন্মুক্তভাবে চলাফেরা করছে ১২৩ প্রজাতির এক হাজার ৬৫ প্রাণী। এর মধ্যে গুইসাপ, শজারু, বাগডাশ, মার্বেল ক্যাট, গোল্ডেন ক্যাট, ফিশিং ক্যাট, খেঁকশিয়াল, বনরুই উল্লেখযোগ্য। হেঁটে পার্ক ভ্রমণের সময় অসংখ্য বানর, শিয়াল, খরগোশ, হরিণসহ বন্যপ্রাণীর দৌড়ঝাঁপ দেখা যায়।পার্কের পশু-পাখির চিকিৎসার জন্য রয়েছে হাসপাতাল। যেখানে সার্বক্ষণিক রয়েছে প্রাণী চিকিৎসক। প্রতিদিন সাফারি পার্ক ভ্রমণে আসা দর্শনার্থীদের মূল আকর্ষণ থাকে বাঘের বেষ্টনী।পার্কের বাঘ-সিংহ ও তৃণভোজী প্রাণীদের জন্য তৈরির শেষ পর্যায়ে রয়েছে সাফারি। বাঘ-সিংহের জন্য শত একর জমির আলাদা সাফারি ও জেব্রা, গয়াল, হরিণসহ অন্যপ্রাণীদের জন্য বরাদ্দ হয়েছে কয়েকশ’ একর এলাকা।
স্থানীয় অধিবাসী রুপন নাথ বলেন, ঈদ, পূজার সময় নানা আয়োজনে পরিবার ও স্বজনদের নিয়ে বিনোদনার্থে হাতের কাছে পার্কটি-ই আমাদের ভরসা। ২০ বছরের অধিক সময় ধরে পার্কে আসা-যাওয়া হয়। কিন্তু গত কয়েক অর্থবছরে নেয়া কিছু প্রকল্প পার্কের পুরোনো চিত্র পাল্টে ফেলেছে যার পার্কের ভিতরের পরিবেশ হয়েছে দৃষ্টিনন্দন। পার্কে সহজে ঘোরাঘুরির জন্য তৈরী করা হয়েছে সংযোগ সড়ক, অবকাঠামো ফলে সহজেই পার্কের ভিতর ঘোরাঘুরি করা যায়। পার্কে ঘুরতে আসা প্রীয়া দাশ প্রতিনিধির কাছে তার অভিব্যাক্তি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, আমি মাঝে মাঝেই এখানে ঘুরতে আসি তবে এবার পার্কের সার্বিক দৃশ্য দেখে আমার খুবাই ভালো লেগেছে। বিশেষ করে পাখিশালা, কুমিরের বেষ্টনি, বাঘের ছুটাছুটি, ছোট বড় বানর গুলোর খুব কাছে এসে দৌরাদৌরি, অনেকগুলো হরিনের একসাথে চলাফেরা ও ঢুকতেই সাজানো গোছানো ফুলের বাগান।
বন কর্মকর্তা মাজহার প্রতিনিধিকে বলেন, আমি দাযিত্ব নেওয়ার পর থেকে চেষ্টা করছি প্রকল্পগুলোর সটিক বাস্তবায়ন করে পার্কের পরিবেশ ও দর্শনার্থীদের সঠিক বিনোদন কেন্দ্রে পরিনত করার।
তিনি আরো বলেন, অনেক বছর বাঘ-সিংহকে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে।আমরা সত্যিকারের বিশ্বমানের সাফারি পার্ক করার উদ্যোগ নিয়েছি।অচিরেই বাঘ-সিংহ ও অন্য প্রাণীগুলো সম্পূর্ণ মুক্ত করে বিচরণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।




