ঢাকা ব্যুরো: গত ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকা এসেছিলেন অমর একুশে গানের রচয়িতা, প্রখ্যাত সাংবাদিক, লেখক ও কলামিস্ট আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। রাতে রাজধানীর চামেলীবাগে বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ কার্যালয়ে ভোরের কাগজের সঙ্গে কথা হয় তার। একান্ত এই সাক্ষাৎকারে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতি, মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন বাস্তবায়ন নিয়ে কথা বলেন প্রবীণ এই সাংবাদিক-কলামিস্ট। সাক্ষাৎকারটি ঈষৎ পরিবর্তন করে পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ভোরের কাগজের সিনিয়র রিপোর্টার ঝর্ণা মনি।

মহান মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের প্রধান মুখপত্র ‘জয়বাংলা’-এর সম্পাদক হিসেবে অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে কলমসৈনিকের দায়িত্ব পালন করেছেন প্রখ্যাত সাংবাদিক, লেখক ও কলামিস্ট আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন ক্যাম্পে মোটিভেটরের দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের প্রায় পাঁচ দশক পরও হতাশা ঝরে পড়ে তার কণ্ঠ থেকে। যে বাংলাদেশের জন্য আপনারা যুদ্ধ করেছেন, অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছেন, সেই কথা কি বলছে বাংলাদেশ? সেই স্বপ্ন কি পূরণ হয়েছে? কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে- এর জবাবে অমর একুশে গানের এই রচয়িতা বললেন, অধরা থেকে গেছে অনেকটাই। আমরা যে স্বপ্ন দেখতাম, সেই পরিস্থিতি বদলে গেছে, সেই স্বপ্নও বদলে গেছে। সেই অবস্থাও বদলে গেছে। আমরা ভেবেছিলাম, একটি সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশ হবে। যদিও সমাজতন্ত্রের অবস্থা পুরো বিশ্বে অনেক খারাপ। সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোও আর নিজেদের সমাজতান্ত্রিক দেশ হিসেবে পরিচয় দেয় না। তবে সমাজতন্ত্রের পতন হয়ে গেছে, তা বলি না। বাংলাদেশে ফেল করেছে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। কিন্তু বাস্তবে ধর্মনিরপেক্ষ দেশ আমরা প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। বর্তমান বাস্তবতায় সমগ্র বিশ্বে সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদী আদর্শের অনুপস্থিতিতে ধর্মান্ধতা, পশ্চাৎপদতা, মধ্যযুগীয়তা অনেক বেশি বেড়ে গেছে। বাংলাদেশেও এর ছাপ পড়েছে। তবে শেখ হাসিনা পুরোপুরি তালেবান রাষ্ট্র হওয়া থেকে দেশকে রক্ষা করতে পেরেছেন। এই প্রশংসা তার করতেই হবে। আশা করা যায়, এই জোয়ারটা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে হয়তো আমরা অন্যান্য দেশ থেকে অনেক বেশি সমাজতান্ত্রিক হতে পারব এবং ধর্মান্ধতা থেকেও মুক্ত থাকব। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বলি, ‘দানবের মূঢ় অপব্যয়/গ্রন্থিতে পারে না কভু ইতিবৃত্তে শাশ্বত অধ্যায়।’

বাংলাদেশ বর্তমানে একটি বিশেষ রাজনৈতিক অবস্থার মধ্য থেকে বের হয়েছে বলে মনে করেন আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনীতির অবস্থা কেমন বলে আপনার মনে হচ্ছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশটার সবেমাত্র উন্নয়ন ঘটেছে। নানা অসুবিধা আছে। নানা সমস্যা আছে। কিন্তু বর্তমানে শেখ হাসিনার মতো একটা বলিষ্ঠ নেতৃত্ব বাংলাদেশ পেয়েছে এবং মোটামুটি সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এই হচ্ছে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা। তবে আগামীকাল কি হবে এটা এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। তিনি বলেন, এখন অপেক্ষা করতে হবে দেশে সুস্থ গণতন্ত্র গড়ে তোলার জন্য নতুন প্রজন্মের নতুন নেতৃত্বের। সেই নেতৃত্বকেও গড়ে ওঠার জন্য সাহায্য ও সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে বর্তমানের প্রবীণ নেতৃত্বেরই সৎ ও নীতিবান অংশকে। শেখ হাসিনা এখন দলনেতা নন, জাতীয় নেতা। তিনিই পারবেন নবীন-প্রবীণের মিশ্রণে সুস্থ গণতন্ত্রকে বেগবান করতে।

বিশ্বজুড়ে যে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ এর থেকে বাংলাদেশের অবস্থান অনেক অনেক ভালো বলে মনে করেন আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। তিনি বলেন, আমি নিজেও ইউরোপে থাকি। আমি সেখানকার সন্ত্রাস দেখেছি। ব্রিটেন তো নাইফ কালচারে ভর্তি হয়ে গেছে। প্রতি রাতে ৬/৭ জন টিনএজার একে অন্যকে হত্যা করছে। সেই তুলনায় ঢাকার রাজপথ অনেক বেশি নিরাপদ। আমরা আগে মনে করতাম বিলেতে আছি নিরাপদ আছি। কিন্তু তা নয়। ব্রিটেনে একটার পর একটা সন্ত্রাস, ছোরা মেরে লোক হত্যা করা, যেখানে সেখানে এত মহামারি রূপে দেখা দিয়েছে, সরকার একেবারেই শঙ্কিত। আইনের পর আইন করেও কিন্তু তারা তা দমন করতে পারছে না। সেই তুলনায় আমার দেশ অনেক ভালো। আমাদের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো, কিন্তু সিস্টেম কিছুটা দুর্বল। আর বিদেশের অনেক দেশেই আইনশৃঙ্খলা আমাদের চেয়ে দুর্বল হলেও তাদের সিস্টেম অনেক উন্নত।

প্রসঙ্গত, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর জন্ম ১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর বরিশাল জেলার উলানিয়া গ্রামে। ১৯৫০ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ভর্তি হন ঢাকা কলেজে। ১৯৫৩ সালে তিনি ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৮ সালে বিএ অনার্স পাস করেন। প্রবাসে থেকেও পাঠকপ্রিয় নিরলস লেখক তিনি। দেশি-বিদেশি অসংখ্য দৈনিক পত্রিকায় লিখছেন দুহাতে। জীবন্ত ইতিহাস বর্ণনা ঝরনাধারার মতোই তার ক্ষুরধার লেখনীতে তুলে আনেন সমসাময়িক বিষয়বস্তু। একুশে পদক, স্বাধীনতা পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার, ইউনেস্কো পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কারপ্রাপ্ত আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হত্যাকাণ্ডের ওপর তৈরি করেছেন ‘পলাশী থেকে ধানমন্ডি’ চলচ্চিত্র। বঙ্গবন্ধু ওপরেই আরেকটি চলচ্চিত্র, ‘দ্য পোয়েট অব পলিটিকস’ প্রযোজনাও করেছেন তিনি।

ঢাকা ব্যুরো: গত ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকা এসেছিলেন অমর একুশে গানের রচয়িতা, প্রখ্যাত সাংবাদিক, লেখক ও কলামিস্ট আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। রাতে রাজধানীর চামেলীবাগে বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ কার্যালয়ে ভোরের কাগজের সঙ্গে কথা হয় তার। একান্ত এই সাক্ষাৎকারে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতি, মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন বাস্তবায়ন নিয়ে কথা বলেন প্রবীণ এই সাংবাদিক-কলামিস্ট। সাক্ষাৎকারটি ঈষৎ পরিবর্তন করে পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ভোরের কাগজের সিনিয়র রিপোর্টার ঝর্ণা মনি।

মহান মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের প্রধান মুখপত্র ‘জয়বাংলা’-এর সম্পাদক হিসেবে অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে কলমসৈনিকের দায়িত্ব পালন করেছেন প্রখ্যাত সাংবাদিক, লেখক ও কলামিস্ট আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন ক্যাম্পে মোটিভেটরের দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের প্রায় পাঁচ দশক পরও হতাশা ঝরে পড়ে তার কণ্ঠ থেকে। যে বাংলাদেশের জন্য আপনারা যুদ্ধ করেছেন, অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছেন, সেই কথা কি বলছে বাংলাদেশ? সেই স্বপ্ন কি পূরণ হয়েছে? কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে- এর জবাবে অমর একুশে গানের এই রচয়িতা বললেন, অধরা থেকে গেছে অনেকটাই। আমরা যে স্বপ্ন দেখতাম, সেই পরিস্থিতি বদলে গেছে, সেই স্বপ্নও বদলে গেছে। সেই অবস্থাও বদলে গেছে। আমরা ভেবেছিলাম, একটি সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশ হবে। যদিও সমাজতন্ত্রের অবস্থা পুরো বিশ্বে অনেক খারাপ। সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোও আর নিজেদের সমাজতান্ত্রিক দেশ হিসেবে পরিচয় দেয় না। তবে সমাজতন্ত্রের পতন হয়ে গেছে, তা বলি না। বাংলাদেশে ফেল করেছে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। কিন্তু বাস্তবে ধর্মনিরপেক্ষ দেশ আমরা প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। বর্তমান বাস্তবতায় সমগ্র বিশ্বে সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদী আদর্শের অনুপস্থিতিতে ধর্মান্ধতা, পশ্চাৎপদতা, মধ্যযুগীয়তা অনেক বেশি বেড়ে গেছে। বাংলাদেশেও এর ছাপ পড়েছে। তবে শেখ হাসিনা পুরোপুরি তালেবান রাষ্ট্র হওয়া থেকে দেশকে রক্ষা করতে পেরেছেন। এই প্রশংসা তার করতেই হবে। আশা করা যায়, এই জোয়ারটা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে হয়তো আমরা অন্যান্য দেশ থেকে অনেক বেশি সমাজতান্ত্রিক হতে পারব এবং ধর্মান্ধতা থেকেও মুক্ত থাকব। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বলি, ‘দানবের মূঢ় অপব্যয়/গ্রন্থিতে পারে না কভু ইতিবৃত্তে শাশ্বত অধ্যায়।’

বাংলাদেশ বর্তমানে একটি বিশেষ রাজনৈতিক অবস্থার মধ্য থেকে বের হয়েছে বলে মনে করেন আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনীতির অবস্থা কেমন বলে আপনার মনে হচ্ছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশটার সবেমাত্র উন্নয়ন ঘটেছে। নানা অসুবিধা আছে। নানা সমস্যা আছে। কিন্তু বর্তমানে শেখ হাসিনার মতো একটা বলিষ্ঠ নেতৃত্ব বাংলাদেশ পেয়েছে এবং মোটামুটি সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এই হচ্ছে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা। তবে আগামীকাল কি হবে এটা এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। তিনি বলেন, এখন অপেক্ষা করতে হবে দেশে সুস্থ গণতন্ত্র গড়ে তোলার জন্য নতুন প্রজন্মের নতুন নেতৃত্বের। সেই নেতৃত্বকেও গড়ে ওঠার জন্য সাহায্য ও সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে বর্তমানের প্রবীণ নেতৃত্বেরই সৎ ও নীতিবান অংশকে। শেখ হাসিনা এখন দলনেতা নন, জাতীয় নেতা। তিনিই পারবেন নবীন-প্রবীণের মিশ্রণে সুস্থ গণতন্ত্রকে বেগবান করতে।

বিশ্বজুড়ে যে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ এর থেকে বাংলাদেশের অবস্থান অনেক অনেক ভালো বলে মনে করেন আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। তিনি বলেন, আমি নিজেও ইউরোপে থাকি। আমি সেখানকার সন্ত্রাস দেখেছি। ব্রিটেন তো নাইফ কালচারে ভর্তি হয়ে গেছে। প্রতি রাতে ৬/৭ জন টিনএজার একে অন্যকে হত্যা করছে। সেই তুলনায় ঢাকার রাজপথ অনেক বেশি নিরাপদ। আমরা আগে মনে করতাম বিলেতে আছি নিরাপদ আছি। কিন্তু তা নয়। ব্রিটেনে একটার পর একটা সন্ত্রাস, ছোরা মেরে লোক হত্যা করা, যেখানে সেখানে এত মহামারি রূপে দেখা দিয়েছে, সরকার একেবারেই শঙ্কিত। আইনের পর আইন করেও কিন্তু তারা তা দমন করতে পারছে না। সেই তুলনায় আমার দেশ অনেক ভালো। আমাদের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো, কিন্তু সিস্টেম কিছুটা দুর্বল। আর বিদেশের অনেক দেশেই আইনশৃঙ্খলা আমাদের চেয়ে দুর্বল হলেও তাদের সিস্টেম অনেক উন্নত।

প্রসঙ্গত, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর জন্ম ১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর বরিশাল জেলার উলানিয়া গ্রামে। ১৯৫০ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ভর্তি হন ঢাকা কলেজে। ১৯৫৩ সালে তিনি ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৮ সালে বিএ অনার্স পাস করেন। প্রবাসে থেকেও পাঠকপ্রিয় নিরলস লেখক তিনি। দেশি-বিদেশি অসংখ্য দৈনিক পত্রিকায় লিখছেন দুহাতে। জীবন্ত ইতিহাস বর্ণনা ঝরনাধারার মতোই তার ক্ষুরধার লেখনীতে তুলে আনেন সমসাময়িক বিষয়বস্তু। একুশে পদক, স্বাধীনতা পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার, ইউনেস্কো পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কারপ্রাপ্ত আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হত্যাকাণ্ডের ওপর তৈরি করেছেন ‘পলাশী থেকে ধানমন্ডি’ চলচ্চিত্র। বঙ্গবন্ধু ওপরেই আরেকটি চলচ্চিত্র, ‘দ্য পোয়েট অব পলিটিকস’ প্রযোজনাও করেছেন তিনি।